২০০০০ বছর আগেই এসেছিল করোনা মহামারি, মানব DNA-গবেষণায় পাওয়া গেল তার ছাপ, দেখুন
সার্স-কোভ-২ ভাইরাস বা নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত মহামারির বিধ্বংসী কারণে গত দেড় বছরে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে 'করোনাভাইরাস' শব্দটি। এখনও পর্যন্ত ৩৫ লক্ষেরও মানুষ বলি হয়েছেন এই মহামারির। তবে, মার্কিন এবং অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানীদের যৌথ গবেষণা বলছে, প্রায় ২০,০০০ বছর আগে প্রথম মানুষের সঙ্গে করোনাভাইরাসের সংঘর্ষ হয়েছিল। পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে দেখা দিয়েছিল এক ভয়ঙ্কর মহামারি, যার ফলে মানুষের ডিএনএ-তেও তার ছাপ থেকে গিয়েছে।
- FB
- TW
- Linkdin
২০,০০০ বছর আগে প্রথম করোনা মহামারি
'কারেন্ট বায়োলজি' নামে বৈজ্ঞানিক জার্নালে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমান কোভিড মহামারির মোকাবিলা করার জন্য অতীতের বিভিন্ন মহামারি এবং মানুষের উপর সেই মহামারিগুলির প্রভাব বুঝতে, গবেষকরা বিশ্বের ২৬ টি বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর প্রায় ২,৫০০ জনের জিনোম নিয়ে গবেষণা করেছেন। সেই গবেষকদের একজন ইয়াসিন সৌলমি বলেছেন, এইসব জিনোমে হাজার হাজার বছরের মানব বিবর্তনের তথ্য ধরা থাকে। সেই তথ্য থেকেই তাঁরা এই একেবারে প্রথম করোনা সংক্রমণের বিষয়ে জানতে পেরেছেন।
কীভাবে জানা গেল এই তথ্য?
তিনি জানিয়েছেন, ভাইরাসরা বংশবিস্তারের জন্য নিজেদের অনুলিপি তৈরি করে। তবে তা করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তাদের কাছে থাকে না। এর জন্য়ই তাদের একটি হোস্ট দরকার হয়। আর এর জন্য়ই তারা হোস্টকে সংক্রামিত করে এবং হোস্টের শরীরে নিজেদের অনুলিপি তৈরি করার কাজ শুরু করে। মানুষের কোষগুলি যে এইভাবে ভাইরাসরা 'হাইজ্যাক' করে, তার প্রভাব পড়ে জিনোমে তাকা তথ্যে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়ে সেই চিহ্নগুলি পর্যবেক্ষণ করা এখন অত্যন্ত সহজ। আর তাতেই 'দৃঢ় প্রমাণ' পাওয়া গিয়েছে যে, এর আগেই মানুষ করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিল এবং একসময় তার সঙ্গে মানিয়েও নিয়েছিল।
মহামারি মানেই কি চিন?
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, এই জিনগত সংকেতগুলি চিন, জাপান এবং ভিয়েতনামের পাঁচটি জনগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে পাওয়া গিয়েছে। তবে, তার মানে এই নয়, যে ২০,০০০ বছর আগে এই তিনটি দেশেই মহামারিটি সীমাবদ্ধ ছিল। তবে, এই ধারণাকে সমর্থন করার জন্য যথেষ্ট তথ্য এখনও তাঁদের হাতে নেই বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
অ্যান্টিভাইরাল রূপান্তর
তবে তাঁদের গবেষণায় যেটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে, তা হল, এই মহামারির ফলে এই জনগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে একটি উপকারী রূপান্তর ঘটেছে, যা পরবর্তী ক্ষেত্রে তাদের সেই করোনাভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা করেছিল। এই রূপান্তরটি যাদের শরীরে ঘটেছিল, তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়েছিল। ফলে ধীরে ধীরে ওই মিউটেশন থাকা মানুষের সংখ্যাই বেড়েছিল। তাদের বংশধরদের জিনোমে তা খুব স্পষ্টভাবে চিহ্নিত হয়েছে ববলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
কয়েক শতাব্দী ধরে চলবে মহামারি?
তবে, এই গবেষণায় একটা উদ্বেগজনক দিকও ধরা পড়েছে। এই গবেষণার নেতৃত্বে থাকা অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তন জীববিজ্ঞানী ডাক্তার ডেভিড এনার্ড জানিয়েছেন, এখনই যা চলছে, অর্থাৎ নতুন করোনাভাইরাস মহামারি, তা কয়েক প্রজন্ম ধরে চলতে পারে, তাঁদের গবেষণায় এমন ইঙ্গিত মিলেছে। কারণ মানব জিনে অ্যান্টিভাইরাল মিউটেশন একদিনে ঘটে না। এই বিবর্তনটি সম্ভবত কয়েক শতাব্দী ধরে ঘটেছিল।