১৭২০, ১৮২০, ১৯২০'র পর ২০২০, ১০০ বছর অন্তর-অন্তরই সভ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করে মহামারী
কাকতালীয় ঘটনা, না প্রকৃতি মা-এর শুদ্ধিকরণ - এই নিয়েই দ্বিমত তৈরি হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এটা একটা প্যাটার্ন বা নকশা, যা দেখে আগে থেকেই মহামারী নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টা হচ্ছে, ইতিহাস ঘাটতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ১৭২০ সাল থেকে ২০২০ এই চার শতাব্দিতে, প্রতি ১০০ বছর অন্তর অন্তর মানব সভ্যতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে মহামারী। কখনও সে এসেছে প্লেগ-রূপে, কখনও কলেরা, কখনও ফ্লু, কখনও কোভিড-১৯। সত্যিটা কি জেনে নেওয়া যাক।
| Published : Apr 01 2020, 02:31 PM IST
১৭২০, ১৮২০, ১৯২০'র পর ২০২০, ১০০ বছর অন্তর-অন্তরই সভ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করে মহামারী
Share this Photo Gallery
- FB
- TW
- Linkdin
15
১৭২০ সালে, ইউরোপ শেষবারের মতো এবং সর্ববৃহত আকারের প্লেগ মহামারী দেখা দিয়েছিল, যা পরিচিত 'গ্রেট প্লেগ অব মার্সেই' বলে। প্রকৃতপক্ষে প্লেগ মহামারী ইউরোপে প্রথম আঘাত করেছিল ১৩৩১ সালে। তারপর থেকে মাঝে মাঝেই প্লেগ ফিরে এলেও ১৭২০ সালেই এই রোগ সবচেয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। মধ্যপ্রাচ্যের এখনকার লেবানন দেশ থেকে এক বানিজ্যিক জাহাজের মাধ্যমে প্লেগ-এর ব্যাকটেরিয়া পারি দিয়েছিল ইউরোপে। প্রথমে জাহাজের এক তুর্কি যাত্রী আক্রান্ত হন এবং দ্রুতই মারা যান। তারপর আক্রান্ত হন জাহাজটির বেশ কয়েকজন ক্রু সদস্য এবং ডাক্তার। বেশ কয়েকজটি বন্দর জাহাজটিকে প্রবেশ করতে না দিলেও মার্সেইতে তাকে নোঙর ফেলতে দেওয়া হয়। জাহাজের প্রত্যেককে বিচ্ছিন্নতায় রেখেও মহামারীকে আটকানো যায়নি। মার্সেই-এ সেই বছর প্রায় ১,০০,০০০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।c
25
১৮১৭ সালে এই কলকাতা শহরেই প্রথম কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। কলেরার ব্যাকটেরিয়ায় দূষিত এক জলাশয়ের জল খেয়েই প্রথম মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে ১৮২০ সাল নাগাদই এই মহামারী চরম আকার ধারণ করে। ছড়িয়ে পড়ে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন্স-এর মতো দেশগুলিতে। এই মহামারীতে শুধু এশিয়াতেই ১,০০,০০০-এর বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ১৮২৪ সাল পর্যন্ত এই মহামারীর প্রকোপ চলেছিল।
35
১৯১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯২০-র ডিসেম্বর পর্যন্ত চলেছিল স্প্যানিশ ফ্লু বা ১৯১৮ ফ্লু প্যানডেমিক। সেই সময় চলছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। আর তার জন্য ইউরোপিয় বিভিন্ন দেশের নেতারাই এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ও রোগের তীব্রতা রেখেঢেকে জানিয়েছিলেন। এই ঢাকাচাপাতেই আরও মারাত্মক আকার নেয় এই মহামারী। স্প্যানিশ ফ্লু নামে পরিচিত হলেও ঠিক কোন দেশ থেকে এই রোগের উৎপত্তি ঘটেছিল তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এই ফ্লু-তে স্পেনিয় রাজা আলফোনসো-ও আক্রান্ত হওয়া থেকেই এই নাম জনপ্রিয়তা পায়। এইচ১এন১ ফ্লু ভাইরাস-এর একটির জিনগত পরিবর্তনের ফলেই ভাইরাসটি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছিল। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫০ কোটি মানুষের দেহে এই ভাইরাসের সংক্রামণ ঘটেছিল। যা ছিল সেই সময়ের বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ। আর মৃত্যু হয়েছিল আনুমানিক ১ কোটি ৭০ লক্ষ থেকে ৫ কোটি মানুষের। অনেকে মনে করেন সংখ্যাটা ১০ কোটিও হতে পারে। এখনও পর্যন্ত এটাই বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক মহামারী।
45
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শুরুতেই চিনে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই রোগের নাম দিয়েছে কোভিড-১৯। কিন্তু, ২০২০ সালেই এই রোগ প্যানডেমিক, অর্থাৎ বিশ্বব্যপী মহামারীর আকার নিয়েছে। বিশ্বের ১৯০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ। এর আগে একসঙ্গে এতগুলি দেশে কোনও মহামারী ছড়াতে দেখা যায়নি। ১ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত বিশ্বের ৮ কোটি ৬০ লক্ষেরও বেশি মানুষ আর মৃত্যু হয়েছে ৪২,৩৫২ জনের। এখনও পর্যন্ত এই মহামারীকে থামানোর কোনও রাস্তাই দেখা যাচ্ছে না।
55
তাহলে কি সত্যিই নিজেকে শোধন করার জন্য ১০০ বছর পর পর কোনও না কোনও মহামারীর উদ্ভব ঘটায় প্রকৃতি? না ভাইরাস-এর একটি নিজস্ব নকশা রয়েছে সংক্রমণের? চিকিৎসা বিজ্ঞানের সঙ্গে যুতক্ত ব্যক্তিরা কিন্তু একে নেহাতই কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁরা জানিয়েছেন এইচ১এন১ এবং সার্স-কোভ-২ ভাইরাস হলেও প্লেগ ও কলেরা ব্য়াকটেরিয়া-ঘটিত রোগ। কাজেই তাদের চক্রাকারে আবর্তিত হওয়া সম্ভব নয়। তবে কিছু কিছু ভাইরাস বিশেষ মরসুম ধরে ফিরে ফিরে আসে। আর দ্বিতীয়ত, সার্স-কোভ-২ ভাইরাস অর্থাৎ এই নতুন করোনাভাইরাসটি একেবারেই নতুন। আর তারজন্যই এর মোকাবিলা করতে সমস্যা হচ্ছে। এখানে কোনও বিশেষ নকশা নেই, যার মাধ্যমে আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া য়েত।