জেনে নিন আইপিএলের সবথেকে কালো অধ্যায় সম্পর্কে, যা নাড়িয়ে দিয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বকে
- FB
- TW
- Linkdin
মূল ঘটনা-
২০১৩ আইপিএল চলাকালীন ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগে দিল্লি পুলিশ গ্রেপ্তার করে তিন ক্রিকেটার- শান্তাকুমারণ শ্রীশান্ত, অঙ্কিত চওবন এবং অজিত চন্ডিলাকে। অভিযুক্ত তিনজনই রাজস্থান রয়েলসের হয়ে খেলতেন। একইসাথে বুকিদের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য গ্রেপ্তার হন বিন্দু দাঁড়া সিং এবং চেন্নাই সুপার কিংস অধ্যক্ষ গুরুনাথ মায়াপ্পন।
তদন্তের খুঁটিনাটি-
শ্রীশান্ত কে গ্রেপ্তার করা হয় তার বন্ধুর বাড়ি থেকে। টিম হোটেল থেকে পাওয়া যায় অঙ্কিত এবং অজিতকে। ফিক্সিংয়ের অভিযোগ স্বীকার করে নেন অঙ্কিত। তিনজন খেলোয়াড়েরই চুক্তি বাতিল করে রাজস্থান রয়েলস কর্তৃপক্ষ। তদন্ত শেষ না হওয়া অবধি তিনজনকেই সাসপেন্ড করে বোর্ড। এইসব ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে আম্পায়ার আসাদ রাউফ-কেও সাসপেন্ড করে বিসিসিআই। শ্রীশান্ত এবং অঙ্কিত পরে জামিন পান কিন্তু অজিত জামিনের জন্য আবেদনই করেননি।
বুকিদের গ্রেপ্তারি-
সুনীল ভাটিয়া এবং ইয়াহিয়া মহম্মদ নামে দুই বুকিকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশ। দুজনের কাছ থেকেই গড়াপেটা সংক্রান্ত অনেক রকম তথ্য জোগাড় করে পুলিশ। বিশাল অংকের টাকা, অনেকগুলো মোবাইল এবং ল্যাপটপ তাদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করেন পুলিশ। এই বুকিদের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্যই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বিন্দু দাঁড়া সিং। যদিও তিনি পরে জামিনে ছাড়া পান।
গুরুনাথ মায়াপ্পন-
বিন্দু দাঁড়া-র সাথে কলরেকর্ডের সূত্র ধরে বেটিংয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন তৎকালীন বোর্ড প্রেসিন্ডেন্টের জামাই, চেন্নাই সুপার কিংস এর ম্যানেজমেন্টের সাথে যুক্ত গুরুনাথ। তাকে প্রেপ্তার করা মাত্র তার সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করে চেন্নাই সুপার কিংস ফ্রাঞ্চাইজি। যদিও এক মাসের মধ্যে জামিন পেয়ে যান মায়াপ্পন।
রাজ কুন্দ্রা-
ইতিমধ্যে রাজস্থান রয়েলস দলের অংশীদার রাজ কুন্দ্রা-কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দিল্লি পুলিশ। সেখানে তিনি স্বীকার করেন যে এক বুকির মাধ্যমে নিজের দলকে নিয়েই বেট করেছিলেন তিনি। রাজস্থান রয়েলস রাজ কুন্দ্রার কাছ থেকে দলের সমস্ত শেয়ার কিনে নেন এবং তার সঙ্গে যাবতীয় যোগাযোগ ছিন্ন করে দেন। পরে বিসিসিআই তাকে আইপিএল থেকেই পুরোপুরি সাসপেন্ড করে।
সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ-
এক বছর পর ২০১৪ তে সুপ্রিম কোর্ট বিসিসিআইয়ের সভাপতির পদ ছাড়তে বলেন চেন্নাই সুপার কিংস মালিক নায়ারণস্বামী শ্রীনিবাসনকে। তার ওই পদে অবস্থান তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে বলে জানায় কোর্ট কারণ তার নিজের জামাই দুর্নীতির ঘটনার সাথে যুক্ত। না হলে শ্রীনি-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
মুকুল মুদ্গল কমিটি-
২০১৩ এর অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্ট অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মুকুল মুদ্গলের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন গোটা ঘটনার তদন্ত করার জন্য। এই কমিটি তার রিপোর্ট পেশ করে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। যদিও সেই রিপোর্টটি কখনই জনসমক্ষে আনা হয়নি। মনে করা হয় ওই রিপোর্ট জনগণের সামনে আসলে মুখোশ খুলে যেত অনেক বড় ও বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের।
লোধা কমিটি-
এরপর অভিযুক্তদের শাস্তিদানের উদ্দেশ্যে গঠিত হয় লোধা কমিটি। চেন্নাই এবং রাজস্থানের ফ্রাঞ্চাইজি গুলিকে ২ বছরের জন্য আইপিএল থেকে ব্যান করা হয় তাদের কর্মকর্তাদের বেটিং এবং ফিক্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে।
খেলোয়াড়দের সাজা-
২০১৫ এর জুলাইতে যথেষ্ট সাক্ষাপ্রমাণ না থাকার জন্য পাতিয়ালা হাউস কোর্ট শ্রীশান্ত এবং অজিতকে নির্দোষ ঘোষণা করে। দুজনকেই সারা জীবনের জন্য সমস্ত রকমের ক্রিকেট থেকে বরখাস্ত করে। শ্রীশান্তের বাবা এই ঘটনাকে চক্রান্ত বলে উল্লেখ করেন এবং দোষ চাপান মহেন্দ্র সিং ধোনির ঘাড়েও।
বর্তমান প্রেক্ষিত-
দু বছর আগেই আইপিএলে ফিরেছে চেন্নাই সুপার কিংস এবং রাজস্থান রয়েলস। আর ২০১৯ এ সুপ্রিম কোর্ট শ্রীশান্তের ওপর থেকে ব্যান তুলে নেয়। বর্তমানে কেরালার ঘরোয়া দলের সাথে যুক্ত থাকতে দেখা গিয়েছে। আসন্ন রঞ্জি ট্রফিতে কেরালার হয়ে বল হাতে দেখা যেতে পারে তাকে।