যত বেশি ঘুমোবেন তত বেশি রোজগার , সুখের চাকরিতে মাস গেলে মিলবে লাখ টাকা মাইনেও
আপনি কি ঘুমোতে ভালবাসেন? সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে অফিস যেতে মন চায় না? ভাবেন যদি ঘুমানোর জন্য কেউ টাকা দিত তাহলে সেই চাকরিটাই নিতেন। তবে আপনার স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে৷ শুধু ঘুমানোর জন্যই আপনাকে ১ লাখ টাকা দেবে বেঙ্গালুরুর এক কোম্পানি।
- FB
- TW
- Linkdin
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক দুপুর দু’টা। ভরপেট টিফিনের পর চেয়ারে বসে থাকাই তখন দায়! দু’চোখের পাতা বুজে আসে। গা এলিয়ে পড়ে। চেয়ারে হেলান দিয়ে একটু ঘুমিয়ে নিতে কে না চান? কিন্তু বাস্তব যে বড্ড বেরসিক! কর্পোরেট হোক কিংবা সরকারি। ভরদুপুরে অফিস রুমে ঘুম মানেই মূর্তিমান বিভীষিকা! সহকর্মীদের ঠাট্টা-তামাশা। ভাগ্য খারাপ হলে উপরওয়ালার চোখরাঙানি! পত্রপাঠ হাতে আসতে পারে শো’কজের নোটিসও! এতকিছুর পরেও ভাতঘুমের ঐতিহ্য কেড়ে নেয় সাধ্যি কার?
বরং অভিনব ‘অফার’ নিয়ে ঘুমকাতুরে অফিসবাবুদের কাছে হাজির হয়েছে বেঙ্গালুরুর একটি ম্যাট্রেস সংস্থা। ‘ওয়েকফিট’ নামে ওই স্টার্ট আপ সংস্থা আগামী বছর থেকে ফের চালু করতে চলেছে ‘স্লিপ ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম’। সোজা বাংলায় বললে, যার মানে দাঁড়ায়, যত নিখুঁত ঘুম, তত বেশি টাকা। এছাড়া আর কোনো কাজ নেই। প্রতিদিন স্রেফ নরম-গরম গদিতে গা এলিয়ে শুয়ে থাকতে হবে। এটাই ‘অফিসিয়াল ডিউটি’।
গত বছর সংস্থাটির এই উদ্যোগ তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ভারতজুড়ে প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ আবেদন করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মাত্র ২৩ জনের ভাগ্যে শিঁকে ছিঁড়েছিল।
বেঙ্গালুরুর সংস্থা ‘ওয়েকফিট’ কর্মী নিয়োগ করবে। আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী, আপনার কোন দিকে কেমন দক্ষতা রয়েছে, সেসব ওই সংস্থার আধিকারিকদের জানার প্রয়োজন নেই। পরিবর্তে কর্মী নিয়োগের জন্য ওই সংস্থা শুধুমাত্র জানতে চায় আপনার ঘুমনোর ক্ষমতা কেমন? মানে সারাদিনে ঠিক কতক্ষণ নিশ্চিন্তে অঘোরে ঘুমোতে পারেন আপনি। প্রার্থীকে বাছাই করার পর তাঁর কাউন্সেলিংয়ের বন্দোবস্ত করবে ওই সংস্থা। কাউন্সেলিংয়ের পরই শুরু হবে কাজ। সংস্থার দাবি, ১০০ দিন ৯ ঘণ্টা করে ঘুমোতে হবে। সংস্থার শর্তপূরণ করতে পারলেই মিলবে ১ লক্ষ টাকা। তবে ১০০ দিনে নয়ের পরিবর্তে এক ঘণ্টাও কম ঘুমোলে টাকা কিন্তু মিলবে না।
‘ওয়েকফিট’ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মূল বিষয় এক থাকলেও এবছর নিয়মকানুনে কিছুটা রদবদল আনা হয়েছে। নয়া নিয়মে প্রতিদিন ঘড়ি ধরে ৯ ঘণ্টার ঘুম বাধ্যতামূলক। তাও চালাতে হবে টানা ১০০ দিন। নজরদারির দায়িত্বে থাকবেন বিশেষ প্রশিক্ষিত কাউন্সিলর। ঘুমের নামে ফাঁকি এখানে মোটেও বরদাস্ত করা হবে না। কেউ চোখ পিটপিট করলেই ‘ডিসকোয়ালিফাই’ ঘোষণা করা হবে।
সুতরাং, ঘুমের ‘দায়িত্বপালন’ যতটা সহজ বলে মনে হচ্ছে, ব্যাপারটা মোটেও সেরকম নয়। ইচ্ছুক আবেদনকারীদের এভাবে আগেভাগে সতর্ক করেছে সংস্থা কর্তৃপক্ষ। ওয়েবসাইটে জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের বিছানায় গড়ানো মাত্র যেন দু’চোখের পাতা এক হয়ে আসে। আবার শুধু নিজে ঘুমোলেই হবে না। একজনের নিদ্রা-প্রীতি যেন টিমের বাকি সদস্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। হাই তোলা, ঝিমুনি, আলস্যের ভাব ফুটে উঠলে সেই সকল প্রতিযোগী বাড়তি নম্বর পাবেন বলেও জানানো হয়েছে।
কিন্তু কী কারণে সংস্থার এই উদ্যোগ? কারণ, সংস্থার দাবি ব্যস্ততার যুগে অনেকেই ঘুমের দিকে নজর দেন না। তার ফলে নানা ধরনের অসুস্থতাও বাড়ছে। ঘুমেরও যে যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সে বিষয়ে সকলকে ওয়াকিবহাল করতে এই উদ্যোগ। গত বছর থেকে সংস্থা এই আজব কাজের কথা ভেবেছে। সেই অনুযায়ী কর্মী নিয়োগও করা হয়।
গত বছরে ১ লক্ষ ৭০ হাজার জন এই কাজে যোগ দিয়েছিলেন। তবে তার মধ্যে মাত্র ২৩ জনই একশোদিন ন’ঘণ্টা করে ঘুমিয়ে এক লক্ষ টাকা উপার্জন করেন। আগামী বছরের ইন্টার্নশিপের জন্য এখনই প্রচুর আবেদনপত্র জমা পড়ে গিয়েছে। তবে আদতে কতজন ‘কঠিন’ চাকরিতে শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন, সেটাই দেখার।
২০১৯ এও প্রতিদিন দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় ঘুমালেই মিলেছিল টাকা। সেবার সারা দেশ থেকে ১.৭ লাখ আবেদন জমা পড়েছিল। যার মধ্য থেকে মাত্র ২৩ জনকে বেছে নিয়েছিল এই সংস্থা। তাদের মধ্যে ২১ জন ভারতীয় ও দুজন বিদেশি৷
এই চাকরি পাওয়ার যোগ্যতায় , যে কোনও ফিল্ডে ডিগ্রি থাকলেই হবে৷ বিশেষ করে যদি আপনি স্কুলে বা কলেজে ক্লাস চলাকালীন ঘুমিয়ে পড়তেন, তা হলে তা হবে বোনাস৷
বিছানায় যাওয়ার ১০ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ার ক্ষমতা থাকতে হবে৷ টিম প্লেয়ার হতে হবে৷ ঘুমের পণ্য বা সামগ্রী সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে৷ বিশ্লেষণ ক্ষমতা থাকতে হবে৷
কোলাহলযুক্ত পরিবেশে ঘুমনোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে৷ ব্যক্তিগত ঘুমের ধরন কেমন, তা ঠিক মতো রেকর্ড করার পাশাপাশি নিজের ঘুমের ধরনকে বিশ্লেষণ করারও ক্ষমতা থাকতে হবে৷