দলাই লামাকে দেওয়া হোক 'ভারতরত্ন', চিনকে মোক্ষম জবাব দিতে এবার দাবি তুলল সঙ্ঘ পরিবার
- FB
- TW
- Linkdin
মোদী সরকারে উদ্দেশে সঙ্ঘ পরিবারের প্রস্তাব, চিনকে কড়া জবাব দিতে ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ভারতরত্নে ভূষিত করা হোক তব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামাকে।
ভারতীয় জনতা পার্টির 'মেন্টর' সঙ্ঘ পরিবারের এই প্রস্তাব ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে বিবেচনাধীন রয়েছে। তবে দলাই লামাকে ভারতরত্ন দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে কেন্দ্রের শীর্ষ আধিকারিকরা দ্বিধাবিভক্ত।
আমলাদের একাংশের বক্তব্য, ভারত-চিন সংঘাতের আবহে এই প্রস্তাব ভেবে দেখা যেতে পারে। আমলাদের অন্য অংশ আপবার অনেকটাই সংযত। তাঁদের বক্তব্য, এই পদক্ষেপ আগুনে ঘৃতাহুতি দেওয়ার শামিল। সীমান্ত সংঘাতের আবহে দলাই লামাকে ভারতরত্ন দিলে, নিশ্চিত ভাবেই কড়া প্রতিক্রিয়া দেবে বেজিং।
৬১ বছর আগে, ১৯৫৯-এর মার্চের এক রাতে চিনের লাল ফৌজের লালচক্ষু উপেক্ষা করে পথে নেমে পড়েছিলেন দলাই লামা। সঙ্গী ছিলেন বৃদ্ধা মা, বোন, ছোট ভাই আর তাঁর কয়েক জন আধিকারিক। জানতেন না, তাঁর সামনে কী ভবিষ্যত্ অপক্ষা করছে।
সেদিন তিব্বতের লাসার পোতালা প্রাসাদ ছেড়ে পথে নেমে পড়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না ধর্মগুরু দলাই লামার সামনে। কারণ, তারও আট বছর আগেই বৌদ্ধ ধর্মাবলাম্বী স্বাধীন তিব্বতে লাল ফৌজ ঢুকিয়ে দেয় চিন। তিব্বতের দখল নেওয়ার জন্য শুরু হয় অত্যাচার। নির্যাতন। লাল ফৌজকে রুখতে সেদিন গণ-আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দলাই লামা। তাই তিনি টার্গেট হয়ে উঠেছিলেন চিনের।
১৯৫৯-এর সেই সেই রাতে পথে নেমে না পড়লে চিনাসেনার হাতে নিশ্চিত ভাবেই দলাই লামাকে প্রাণ হারাতে হতো। হয়তো তাঁর পরিবারের সদস্যরাও রেহাই পেতেন না।
সেই রাতে লাল ফৌজের পোশাক পরেই পথে নেমেছিলেন দলাই লামা। অনেক ঝড়জল, চড়াই-উতরাই, প্রতিকূলতা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত পরিবার, অনুগামীদের নিয়ে ভারতের ভূখণ্ডে এসে পৌঁছেছিলেন দলাই লামা। পালিয়ে আসার দু’দিন পর জানতে পেরেছিল লাল ফৌজ। বন্দুকের মুখে রক্তগঙ্গা বইয়ে তিব্বতকে গায়ের জোরে দখলে নিয়েছিল চিন। তিব্বতে দলাই লামাকে খোঁজার নামে বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয়েছিল তল্লাশি, অত্যাচার।
১৯৫৯ সালের ৩ এপ্রিল ভারত দলাই লামাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়। তাঁর নির্বাসিত সরকারকে জায়গা দেওয়া হয় হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায়। তার পর, সেখান থেকেই তিব্বত মুক্ত করার দাবিতে চিনবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করেছেন দলাই লামা। যার স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৮৯ সালে তিনি পান নোবেল শান্তি পুরস্কার।
আগামী ৬ জুলাই জন্মদিন দলাইয়ের। ৮৪ বছরের বৌদ্ধ ভিক্ষুকে কেন্দ্রের তরফে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানোর কথাও ভাবা হচ্ছে।
১৪তম দালাই লামাকে ভারতরত্ন দেওয়া উচিত। পূর্ব লাদাখের গলওয়ান উপত্যকায় ভারত-চিন সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পর এই দাবি তুলেছেন দেশের প্রাক্তন বিদেশসচিব নিরুপমা রাও। একসময় চিনে ভারতের রাষ্ট্রদূতও ছিলেন রাও।
বিজেপির প্রবীণ নেতা, হিমাচলপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শান্তা কুমার ২০১৯ সালের এপ্রিলে কেন্দ্রের কাছে চিঠি দিয়ে দলাই লামাকে ভারতরত্ন দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাংসদদের সই ছিল সেই চিঠিতে।
বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীও দলাই লামাকে ভারতরত্ন দেওয়ার পক্ষে। দলাই লামার ভারতরত্নের জন্য সওয়াল করেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও।
এমনিতে ভারত সরকারের সঙ্গে দলাই লামার সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো। দিন কয়েক আগেই করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করে চিঠি লেখেন দলাই লামা। এমনকি করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে অনুদানও দেন তিনি।