একবার কোভিড-মুক্ত হয়েও ফের কি সংক্রমিত হতে পারেন রোগী - কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
গত সপ্তাহেই জলপাইগুড়ি শহরের কদমতলার বাসিন্দা বছর পাঁয়তাল্লিশের এক স্বাস্থ্যকর্মী দ্বিতীয়বারের জন্য কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছিল। তার আগে চিন, আমেরিকা থেকে এরকম রোগীর কথা শোনা গিয়েছিল। এমনকী ভারতের নয়ডার এক ডাক্তারও দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর এসেছিল। কিন্তু, ময়নাগুড়ি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীর খবরটা জানার পর থেকে মানুষের মধ্যে বেশ ভয় ছড়িয়েছে। তাহলে একবার করোনা মুক্ত হয়েই রেহাই নেই, আবারও শরীরে হানা দিতে পারে কোভিড-১৯?
- FB
- TW
- Linkdin
সাধারণ মানুষের মতো বিষয়টি ভাবাচ্ছে বিশ্বজুড়ে গবেষক-বিজ্ঞানীদেরও। এতদিন ধারণা ছিল, ভাইরাস ঘটিত রোগে একবার কেউ আক্রান্ত হলেই তাঁর দেহে সেই ভাইরাস প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। যা ওই রোগীকে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। কিন্তু, কোভিড-এর সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলিতে সেই ধারণা কি ভুল বলে মেনে নিতে হবে? বিজ্ঞানীরা এখনও এই বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে না চাইলেও তাঁরা বলছেন তাঁদের বিশ্বাস এরকম কোনও সম্ভাবনা নেই।
বিশেষজ্ঞদের দাবি যাঁরা সুস্থ হওয়ার সপ্তাহ খানেক পর ফের করোনা পজিটিভ হিসাবে সনাক্ত হচ্ছেন, তাঁরা সম্ভবত প্রথমবারেই সম্পূর্ণ ভাইরাস মুক্ত হননি। হয় তাঁরা আগের ভাইরাসেই ফের আক্রান্ত হয়েছেন অথবা পরীক্ষায় মূল সংক্রমণের অবশিষ্টাংশই সনাক্ত হয়েছে। কারণ, একই রকম অন্যান্য ভাইরাসের ক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে প্রথমবার আক্রান্ত হওয়ার তিন মাস থেকে এক বছর পরও তাঁরা প্রথম সংক্রমণেই ফের অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে, অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষায় ভুলের জন্য়ও ফল ইতিবাচক আসতে পারে।
করোনা-মুক্ত হিসাবে ঘোষিত হওয়ার সপ্তাহখানেক পরে যাঁরা ফের পজিটিভ সনাক্ত হচ্ছেন তাঁরা যে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন না এই বিষয়টির সপক্ষে বিজ্ঞানীদের যুক্তিও রয়েছে। তাঁরা বলছেন দ্বিতীয়বার পজিটিভ হওয়া ব্যক্তিদের থেকে সুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে এমন ঘটনা এখনও একটি ক্ষেত্রেও দেখা যায়নি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে যাঁরা সুস্থ হয়ে উঠছেন তাঁদের ফের আক্রান্ত হওয়ার বিরুদ্ধে অবশ্যই কিছুটা অনাক্রম্যতা থাকবে। তবে সেই সুরক্ষা কতদিন স্থায়ী হয়, তা এখনও গবেষণার বিষয়। আর করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও প্রথম সংক্রমণের অনেকদিন পর তা থেকেই ফের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন কিনা, সেটাও খুব তাড়াতাড়ি জানাটা দরকার।
গত সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই বিষয়ে চালানো একটি ক্ষুদ্রমাপের গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সেই গবেষণা বলছে, যাঁরা অ্যাসিম্পটমেটিক বা উপসর্গহীন, এবং যাঁদের দেহে সংক্রমণ খুব হালকা অর্থাৎ সামান্য উপসর্গ দেখা যায়, সেই সব কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি মাত্র কয়েক মাস স্থায়ী হয়। কাজেই তাঁরা ফের সংক্রমিত হতে পারেন। তবে গবেষকরাও এটাও বলছেন যে অ্যান্টিবডিই কোনও ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবদেহের একমাত্র প্রতিরক্ষা নয়। দেহের অন্যান্য অংশগুলিও রোগ প্রতিরোধী সুরক্ষা দিতে পারে।
তবে একবার আক্রান্ত হওয়ার পর কোনও ব্যক্তি ফের দ্বিতীয়ববার কোভিড-১৯ আক্রান্ত হতে পারেন কি না, সেটা নিশ্চিতভাবে জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যদি এটা সত্যিই হয়ে থাকে তাহলে সুস্থ হওয়ার পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থেকে ফের কাজে যোগ দেওয়ার পদ্ধতি ভুল বলে মানতে হবে। আর, টিকা আবিষ্কার হলেও তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের আশা না করাই ভালো।