- Home
- India News
- প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজীব গান্ধীর নেওয়া সিদ্ধান্তগুলি, যার সুফল আজও ভোগ করছেন দেশবাসী
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজীব গান্ধীর নেওয়া সিদ্ধান্তগুলি, যার সুফল আজও ভোগ করছেন দেশবাসী
আজ দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত রাজীব গান্ধীর জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৯৪৪ সালের ২০ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রাজীব গান্ধী রাজনীতিতে প্রবেশ করতে চাননি, তবে পরিস্থিতির চাপে তাঁকে রাজনীতিতেই আসতে হয়। দেশের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী তিনি। প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকাকালীন রাজীব গান্ধী একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক ভারত নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন, যার সুফল এখনও পাচ্ছে এদেশের মানুষ।
- FB
- TW
- Linkdin
পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা - রাজীব গান্ধী দেশের পঞ্চায়েতী রাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশে 'জনগণই শক্তি ' ধারণাটি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেন। গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করতেই এই পদক্ষেপ । ১৯৮৯ সালে তিনি একটি প্রস্তাব পাস করে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থাকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। রাজীব গান্ধী বিশ্বাস করতেন যে পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থা শক্তিশালী না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছতে পারে না। তাঁর আমলে তিনি পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থার সম্পূর্ণ প্রস্তাব তৈরি করেছিলেন।
রাজীব গান্ধীর এই চিন্তাই বাস্তবায়িত হয়েছিল ১৯৯২ সালে। ৭৩ ও ৭৪তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে। রাজীব গান্ধী সরকারের আমলে তৈরি ৬৪ তম সংবিধান সংশোধনী বিলের ভিত্তিতে, নরসিমহা রাও সরকার ৭৩তম সংবিধান সংশোধনী বিলটি পাশ করেন। পঞ্চায়েতী রাজ ব্যবস্থা ১৯৯৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে সারা দেশে কার্যকর হয়েছিল। যার কারণে সমস্ত রাজ্য পঞ্চায়েত নির্বাচন করতে বাধ্য হয়েছিল। পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ।
ভোটদানের বয়সসীমা হ্রাস - আগে দেশে ভোট দেওয়ার বয়সসীমা ২১ বছর ছিল, তবে রাজীব গান্ধীর মতে এই বয়সসীমাটি ভুল সিঠক ছিল না। তিনি ১৮ বছর বয়সের যুবকদের দেশের প্রতি আরও দায়বদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালে সংবিধানের ৬১ তম সংশোধনীর মাধ্যমে ভোটদানের বয়সসীমা ২১ থেকে কমিয়ে ১৮ বছর করা হয়েছিল। এইভাবেই ১৮ বছরের যুবক সমাজ এখন সংসদ, বিধায়কদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বেছে নিতে পারে।
গ্রামীণ ভারতের শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আধুনিক নবোদয় বিদ্যালয় রাজীব গান্ধীর আমলেই তৈরি হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ৫৫১টি নবোদয় বিদ্যালয়ে ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। রাজীব গান্ধী জওহর নভোদয় বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন এই ধারণা নিয়ে যে, গ্রামের ছেলেমেয়েদেরও সর্বোত্তম শিক্ষা দেওয়া উচিত। এগুলি আবাসিক স্কুল। সফল মেধাবী শিশুরা এই বিদ্যালয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষায় মাধ্যমে ভর্তি হন। বাচ্চারা ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নিখরচায় শিক্ষা লাভ করে এবং হোস্টেলে থাকে। রাজীব গান্ধী শিক্ষার ক্ষেত্রেও বিপ্লবী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তাঁর সরকার ১৯৮৬ সালে জাতীয় শিক্ষি নীতি (এনপিই) ঘোষণা করে। এর আওতায় উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাটি সারা দেশে আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারিত করা হয়।
সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ - ১৯৮৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে রাজীব গান্ধী সরকারি কর্মচারীদের জন্য পাঁচ দিনের কাজের বিধানও কার্যকর করেছিলেন। এর পিছনে তাঁর উদ্দেশ্য ছিল জনগণকে সাপ্তাহিক ছুটি বাড়িয়ে কাজে বেশি উৎসাহ দেওয়া। রাজীব গান্ধী সন্ধ্যা পাঁচটার পরিবর্তে সন্ধ্যা ছয়টায় অফিস বন্ধ করার সময় ধার্য করেন। যাতে দৈনিক কাজের সময় বাড়িয়ে পরিবর্তে কর্মচারীদের সপ্তাহে দু'দিন শনি ও রবিবার ছুটি দেওয়া যায়। রাজীব গান্ধী পশ্চিমি দেশগুলি থেকে এই ধারনা নিয়েছিলেন, সরকারি কর্মচারীরা এখনও এই সুবিধা পাচ্ছেন।
আধুনিক শিক্ষানীতি - রাজীব গান্ধী শিক্ষার ক্ষেত্রেও বিপ্লবী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। রাজীব সরকারের শিক্ষা মন্ত্রনকে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকে রূপান্তর করেছিল এবং পিভি নরসিমহা রাওকে এই মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮৬ সালে দেশে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা হয়। এর আওতায় উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাটি সারা দেশে আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ করা হয়।
জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬ সালে দেশে শিক্ষার উন্নয়নের জন্য একটি ব্যাপক কাঠামো প্রবর্তন করে। শিক্ষার আধুনিকীকরণ ও মৌলিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দিকে জোর দেওয়া হয়েছিল। পশ্চাৎপদ শ্রেণি, প্রতিবন্ধী ও সংখ্যালঘু শিশুদের লেখাপড়ায় বেশি জোর দেওয়া হয়েছিল। ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের পড়াশোনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল এবং মহিলাদের মধ্যে নিরক্ষরতার হার হ্রাস করার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। বৃত্তিমূলক ও প্রযুক্তিগত শিক্ষাকেও বিশেষ দুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।