- Home
- World News
- International News
- ফেস শিল্ড না মাস্ক, করোনা সংক্রমণ আটকাতে কাকে এগিয়ে রাখছেন বিশ্বের তাবড় বিশেষজ্ঞরা
ফেস শিল্ড না মাস্ক, করোনা সংক্রমণ আটকাতে কাকে এগিয়ে রাখছেন বিশ্বের তাবড় বিশেষজ্ঞরা
- FB
- TW
- Linkdin
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে নিয়মিত মাস্ক পরা এখন অনেকেরই অভ্যাসে হয়ে গেছে । তবে মাস্কের কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার স্বাস্থ্যের পক্ষে বেশি বিপজ্জনক হতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন নির্দেশিকায় সতর্ক করে বলা হয়েছে, শরীরচর্চা, অত্যাধিক দৈহিক পরিশ্রম যুক্ত ভারি কাজের সময় মাস্ক পরে থাকলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হয় ফলে অস্বাভাবিক ক্লান্তি, শরীরের বিভিন্ন অংশের পেশিতে টান পড়া বা খিঁচুনি, বমি ভাব, মাথা ঘোরানো এমন কি ব্রেন স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। তাই এই সমস্ত ক্ষেত্রে মাস্ক না পরাই ভালো। আর এই সমস্ত ক্ষেত্রে করোনা থেকে সুরক্ষা দিতে সবচেয়ে উপযুক্ত হল ফেস শিল্ড।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহামারি বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভ্যান কেরখোভ জানান, যে ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে সাধারণ কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার না করে ত্রিস্তর বিশিষ্ট মাস্কই সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা দিতে পারবে।
গবেষণা বলছে, তিন স্তরের কাপড়ের মাস্ক ঠিকভাবে পরলে এবং সামাজিক দূরত্বের নিয়মকানুন সঠিকভাবে অনুসরণ করলে সংক্রমণ থেকে ৯০-৯৫ শতাংশ সুরক্ষা পাওয়া যায়। কিন্তু অনেকে মাস্ক ঠিকভাবে সামলাতে পারেন না। কথা বলার সময় নাক-মুখ বের করে ফেলেন, কারণে-অকারণে থুতনির নিচে মাস্ক নামিয়ে রাখেন। কেউ কেউ আবার ঢিলেঢালা মাস্ক ব্যবহার করেন, ফলে চারপাশে ফাঁক রয়ে যায়। অনেকে আবার মাস্কের বাইরের অংশে বারবার হাত দেন এবং সেই হাত না ধুয়েই নাক-মুখ-চোখ স্পর্শ করেন। কেউ কেউ মাস্ক না ধুয়ে অথবা একবার ব্যবহার করে মাস্ক ফেলে না দিয়ে টানা ব্যবহার করতে থাকেন। এতে সংক্রমণ প্রতিরোধ হয় না। উল্টো বিপদ বেড়ে যায়।
মার্কিন সংস্থা মায়ো ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোনও ত্রিস্তর বিশিষ্ট মাস্ক ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে সক্ষম। তবে ফেস শিল্ড সমস্ত মুখমণ্ডলের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
এ বিষয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে মাস্কের থেকেও বেশি সুরক্ষা নিশ্চিত করে ফেস শিল্ড।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘক্ষণ মাস্ক পরে থাকার কারণে অনেকের মধ্যেই ইদানীং শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা দেখা যাচ্ছে। যাদের শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা আগে থেকেই রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে দীর্ঘক্ষণ মাস্ক পরে থাকা প্রায় অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে মাস্কের সবচেয়ে কার্যকরী বিকল্প হল ফেস শিল্ড।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের মতে, মাস্কের চেয়ে ফেস শিল্ড অনেক বেশি পুনর্ব্যবহারযোগ্য । এটির ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যাও হয় না। মাস্কের চেয়ে ফেস শিল্ড অনেক বেশি সুবিধাজনক। তবে ঘনবসতিপূর্ণ এলকায় মাস্ক পরাটাই শ্রেয়।
ফেস শিল্ডের সুবিধা হলো, এতে কপাল থেকে চিবুক ছাপিয়ে ঢাকা থাকে। ফলে চোখে আলাদা করে গগলস বা চশমা পরতে হয় না, কথা বলতেও সুবিধা হয়। শিল্ড পরা থাকলে চাইলেও অজান্তে চোখে-মুখে-নাকে হাত দেওয়া যায় না, ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা কমে। যাঁদের মাস্ক পরলে দম বন্ধ লাগে, ফেস শিল্ডে তাঁদেরও সুবিধা। শিল্ড বারবার জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, শিল্ড পরলে মাত্র দেড় ফুট দূরে দাঁড়িয়েও যদি কেউ হাঁচি-কাশি দেন, জোরে কথা বলেন বা হাসেন, সে ক্ষেত্রেও ৯৬ শতাংশ সুরক্ষা পাওয়া যায়।
শিল্ডের কিছু অসুবিধাও আছে। এর দুই পাশে কিছুটা ফাঁকা জায়গা থাকে। ফলে ঠিক পেছনে বা পাশে কেউ হাঁচি-কাশি দিলে, জোরে কথা বললে বা হাসলে সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কাজেই কেউ যদি মুখের সঙ্গে ভালো ফিট হয়, এমন তিন স্তরের কাপড়ের মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্বের নিয়মকানুন মেনে চলেন, তাহলে এটিই হতে পারে ভালো বিকল্প। তবে কাজের সময় চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাস্কের পর শিল্ড পরতে হবে। এতে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। জরুরি সেবাকর্মীরা সম্ভব হলে মাথায় ক্যাপ দিয়ে চুলও ঢেকে রাখবেন।