- Home
- World News
- International News
- কাশি সারাবার সুইডিশ মাউথ স্প্রে-তে মুখেই সারছে করোনা, বৈপ্লবিক পথে গবেষণায় এল সাফল্য
কাশি সারাবার সুইডিশ মাউথ স্প্রে-তে মুখেই সারছে করোনা, বৈপ্লবিক পথে গবেষণায় এল সাফল্য
কোভিড-১৯ রোগের নিরাময়ক ওষুধ এবং টিকা তৈরির জন্য বিশ্বব্যাপী দিনরাত খাটছেন বহু বিজ্ঞানী-গবেষকরা। বেশ কিছু টিকা পরীক্ষা-নিরীক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতেই ২০২১ সালের প্রথম দিক ছাড়া টিকা জনসাধারণের জন্য সহজলভ্য হবে না। এই অবস্থায় চিকিৎসকরা কোভিড পজিটিভ রোগীদের চিকিত্সার জন্য বিভিন্ন বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখছেন। ডেক্সামেথেসোন, ফ্যাভিপিরাভির এবং হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন-এর মতো অন্যান্য রোগের ওষুধ কোভিজ রোগীদের দিয়ে দেখা হচ্ছে তা রোগ প্রতিরোধ করতে পারছে কি না। কিন্তু তাই বলে মুখে স্প্রে করে কোভিড সারবে কি? আসুন দেখা যাক।
- FB
- TW
- Linkdin
গবেষকরা এখন করোনা রুখতে সম্পূর্ণ নতুনভাবে ভাবনা-চিন্তা করছেন। বাধাধরা গতের বাইরে কিছু ভাবার চেষ্টা করছেন। আর এরকমই একদল বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন ওষুধ দিয়ে মুখ বা নাকের মধ্যেই করোনা-কে থামিয়ে দেওয়া যায় কিনা তাই নিয়ে। বস্তুত, মুখ বা নাক-ই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রাথমিক অঙ্গ। এই অঙ্গগুলির মাধ্যমেই মানব দেহে প্রবেশ করে সার্স-কোভ-২ অর্থাৎ এই নতুন করোনাভাইরাস।
এর মধ্যেই বৈপ্লবিক দাবি করেছেন এনজাইমিকা নামে সুইডেনের একটি ওষুধ সংস্থার বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে কোল্ডজাইম নামে তাদের তৈরি যে সাধারণ সর্দি-কাশি নিরাময়ের ওষুধ রয়েছে তা কার্যকরভাবে ৯৮.২ শতাংশ করোনাভাইরাস মুখের মধ্য়েই মেরে ফেলছে। কোল্ডজাইম-এর উপাদানগুলির মধ্যেই এই মারাত্মক ভাইরাস-কে মারার ক্ষমতা রয়েছে। এই ওষুধ সংস্থাটি আপাতত প্রি-ক্লিনিকাল ট্রায়াল করে ইতিবাচক ফল পেয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সংস্থাটির দাবি বেশ কয়েক দফা 'ইন-ভিট্রো ট্রায়াল'-এর পর তারা দেখেছে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস-এর বিরুদ্ধে লড়ার জন্য কোল্ডজাইম-কে তৈরি করা হলেও, এটি সার্স-কোভ-২ ভাইরাস বা নতুন করোনাভাইরাস-সহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি ভাইরাস-কে নির্মূল করতে সক্ষম এবং মানুষকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা-ও দিতে পারে। এই ওষুধটি স্প্রে আকারে সরাসরি মুখে দেওয়া হয়। ফলে মুখগহ্বরের প্রতিটি পৃষ্ঠতলে স্থানীয় স্তরে গিয়ে ভাইরাস সংক্রমণ দূর করতে পারে। এটি তৈরি করা হয় গ্লিসারল এবং আটলান্টিক কড ট্রিপসিন-এর সংমিশ্রণে। সংস্থার দাবি, কোল্ডজাইম ভাইরাস সংক্রমণ মুখেই রোধ করে তাদের শক্তি হ্রাস করে, আর এর ফলে ভাইরাসটি শরীরে আর প্রবেশ-ও করতে পারে না।
সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দাবি তাদের এই স্প্রে 'সম্ভবত' এই মুহূর্তে কোভিড-এর বিরুদ্ধে প্রচলিত যে কোনও পরীক্ষামূলক চিকিত্সার পদ্ধতির চেয়ে দ্রুত কাজ করে। তাঁরা জানিয়েছেন, সার্স-কোভ-২'এর বিরুদ্ধে কোল্ডজাইম কতটা কার্যকরী হতে পারে, কতক্ষণে সে ভাইরাসটিকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে তা যাচাই-এর জন্য পরীক্ষা করা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছে ২০ মিনিটেই ৯৮.৩ শতাংশ ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংস্থার দাবি সত্যি হলে তা হালকা থেকে মাঝারি কোভিড আক্রান্তদের ক্ষেত্রে কার্যকরী হতে পারে। তা সত্যি সত্যি দ্রুত কাজও করতে পারে, কারণ কোল্ডজাইম, প্রাথমিক সংক্রমণের স্থানেই সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে। তবে একবার মুখ এবং নাসা গহ্বর দিয়ে তা গলা ও শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে পৌঁছে গিয়ে অনুলিপি তৈরি করতে শুরু করলে আর এই ওষুধে কাজ দেবে না।
এনজাইমিকা সংস্থা জানিয়েছে, স্বীকৃত স্বাধীন ও প্রতিষ্ঠিত মার্কিন গবেষণাটি সংস্থা মাইক্রোব্যাক ল্যাবরেটরিজ ইনকর্পোরেশনের পরীক্ষাগারে তারা পরীক্ষা চালিয়েছে। তাতে বিবিন্ন ঘনত্বে ওই ওষুধ নিয়ে দেখা গিয়েছে ওষুধটি মানবদেহে কোনও ধরণের ক্ষতিকারক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা সাইটোটক্সিসিটি অর্থাৎ বিষাক্ত রাসায়নিক উত্পাদন করে না।
সংস্থাটি জানিয়েছে বর্তমানের যে ভিট্রো পরীক্ষার ফলাফল এসেছে সেগুলি দেখে এটি 'ক্লিনিক্যাল কার্যকরী' তা বলা যাবে না। তবে তাদের এই মাউথ স্প্রে-টি যেহেতু সাদারণ সর্দি কাশির বিরুদ্ধে বেশ কয়েক বছর ধরে বহুল ব্যবহৃত, তাই পণ্যটি ক্লিনিকাল ট্রায়াল দ্রুত করলেও কোনও বিপদের সম্ভাবনা নেই। তবে তারা আশাবাদী কোল্ডজাইম করোনার বিরুদ্ধে কার্যকরী ওষুধ এটা নীতিগতভাবে যখন প্রমাণিত হয়েছে, তখন ক্লিনিকালি অর্থাৎ বাস্তবিকভাবেও সার্স-কোভ-২'র বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক ওষুধ হিসাবে প্রমাণিত হবে।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুইডেনে মোট ৭৮,৫০৪ জন কোভিড আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই এখন চিকিৎসাধীন। সেই সঙ্গে এখনও পর্যন্ত করোনা জনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে ৫৬৬৭ জনের। তবে এখানও সুইডেনের সাধারণ মানুষ এবং সরকার - কেউই করোনাভাইরাস মহামারিকে সেইরকম গুরুত্ব দিচ্ছে না, বলে অভিযোগ রয়েছে।