ক্ষুধার তাড়নায় দৌড়বিদ হয়েছিলেন মিলখা, রচনা করেছিলেন এক রূপকথা
- FB
- TW
- Linkdin
১৯২৯ সালের ২০ নভেম্বর অবিভক্ত ভারতের ও এখনকার পাকিস্তানের মুজফফরগড় জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে এক শিখ রাজপুত পরিবারে জন্ম হয় মিলখা সিংয়ের। মিলখারা মোট ১৫ জন ভাইবোন ছিলেন।
১৯৪৭-এর দেশভাগের অশান্তির সময় চোখের সামনে নিজের মা-বাবাকে খুব হতে দেখেছিলেন ছোট্ট মিলখা। প্রণ হারাতে হয়েছিল ৮ জন ভাই বোনকে। তারপর ভারতে চলে আসেন মিলখা সিং।
দিল্লিতে এক দিদির কাছে আশ্রয় পায় মিলখা। দারিদ্র ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। ক্ষুধার জ্বালা তখন অনুভব করেছিলেন ছোট্ট মিলখা। সেখান থেকেই শুরু হয় জীবনযুদ্ধে ছোট্ট মিলখা থেকে ফ্লাইং শিখ হয়ে ওঠার দৌড়।
১৯৫২ সালে চতুর্থবারে চেষ্টার সেনা বাহিনীতি চাকরি পান মিলখা সিং। সেনায় থাকাকালীন বিভিন্ন স্পোর্টস ইভেন্টে অংশ নেন মিলখা। দৌড়, খেলাধুলার প্রতি বরাবরই আকর্ষণ ছিল মিলখার।
দৌড়ে মিলখার ধারেকাছে যে সেনাবাহিনীর অন্য জওয়ানরা কেউ ধারে কাছে আসতে পারত না, এই বিষয়টি সেনা কর্তাদের নজরে আসে। আর সেখান থেকেই শুরু হয় মিলখার দৌড়বিদ হওয়ার যাত্রা।
১৯৫৬ সালের অলিম্পিকে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন মিলখা সিং। কিন্তু প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে যান তিনি। কিন্তু সাফল্য পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি মিলখাকে। ১৯৫৬ এশিয়ান গেমসে ২০০ ও ৪০০ মিটারে সোনা জেতেন।
১৯৫৮ সালে কার্ডিফে কমনওয়েলথ গেমসে অংশ নেন মিলখা সিংখা। শুধু প্রথম ভারতীয় হিসেবে কমনওয়েলথে সোনা জয় নয়, এমন রেকর্ড গড়েল মিলখা যা অক্ষত ছিল ৫২ বছর।
৪৬.৬ সেকেন্ড দৌড় শেষ করেন মিলখা সিং। হারান সেই সময়কার তারকা আফ্রিকান স্প্রিনটার ম্যালকম স্পেন্সকে। ২০১০ সালে দিল্লি কমনওয়েথল গেমসে ডিসকাস থ্রো-তে কৃষ্ণা পুনিয়া সোনা জিতে মিলখার মাইলফলক স্পর্শ করেন।
১৯৫৬ এশিয়ান গেমস ও ১৯৫৮ কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জয়ের সুবাদে ১৯৫৮ সালে অর্জুন পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় মিলখা সিংকে। একইসঙ্গে ১৯৬০ অলিম্পিকসে পদক জয়ের স্বপ্নও দেখতে শুরু করে গোটা দেশ।
কিন্তু সামান্য ভুলের জন্য ১৯৬০ অলিম্পিকসে পদক হাতছাড়া হয় মিলখা সিংয়ের। চতুর্থ হন ভারতীয় স্প্রিনটার। ২৫মিটারে পৌছে জিতেছেন ধরে নিয়ে স্পিড কমাতেই, পদকের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যায় মিলখার।
১৯৬২ সালেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মিলখা সিং। বিয়ে করেন ভারতীয় মহিলা ভলিবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক নির্মল কৌরকে। তাদের একটি পুত্র ও দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
২০১৩ সালে মিলখা সিংয়ের জীবনীর উপর ছবি তৈরি করেন পরিচালক ওমপ্রকাশ মেহেরা। মিলখার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ফারহান আখতার। ছবিতে তাঁর জীবন দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন মিলখা সিং।
২০১৭ সালে পৃথিবীর বিখ্যাক মিউজিয়াম মাদাম তুসো তার মূর্তি বসানো হয়। সেই মূর্তি দেখতে যান মিলখা সিং। নিজের দৌড়ানোর ভঙ্গিতে ছবিও তোলেন কিংবদন্তী দৌড়বিদ।
কিংবদন্তী অ্যাথলিটকে সম্মান জানাতে ২০১৮ সালে 'খেল রত্ন' সম্মানে সম্মানিত করা হয় মিলখা সিংকে। জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন ছিল তাঁর কাছে।
শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে ক্রীড়া, রাজনৈতিক, বিনোদন জগৎ সহ সর্ব স্তরের মানুষ।