- Home
- Sports
- Other Sports
- শাড়ির কারুকাজ ছেড়ে ভারোত্তোলন, বাঙালি রিক্সাচালকের ছেলে অচিন্ত্যই জিতে নিলেন কমনওয়েলথের তৃতীয় সোনা
শাড়ির কারুকাজ ছেড়ে ভারোত্তোলন, বাঙালি রিক্সাচালকের ছেলে অচিন্ত্যই জিতে নিলেন কমনওয়েলথের তৃতীয় সোনা
- FB
- TW
- Linkdin
কমনওয়েলথ গেমস ২০২২-এ ভারতের হয়ে তৃতীয় সোনার মেডেলটি নিয়ে এলেন এক বাঙালি। বার্মিংহ্যাম কমনওয়েলথ গেমস ২০২২-এ ভারোত্তোলনে পুরুষদের ৭৩ কেজি বিভাগে সোনা জিতে নিলেন অচিন্ত্য শিউলি৷ ২০ বছর বয়সি এই ভারোত্তলক এদিন মোট ৩১৩ কেজি ওজন তুলেছিলেন৷ স্ন্যাচ ইভেন্টে ভারতীয় ওয়েট লিফটার মিস্টার শিউলি খুব সহজে প্রথম টার্গেটেই একমাত্র প্রচেষ্টায় তুলে নিয়েছিলেন ১৩৭ কেজি ওজন৷
দ্বিতীয় চেষ্টায় তিনি ১৪০ কেজি তোলেন৷ আর তৃতীয় টার্গেটে তুলেছেন ১৪৩ কেজি ওজন৷ দ্বিতীয় চেষ্টায় তাঁর টার্গেট ছিল ১৭০কেজি৷ কিন্তু তিনি তুলতে পারেননি৷ তবে তিনি চেষ্টা ছাড়েননি৷
তারপর ক্লিন ও জার্কে প্রথম চেষ্টায় ১৬৬ কেজি তোলেন৷ তৃতীয়বারেও তিনি ১৭০ কেজিই ট্রাই করেন৷ স্ন্যাচে ১৪৩ কেজি তোলার পর তিনি সাফল্য পান৷ তিনি সোনা জিতলেন ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১৭০ কেজি এবং মোট ৩১৩ কেজি ওজন তুলে৷
একেবারে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে প্রচণ্ড কায়িক পরিশ্রম করতে করতে অলিম্পিক অবদি পৌঁছেছেন অচিন্ত্য শিউলি। সারাজীবন ভুগেছেন আর্থিক অনটনে। তাঁর বাবা রিক্সা চালাতেন। স্বল্প রোজগারে পরিবার চালানো সম্ভব ছিল না বলে পরিবারের বাকি সদস্যদেরও প্রচুর পরিশ্রম করার দরকার ছিল। বাকিরা শাড়িতে এমব্রয়ডারি অথবা লেস বসানোর কাজ করতেন।
কিন্তু, অচিন্ত্যর বয়স যখন মাত্র ৮, তখনই তাঁর বাবা প্রয়াত হন। বাড়িতে পোষা হাঁস-মুরগি থাকলেও অচিন্ত্য ছোটবেলাতেই সেলাইয়ের কাজ শিখে নিয়েছিলেন৷
হাওড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা ছেলে অচিন্ত্য শিউলি৷ সেখানেই পাড়ার এক জিমে ব্যায়াম শুরু করে দিয়েছিলেন মাত্র ১২ বছর বয়সে৷ অবশ্য তা সত্ত্বেও, সেলাইয়ের কাজ ছাড়েননি৷ তাঁর ঠাকুরদাও ভারোত্তলক ছিলেন, আর তিনিও সেলাইয়ের কাজই করতেন৷ তবে, পরিবারের চাপে নিজের শখকে নিয়ে এগোতে পারেননি।
তবে, সংসারের ভার টানতে একসময়ে শাড়ির কাজ ছেড়ে পুনের আর্মি বেস ক্যাম্পে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে পাটিয়ালার জাতীয় শিবিরে যান অচিন্ত্য। ভারোত্তোলনে হাতেখড়ি দেউলপুরের কোচ অষ্টম দাসের কাছে। ২০১৮ সালে জাতীয় মিটে রুপো জিতে উচ্চাকাঙ্ক্ষা আরও বেড়ে যায় তাঁর। ২০১৯ সালেই জিতে নিয়েছিলেন সোনা।
এশিয়ান গেমস ও কমনওয়েলথ গেমসের প্রস্তুতি নিয়েছেন পাটিয়ালাতেই। ২০২১ সালের তাসখন্দের জুনিয়র বিশ্ব মিটের ৭৩ কেজি বিভাগের ভারোত্তোলনে রুপো জিতেছিলেন এই বাঙালি। অচিন্ত্যর আগে ভারোত্তোলনে বাংলা থেকে কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতেছিলেন সুখেন দে। অচিন্ত্যর প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও কৌশলের প্রশংসা শোনা গেছে সেই সুখেনের গলাতেও।
অচিন্ত্যের এই খেলায় আসা হঠাৎ করেই৷ পাড়ায় ঘুড়ি ওড়ানোর সময় সেই ঘুড়ি কেটে গিয়ে পড়েছিল জিম সেন্টারের সামনে। ঘুড়িটি কুড়োতে গিয়ে জিমের ভেতর অনেকের সঙ্গে নিজের দাদুকেও দেখতে পেয়েছিলেন ছোট্ট অচিন্ত্য৷ তার পরেই ভারোত্তলনকে ভালবাসা।
কমনওয়েলথ গেমস ২০২২-এ সোনা জেতার পর অচিন্ত্য জানিয়েছেন, বাবা বেঁচে থাকতে মাকে কাজ করতে হত না, কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর মাকেও কাজ করা শুরু করতে হয়েছিল৷ তিনি আরও বলেন যে, জীবনটা খুবই কঠিন৷ জিমে যোগ দেওয়ার পর কাজ করা খুবই কঠিন ছিল। তার চেয়েও কঠিন ছিল তিনবেলা ঠিকমতো খাবারের জোগাড় করা।