- Home
- World News
- International News
- আফগানিস্তানে কেন ব্যর্থ হল মার্কিন সেনা, বাকি বিশ্বে এর কী প্রভাব পড়বে
আফগানিস্তানে কেন ব্যর্থ হল মার্কিন সেনা, বাকি বিশ্বে এর কী প্রভাব পড়বে
- FB
- TW
- Linkdin
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনার প্রত্যাহার, গত কয়েক দশকের মধ্যে আরও দুই পশ্চাদপসরণের কথা মনে করিয়ে দেয়। সবথেকে বিখ্যাত অবশ্যই, ভিয়েতনাম থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার। আর দ্বিতীয়টি ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান থেকেই হেরে সোভিয়েতের সরে আসা। নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারও এই পরাজয়ের তালিকায় জায়গা করে নেবে।
আফগান ভূমে সেনা পাঠানোর সময় প্রেসিডেন্ট বুশের উদ্দেশ্য ছিল, একটি স্থিতিশীল, শক্তিশালী, ও কার্যকর আফগানিস্তান গড়ে তোলা। ওবামা এসে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন, সন্ত্রাসবাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হতে দেওয়া যাবে না আফগানিস্তানকে। অর্থাৎ দুজনেই চেয়েছিলেন এমন এক আফগানিস্তান, যে কোনও ধরণের উগ্রবাদকে প্রতিরোধ করে, এমন এক স্থিতিশীল আফগানিস্তান গঠন, যা বিশ্বের, বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রশক্তিদের জন্য বিপদের কারণ হবে না। সহজ করে বললে ৯/১১-র অপরাধীদের পরাজয় এবং নির্মূলকরণ, চরমপন্থী মতাদর্শের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং তার পুনরুত্থান প্রতিরোধ নিশ্চিত করার মতো একটি আঞ্চলিক ব্যবস্থা গঠন। কিন্তু, তারা যা চেয়েছিলেন আর যা হয়েছে, তা কি এক?
কেন সফল হল না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র? তাদের সাফল্যের অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক ছিল পাকিস্তান। সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকার সহযোগী ছিল পাকিস্তান। তবে ইসলামি চরমপন্থার উত্থানের সূচনা কিন্তু হয়েছিল ১৯৮০-এর দশকে পাকিস্তানে অবস্থিত আফগান শরণার্থী শিবিরগুলি থেকেই। সেখান থেকে উত্থান তালিবানদের। পরে যুদ্ধের সময়, পুরো তালিবান নেতৃত্ব, আল-কায়েদা নেতৃত্ব আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে পাকিস্তানেই বহু বছর ধরে ঘাঁটি গেড়েছিল। এদিকে, সমুদ্রপথে করাচি এবং সেখান থেকে সড়ক পথে আফগানিস্তান - লজিস্টিক রুটের জন্য পাকিস্তানের উপর নির্ভর করতে হতো বলে, আমেরিকা কিছু বলতেও পারত না। এটাই সম্ভবত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর যা তালিবানদের দীর্ঘায়ু দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, অপ্রচলিত যুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে প্রাণহানির ক্ষতি স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু, আমেরিকা এই ক্ষেত্রে খুব বেশি ক্ষতি স্বীকার করতে রাজি ছিল না। এমনিতে মার্কিন বাহিনীর সদস্যরা মৃত্যুর ভয় পায় না। তারা দুর্দান্ত পেশাদার। কিন্তু, তাদের দেশের সমাজ রাজি নয়, রাজনৈতিক নেতারাও দেশের জনগণকে কেন এই ক্ষতিটা স্বীকার করতে হবে তা ব্যাখ্যা করতে ভয় পান। আমি বলছি না যে হতাহতের বিষয়টি বিবেচনা না করেই অভিযানে যেতে হবে। কিন্তু, তার জন্য বড় করে পরিকল্পনা করা দরকার। আর জয়লাভের জন্য পুরোপুরি প্রযুক্তির নির্ভর হলে হবে না।
এছাড়া, একটি অপ্রচলিত যুদ্ধে জয়লাভ করার ক্ষেত্রে সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়গুলির থেকেও অনেক বেশি কাজে লাগে পরিবেশ-এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, সাংস্কৃতিক ভূখণ্ডের বোঝাপড়া। তালিবানরা বুঝে গিয়েছিল, আমেরিকা ৯/১১-র প্রতিশোদ নেওয়া ছাড়া অন্যান্য লক্ষ্য অর্জনে খুব একটা সফল হবে না, তাদের আগ্রহও থাকবে না। যেমন, আফগানিস্তানের মহিলাদের অবস্থান কিন্তু এখনও আন্তর্জাতিক মহলে যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ।
এখন প্রশ্ন হল, আফগান বাহিনী কি তালিবানদের ঠেকাতে পারবে? আফগান জাতীয় সেনা (ANA) কে আমেরিকা এবং ভারত প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। কিন্তু, একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে কয়েক বছরের মধ্যেই একটি অত্যন্ত দক্ষ পেশাদার বাহিনী তৈরি হবে তা আশা করা অবাস্তব। আফগান বাহিনীর সাহসের অভাব নেই, কিন্তু মাঝারি থেকে উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা ছাড়া পেশাদার বাহিনী তৈরি হতে পারে না। তার থেকেও বড় কথা হল, তাদের উপর আস্থা রেখে তাদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রও তুলে দেওয়া যায় না। বিদেশী শক্তিরা ভয় পায়, একসময় তালিবানরাই এই সমস্ত সামরিক সরঞ্জাম দখল করে তাদেরই বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে।
আফগান বাহিনীকে সহায়তা করার মতো ব্যবস্থাও তৈরি করতে পারছে না আমেরিকা। সেনা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ক্রমশ এগিয়ে আসছে। একে একে মার্কিন সেনা ঘাঁটিগুলি তুলে দেওয়া হচ্ছে আফগান বাহিনীর হাতে। আফগাান সেনাবাহিনীকে আকাশপথে সহায়তা করার জন্য মার্কিন সশস্ত্র কিছু ড্রোন ও আরও কিছু সামরিক সরঞ্জাম পাকিস্তানের কোনও বিমান ঘাঁটিতে রাখার জন্য চুক্তি করতে চেয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু, এখনও পাকিস্তানের দিক থেকে কোনও সাড়া পায়নি।
তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে রাখার সঙ্গে সঙ্গে এখ অন্য আগ্রহের বিষয়, আমেরিকা এবং পশ্চিমীর শক্তিগুলির বিদায়ের পর অন্যান্য বিদেশি শক্তি বিশেষ করে চিন ও রাশিয়ার কী ভূমিকা হবে? এছাড়া ইরান ও পাকিস্তানেরও স্থানীয় স্বার্থ রয়েছে। আর রয়েছে ভারত। সবাই এখন অপেক্ষা করছে আর দেখছে।