রাজনীতিতে আসার আগে কী করতেন দিলীপ ঘোষ, জানুন 'বিজেপি সেনাপতির' আসল কাহিনি
First Published Feb 6, 2021, 12:21 PM IST
রাজ্যে বিজেপির উত্থানের অন্যতম কাণ্ডারি তিনি। দলের সংগঠন বৃদ্ধি থেকে কর্মীদের মধ্যে লড়াইয়ের মনোভাব জাগানোয় তার জুড়ি মেলা ভার। চাচাছোলা ভাষায় আক্রমণে থেকে চোখে তোখ রেখে লড়াই। তার বক্তব্যে বিতর্কও কম হয়নি। তিনি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রাজনীতির কেরিয়ারে য়ে দ্রুগতিতে উত্থান হয়েছে দিলীপ ঘোষের, তার জুরি মেলা সত্যিই কঠিন। কিন্তু রাজনীতিতে আসার আগে কী করতেন দিলীপ ঘোষ, কেমন ছিল তার জীবন, কেনই বা চাকরি ছেড়েছিলেন তিনি। বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে জেনে নিন দিলীপ ঘোষ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য।

১৯৬৪ সালের ১ অগাস্ট পশ্চিম মেদিনীপুর এর সুবর্ণরেখা নদী ঘেরা সুন্দর ছবির মতন একটি গ্রাম কুলিয়ানায় জন্ম গ্রহণ করেন দিলীপ ঘোষ। র্গীয় ভোলানাথ ঘোষ ও পুস্পলতা দেবীর চার সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় পুত্র হলেন বর্তমান বিজেপির সেনাপতি।

ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন শান্ত সাহসী এবং বন্ধুবৎসল। গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি মামাবাড়িতে থেকে তার স্কুলজীবন শেষ করেন। ছোটবেলা থেকেই মানুষের সেবা করার প্রতি তার আগ্রহ ছিল উদাহরন দেবার মতন।

দিলীপ ঘোষ এর প্রাথমিক পড়াশোনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা গোপিবল্লবপুরে, তার পর ঝাড়গ্রাম পলিটেকনিক কলেজ। পড়াশোনা শেষ করে ২ বছর কাজ ও করেন শিক্ষানবিশ হিসেবে মহেন্দ্রা অ্যান্ড মহেন্দ্রা কম্পানিতে।

স্কুল জীবনের পড়াশোনা শেষ হতেই ১৯৮৪ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সদস্য হয়েছিলেন। মানুষের সেবা করা ও তাদের পাশে থাকাই ছিল। সেই সময় থেকেই একনিষ্ঠভাবে আরএসএসের হয়ে কাজ করা শুরু করেন তিনি।

মানুষের হয়ে কাজ করার বাসনার কারণে চাকরি জীবনে বেশি দিন নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি তিনি। চাকরি ছাড়ার পর আরএসএসের সম্পূর্ণ সময়ের সদস্য হিসবে কাজ করা শুরু করেন দিলীপ ঘোষ।

পরবর্তীতে তার কাজে খুশি হয়ে আরএসএসের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। দিলীপ ঘোষ প্রাক্তন আরএসএস প্রধান কে এস সুদর্শনের সহকারী হিসেবেও কাজ করেছেন।

২০১৪ সালে আরএসএসথেকে বিজেপিতে যোগ দেন দিলীপ ঘোষ। সরাসরি রাজনীতিতে সেই নিজের রাজ্যে ফিরে আসেন তিনি। বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন দিলীপ।

বিজেপিতে যোগ দিয়েই নিজের কর্মদক্ষতা প্রমাণ করেন তিনি। রাজ্যে বিজেপির সংগঠন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন তিনি। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ২০১৫ সালে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি হিসাবে নিযুক্ত হন দিলীপ ঘোষ।

২০১৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে দিলীপ ঘোষ তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জ্ঞান সিং সোহানপাল (কংগ্রেস) পরাজিত করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়গপুর সদর আসন থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন।

মনে রাখার মতো বিষয়, ১৯৮২ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের জ্ঞান সিং সোহানপাল টানা সাতবার খড়গপুর সদর আসনে জিতে এসেছেন। দিলীপ ঘোষের মতো আনকোড়া রাজনীতিবিদের পক্ষে এমন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদকে পরাজিত করা সত্যিই ইতিহাস সৃষ্টিকারী ঘটনা।

২০১৭ সাল থেকে রাজ্যে বিজেপির শক্তি ও সংগঠন যে দ্রুত গতিতে বেড়েছে তার অন্যতম কারিগর হলেন দিলীপ ঘোষ। রাজ্যে বিজেপির সেনাপতির দায়িত্ব সিদ্ধ হস্তে পালন করেছেন তিনি।

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে পার্টি তাকে মেদিনীপুর আসন থেকে টিকিট দেয়। সেই নির্বাচনে তৃণমূলের মানস ভুঁইয়ার মত হেভিওয়েট রাজনীতবিদকে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন দিলীপ ঘোষ।

সামনেই রাজ্যের বিধাসভা নির্বাচন। বাংলায় প্রথমবার ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে নির্বাচন লড়ছে বিজেপি। পদ্ম শিবিরকে নির্বাচনী বৈতরনী পার করতে যে সকল নেতারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের মধ্যে অন্যতম দিলীপ ঘোষ।

তবে দিলীপ ঘোষের আক্রমণাত্বক রাজনীতি নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। চাচাছোলা ভাষায় বিরোধীদের আক্রমণ, সোজাসাপটা কথা, একাধিক বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে বারবার শিরোনামে এসেছেন দিলীপ ঘোষ।

তবে এসব নিয়ে থোরাই কেয়ার বিজেপি রাজ্য সভাপতির। খুব কম সময়ের মধ্যে নিজস্ব ভঙ্গিতে রাজনীতি করে বাংলার রাজনীতিতে যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন দিলীপ ঘোষ সেই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
Today's Poll
অভিভাবক হিসাবে আপনার সন্তানের জন্য অনলাইনে কোন ক্লাসের এডুকেশনাল কনটেন্ট পেতে চান ?