- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- তৃণমূল থেকে বিজেপি গিয়েও অব্যাহত 'মুকুল ম্যাজিক', ২০ বছর পর আবার ভোট যুদ্ধে আসছেন তিনি
তৃণমূল থেকে বিজেপি গিয়েও অব্যাহত 'মুকুল ম্যাজিক', ২০ বছর পর আবার ভোট যুদ্ধে আসছেন তিনি
দক্ষ সংগঠক হিসেবে বরাবরই পরিচিত রাজ্য রাজনীতিত। তিনি বিজেপি নেতা মুকুল রায়। একটা সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের প্রথম সৈনিক ছিলেন তিনি। দলবদল করে এখন তিনি গেরুয়া শিবিরে। বিজেপির অন্দরের খবর ২০১৯ বিজেপির সফল্যের পিছনেও ছিল মুকুল রায়ের কামাল। তাঁকেই এবার বিধানসভা ভোটে প্রার্থী করতে চলেছে মুকুল রায়।
- FB
- TW
- Linkdin
৬৬ বছরের মুকুল রায়। রাজ্যরাজনীতিতে পরিচিত নাম। তৃণমূল কংগ্রেস থেকে শিবির বদল করে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেও অনুগামী বা সমর্থকদের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা খুন্ন হয়নি। বর্তমানে তিনি বিজেপির শীর্ষ নেতাদেরও ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগত সৈনিক ছিলেন। একটা সময় তাঁর সম্পর্কে বলা হত তৃণমূলের সংগঠনকে নিজের হাতের তালুর মতই চেনেন তিনি। নিজেকে কিং বা কুইন মেকার হিসেবেই দেখতেই অভ্যস্ত। ২০১১ সালে ৩৪ বছরের বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে তৃণমূলের লালবাড়ি দখল নন্দীগ্রাম সিঙ্গুর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টানা অনশন যদি ফ্যাক্টর হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর মুকুল রায়।
সিপিএম-এর ভোট মেশিনারি দক্ষ সংগঠনের সঙ্গে লড়াই করে ভোট বাক্সে সাফল্য আনার অন্যতম কারিগর ছিলেন মুকুল রায়। শুধু এই রাজ্যে নয়। ত্রিপুরা ও অসমেও মুকুল রায় তাঁর ম্যাজিক দেখিয়েছেন। তৃণমূলের সংগঠক হিসেবে দলের সংগঠন এই দুই রাজ্যেই ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।
ত্রিপুরা ও অসমের বেশ কয়েকজন কংগ্রেস জনপ্রতিনিধি সেই সময় দলবদল করে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছিলেন। তৃণমূল ঘনিষ্টদের কথায় এই দলবদলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন মুকুল রায়। যদিও পরবর্তীকালে সেখানে সংগঠন বাড়াতে তেমন সক্ষম হয়নি তৃণমূল।
তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন মুকুল রায়। হয়েছিলেন রেলমন্ত্রীও। কিন্তু নারদকাণ্ডে তাঁর নাম জড়়িয়েগিয়েছিল। তদন্তকারী সংস্থার জেরার মুখেও পড়তে হয়েছিল মুকুল রায়কে। একটা সময় রাজ্যের দায়িত্বে থাকা সিদ্ধার্থ নাথ সিং কটাক্ষ করে একাধিক জনসভা বলেছিলেন 'ভাগ মুকুল ভাগ'। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। বর্তমানে মুকুল রায় দলবদল করে বিজেপি শিবিরে যোগ দিয়েছেন।
দলবদল করেও মুকুল রায়ে অব্যাহত রেখেছেন মুকুল ম্যাজিক। তাঁর হাত ধরেই তৃণমূল শিবির ছেড়ে একে এক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন সব্যসাচী দত্ত, শুভেন্দু অধিকারীর মত প্রথম সারির তৃণমূল নেতারা। ভোটের মুখে দাঁড়িয়েও তৃণমূলের ভাঙন অব্যাহত। বর্তমান মুকুল রায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদেরও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছেন। কৈলাস বিজয়বর্গীয় অত্যন্ত স্নেহভাজন তিনি। রাজ্য বিজেপিতেও ধীরে ধীরে প্রভাব বাড়ছে তাঁর।
নন্দুকেরা অনেকেই বলেন বিজেপি রাজ্য়সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে মুকুল রায়ের তেমন সখ্যতা নেই। তবে রাজ্যের দুই প্রধান নেতা এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেননি। একাধিকবার তাঁকে একসঙ্গে দেখাও গেছে।
বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী করা হচ্ছে বলেই বিজেপি সূত্রের খবর। আর তাঁকে প্রার্থী করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং অমিত শাহ। আর সেই কারণেই মুকুল রায়কে তলব করা হয়েছিল দিল্লিতে। যদিও ভোট ময়দানে তেমন স্বাচ্ছন্দ্য নন মুকুল রায়। প্রথম দিকে তিনি ভোটে দাঁড়াতেও চাননি।
সূত্রের খবর তাঁকে প্রার্থী করা হচ্ছে নদিয়া কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের। লোসসভা নির্বাচনে নদিয়ায় রীতিমত সাফল্য পেয়েছিল বিজেপি। সেই সাফল্যই ধরে রাখতে পদ্ম শিবিরের হাতিয়ার মুকুল রায়। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন উত্তর ২৪ পরগনার মতই নদিয়াতেও যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে মুকুল রায়ের। আর সেই কারণেই তাঁকে প্রার্থী করা হচ্ছে।
প্রথমে মুকুল রায়কে কৃষ্ণনগর দক্ষিণ কেন্দ্রের প্রার্থী করার চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল। সূত্রের খবর পরবর্তীকালে স্থির হয় মুকুলকে প্রার্থী করা হবে উত্তর কেন্দ্রের। কারণ লোকসভা ভোটের নিরিখে এই আসনি অনেক বেশি নিরাপদ। এখানে মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূলের অভিনেত্রী প্রার্থী কৌশামি মুখোপাধ্য়ায়। বিজেপি মনে করছেন পোরখাওয়ার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মুকুল রায় এই কেন্দ্র থেকে অ্য়াডভানটেজ বেশি পাবেন।
পুরুলিয়াতে প্রধানমন্ত্রীর সভায় উপস্থিত থাকবেন মুকুল রায়। সূত্রের খবর সেখানেও প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। মুকুল ঘনিষ্টদের কথায় বিজেপির শীর্ষ নেতাদের প্রস্তাব পাওয়ার পরে তিনি প্রার্থী হওয়ার বিষয় তেমন আপত্তি জানাননি। যদিও ২০০১ সালে তৃণমূলের টিকিটে তিনি জগদ্দল বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছিলেন। সেই সময় বাম প্রার্থীর কাছে হেরে যান। প্রায়. ২০ বছর পর আবারও ভোট যুদ্ধে সামনের সারিতে আসছেন তিনি। এখন দেখার বিষয় বিজেপি তাঁকে বিধানসভায় নিয়ে যেতে পারে কিনা ?