- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- ফলাফল যাই হোক, রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁকের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ফলাফল যাই হোক, রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁকের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
- FB
- TW
- Linkdin
রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁকের মুখে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্রিগেডে সিপিএমের মৃত্যুঘণ্টা বাজানোর কথা কেউ ভুলে যাননি। কেউ ভোলেনি আরেক নির্বাচনে 'এবার, নয়তো নেভার' স্লোগানের কথা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিরোধী আসনে থাকাকালীন বিভিন্ন ভাবে প্রচারকে উত্তুঙ্গে নিয়ে যেতে কখনওই পিছপা হননি। কখনও তিনি মহাকরণের অলিন্দে পৌঁছে গিয়েছেন, তাঁর কথায় এক ধর্ষিতা মহিলাকে নিয়ে। লাঠি খেয়েছেন, ব্যান্ডেজ নিয়ে সভা করেছেন। যুব কংগ্রেসের ফায়ারব্র্যান্ড নেত্রী তাঁর রাজনৈতিক সময়কালকে নিজের মত করে চিহ্নিত করে রাখতে চেয়েছেন, এবং তাঁর সমর্থক বা বিরোধী, সকলেই স্বীকার করতে বাধ্য যে তাতে তিনি সফলও হয়েছেন।
২০১১ সালের বিধানসভা ভোট তাঁর কাছে ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৬ সালের অমোঘ বাণী, আমরা '২৩০ ওরা ৩০'-এর পরের পাঁচ বছর ওই খাতেই বইতে থেকেছিল সিপিএম তথা বামফ্রন্টের শাসন-মনোভাব। আর তার ফায়দা লুটছিলেন মমতা, পৌঁছে গিয়েছিলেন সরকার বিরোধী যে কোনও আন্দোলনে। সিঙ্গুর ছিল বামফ্রন্টের শেষের শুরু, আর নন্দীগ্রাম ছিল বাম কফিনের শেষ পেরেক। একটুও অতিকথন হবে না, যদি বলা হয়, মমতা তখন ছিলেন ক্ল্যাসিকাল বামপন্থী ভূমিকায়, সমস্ত বিক্ষোভকে তিনি বিদ্রোহের রূপ দিতে সমর্থ হচ্ছিলেন, অবশ্যই অন্যদের সহযোগিতায়।
সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রাম, কোনও আন্দোলনই মমতা বা তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস শুরু করেনি। যাঁরা আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তাঁরা নিজেদের তাগিদে, সংসদে ও কলকাতা-দিল্লিতে বাম সরকারের ভূমিকা প্রকাশ্যে আনতে মমতাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন। আর মমতা দক্ষ সংসদীয় রাজনীতিবিদের মতই, এই আন্দোলনগুলিকে কাজে লাগিয়েছিলেন বামফ্রন্টকে উৎখাত করে তৃণমূল শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে। সেইবার মমতা ভোটে দাঁড়াননি। প্রচারে গিয়ে বলেছিলেন, সব আসনেই তিনিই প্রার্থী। সেটাই পরবর্তীকালে হয়ে দাঁড়ায় তাঁর ও তৃণমূলে লব্জ। এই ওয়ান ওম্যান শো - তৃণমূলের রাজনীতির মূল কথা, সে শাসনকালেই হোক বা বিরোধী আসনে থাকাকালীন।
কিন্তু, মমতা বামফ্রন্টের বিকল্প নন, এমনকী বামফ্রন্ট সরকারের বিকল্পও নয় তৃণমূল সরকার। মনে রাখতে হবে, ২০১১ সালে মমতা শুধু নিজের জোরে ভোটে জেতেননি। বহু মানুষ তাঁর পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, যাঁরা স্রেফ বাম সরকারের উৎখাত চেয়েছিলেন বীতশ্রদ্ধ হয়ে। ২০১৬-র ভোটে, মমতার জয় কার্যত বিরোধীশূন্য অবস্থায়। ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর বামেরা উপলব্ধিই করতে পারেনি, ক্ষমতায় না থাকলে বিরোধী হিসেবে তাদের ভূমিকা কী হওয়া উচিত। ফলে মমতা কার্যত ওয়াকওভারই পেয়েছিলেন।
পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের সময় থেকে। ঠিক ১০ বছর আগে, ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় থেকে যেমন গণেশ ওল্টাতে শুরু করেছিল বামেদের। বিরোধীশূন্য বাংলার পরিস্থিতি, আর দেশে ইতিমধ্যে কাটিয়ে ফেলা পাঁচ বছরের কেন্দ্রীয় সরকারে থাকা, এই দুয়ের সুযোগ নিয়ে বাংলাতে জাঁকিয়ে বসতে থাকে গেরুয়াশিবির। ১৮টি আসন পেয়ে বিজেপি চমকে দেয় এমনকী নিজেদেরও।
মমতা প্রমাদ গুণেছেন, এ কথা স্পষ্ট। কারণ এবার তাঁকে অনেক বিরোধিতা সামলাতে হবে। সামলাতে হবে বিজেপি আরএসএস-এর দক্ষ সংগঠন। এবং সামলাতে হবে অন্দরমহলের ক্ষোভ। পরিযায়ী পাখিদের মতই বিজেপিতে চলে যাচ্ছেন তাঁর দলের নেতানেত্রীরা। মমতা এবার অনেকটাই একা। অনেকটাই, তবে সবটা নয়। বিজেপি বিরোধী বেশ কিছু মঞ্চ তৈরি হয়েছে, যাদের সুবাদে মমতা বেশ কিছু ভোট পাবেন, যেমন পেয়েছিলেন ২০১১ সালে। কিন্তু অ্যান্টি ইনকামবেন্সি ফ্যাক্টরও তাঁকে সামলাতে হবে, যা ২০১১ সালে তাঁর পক্ষে ছিল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ১০ বছর শাসনকাল কাটিয়ে নেবার পর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক লড়াইয়ের মুখোমুখি। আশা করা যায়, ভবিষ্যৎ আত্মজীবনীতে তিনি এ কথা স্বীকার করে নেবেন।