- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- মমতা, আব্বাস না বিজেপি - কোথায় যাবে মুসলিম ভোট, বাংলার নির্বাচনে এবার সবথেকে বড় ধাঁধা
মমতা, আব্বাস না বিজেপি - কোথায় যাবে মুসলিম ভোট, বাংলার নির্বাচনে এবার সবথেকে বড় ধাঁধা
শেষ বার ভারতে জনগণনা হয়েছিল ২০১১ সালে। সেই সময়ের তথ্য অনুসারে বাংলার জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ মুসলিম। গত ১০ বছরের এই সংখ্যাটা আরেকটু বেড়ে ৩০ শতাংশ হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট ২০১১ সালের আগে পর্যন্ত বামেদের সঙ্গেই ছিল। তারপর থেকে গত লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত এই ভোট সংঘবদ্ধ হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের ঘরেই। ভোট দিলেও মমতার কাজে যে মুসলিম সমাজ সন্তুষ্ট, তা কিন্তু বলা যাবে না। এর মধ্যে উত্থান ঘটেছে আব্বাস সিদ্দিকীর আইএসএফ-এর। কাজেই এইবারের ভোটে মুসলিম ভোট কাদের সঙ্গে থাকবে, এই প্রশ্নটা বেশ জটিল হয়ে উঠেছে।
| Published : Mar 22 2021, 08:13 PM IST / Updated: Mar 22 2021, 08:39 PM IST
- FB
- TW
- Linkdin
নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময়, অন্যান্য সকলের মতো মুসলমানরাও জমিও হারানোর ভয় পেয়েছিলেন। তাই ২০১১ সালে তারা দুহাত ভরে মমতাকে সমর্থন করেছিল। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও মমতার গদি বাঁচিয়েছিল মুসলিম ভোটই, এমনটাই মনে করেন ভোট বিশ্লেষকরা। ২৯৪ টি আসনের মধ্যে ২১১ টি আসনে জয় পেয়েছিল তৃণমূল। এরমধ্যে ৯৮ টি আসনেই জয় এসেছিল মুসলিম ভোটের কারণে। এই আসনগুলিতে মুসলিম ভোটারের সংখ্যা ছিল মোট ভোটারের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ, আর এই অংশটাই তফাত গড়ে দিয়েছিল ওইসব আসনে।
তবে, বারবার ভোট দিলেও মমতা সরকারের কাজে যে তারা সন্তুষ্ট, এমনটা নয়। বছরের পর বছর ধরে, মমতা মৌলবি ও মুয়াজ্জিনদের ভাতা দিয়েছেন, কিন্তু, আপামর মুসলিম সমাজের জন্য তেমন কিছুই করেননি, এমনটাই মনে করছেন রাজ্যের মুসলমানরা। শিক্ষার অভাব, কাজের অভাব, জীবনযাত্রার অনুন্নত মান, সামাজিক ন্যায়বিচার, তাদের আকাঙ্ক্ষা না মেটা, নীতি নির্ধারণে মুসলিম প্রতিনিধিত্বের অভাবের মতো বিষয়গুলি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগের অভাবে তারা শুধু হতাশই নন, বেশ ক্ষুব্ধ।
তবে তা সত্ত্বেও মুসলমান সম্প্রদায় এবারের ভোটেও তৃমমূল কংগ্রেসকে ভোট দিতে পারেন, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। বিজেপির বিকল্প হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই কার্যকরি বলে মনে করছিলেন তাঁরা। তৃণমূলের কাছথেকে প্রত্যাশা মতো কাজ না পাওয়ায় তারা হতাশ, তারা ক্ষুব্ধ। কিন্তু, তারপরেও তাদের মনে কাজ করছে এনআরসির ভয়। বিজেপি সরকারে এলে অসমের মতো বন্দি শিবির বা আরও খারাপ কিছু পরিণতি হবে, বলে তাদের আশঙ্কা। আর সেই রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের বাঁচাবেন, এমনটাই মনে করছিল মুসলিম সমাজ।
খেলাটা অনেকটাই বদলে দিয়েছেন আব্বাস সিদ্দিকী ও তাঁর দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ। ভাইজান একই সঙ্গে বিজেপির হাত থেকে রক্ষা করবেন, সেইসঙ্গে তাঁদের প্রতিনিধি হয়ে সরকারের কাছ থেকে তাঁদের জন্য দাবি দাওয়া নিয়ে দর কষাকষি করবেন - এমনটাই প্রত্যাশা করছেন অনেকে। তবে, আব্বাসের প্রভাব গোটা বাংলায় রয়েছে, এমনটা নয়। দক্ষিণবঙ্গের গ্রামীণ অঞ্চলে, তথাকথিত নিম্ন বর্ণ ও শ্রেণীর মুসলমানদের, যেখানে চাকরি ও সামাজিক ন্যায়বিচারের চাহিদা আছে, সেইসবব এলাকায় তাঁর প্রভাব কোনওভাাবেই অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু, উত্তরবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, মালদা, বা দুই দিনাজপুরের মতো জেলায় মুসলমান ভোট কংগ্রেস এবং তৃণমূলের মধ্যে বিভক্ত। আব্বাসের সেখানে তেমন প্রভাব নেই।
তবে, মুসলিম প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে আব্বাস সিদ্দিকীকে কেন্দ্র করে নতুন আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এতদিন, কী বাম কি তৃণমূল, কোনও দলেই সেই অর্থে মুসলিম প্রতিনিধিত্ব ছিল না। তৃণমূল সরকারের জনকল্যানমূলক প্রকল্পের সুবিধা সকলের মতো মুসলমানরাও পেয়েছেন। কিন্তু, মমতার দলে বা সরকারে - কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদেই নেই কোনও মুসলমান মুখ। নীতি নির্ধারণের জায়গায়, নেই এই সম্প্রদায়ের কোনও প্রতিনিধিত্ব। আর সেই জায়গাতেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন আব্বাস। মুসলমানরা আর নিছক ভোট ব্যাঙ্ক হয়ে থাকতে চাইছেন না। তাঁরাও চাইছেন কন্ঠস্বর।
আইএসএফ যে তাদের মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে কিছুটা হলেও ভাগ বসাবে, তা স্বীকার করেই নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে তাতে তৃণমূলের নির্বাচনী ভাগ্যের ক্ষেত্রে কোনও তাত্পর্যপূর্ণ অদল বদল ঘটবে না বলেই দাবি তাদের। তৃণমূল নেতা সৌগত রায় সাফ জানিয়েছেন, রাজ্য জুড়ে আব্বাস সিদ্দিকীর কোনও প্রভাব নেই এবং নির্বাচনকেও তিনি প্রভাবিত করতে পারবেন না। তাঁর মতে তিনি ভোট কাটুয়া হয়েই থাকবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুসলিম তোষণ করেন, এটাও তিনি মানতে চাননি। তাঁর মতে, মমতা উর্দু ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ভাতা দিয়েছেন বলেই এই অভিযোগ তুলেছে। বিজেপি। তুষ্টিকরণের অভিযোগ আসলে বিজেপির মিথ্য়া বয়ান, এমনই দাবি তাঁর।
এরমধ্যে আবার রয়েছে এআইমিম। মুর্শিদাবাদের ২০টি আসনে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। আব্বাস সিদ্দিকীর যা প্রভাব, সবই বাংলাভাষী মুসলিমদের মধ্যে। মুর্শিদাবাদের মতো সীমান্তবর্তী জেলায় আবার একটা বড় অংশ হিন্দিভাষী মুসলমান। তাঁদের একটা অংশের সমর্থন পেতে পারেন ওয়াইসি, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
বিজেপির লক্ষ্য ২০০-র বেশি আসন পাওয়া। প্রধানমন্ত্রী মোদী যতই সবকা বিশ্বাস-এর স্লোগান তুলুন না কেন, সিএএ আইন পাস এবং এনআরসি-র জুজুতে মুসলমানরা বিজেপি-কে ভোট দেবে না, এটা গেরুয়া শিবির ধরেই নিয়েছে। কাজেই রাজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট একরকম ছেড়ে দিয়েই লড়াইয়ে নামছে তারা। বাকি ৭০ শতাংশের মধ্যে তফসিলি জাতি (২৩ শতাংশ), জনজাতি (৫ শতাংশ) এবং অন্যান্য অনগ্রসর জাতি (১৭ শতাংশ)-কে নিশানা করেছে তারা। এরমধ্যে মুসলিম ভোটের জন্য কোথাও তৃণমূল-আইএসএফ, কোথাও তৃণমূল-এআইমিম আবার কোথাও তৃণমূল-এআইমিম যুদ্ধ হলে, তার ফায়দা পাবে গেরুয়া শিবিরই। তবে তিন তালাক আইনের মতো মানবিক পদক্ষেপের জন্য মুসলিম ঘরের মহিলারা বিজেপিকে ভোট দিতে পারেন, এমন একটা সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।