- Home
- West Bengal
- West Bengal News
- দলবদলুদের ভোট দেয় না বাংলা, শুভেন্দু-রাজীবদের জন্যই কি মার খাবে বিজেপির জয়ের স্বপ্ন
দলবদলুদের ভোট দেয় না বাংলা, শুভেন্দু-রাজীবদের জন্যই কি মার খাবে বিজেপির জয়ের স্বপ্ন
প্রথম দফা ভোট হয়ে যাওয়ার পরও থামছে না বিজেপির প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ। বিভিন্ন জায়গাতেই তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপি-তে আসা নেতাদের প্রার্থী করেছে গেরুয়া শিবির। এমনকী একমাস, কিংবা মাত্র কয়েকদিন আগে বিজেপি শিবিরে আসা ব্যক্তিরাও টিকিট পেয়েছেন। আর তাই নিয়েই জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিজেপির পুরোনো নেতা-কর্মীরা। কিন্তু, এই দলবদলু নেতারা কি ভোট পাবেন? দলবদলুদের দাঁড় করিয়ে কি ক্ষতি হবে বিজেপির, না লাভ হবে?
- FB
- TW
- Linkdin
শুভেন্দু অধিকারী-শিশির অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সোনালী গুহ - তৃণমূল থেকে একের পর এক হেভিওয়েট নেতাদের জন্য দরজা হাট করে খুলে দিয়েছে বিজেপি। নির্বাচনের ঠিক আগে অন্তত ৩৯ জন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে এসেছেন। তাদের মধ্যে ১৩ জন এবার টিকিট পেয়েছে। তবে তৃণমূল থেকে শুধু নয়, বিভিন্ন বিরোধী দল থেকেই নেতাদের ভাঙিয়ে এনেছেন। সব মিলিয়ে বিজেপি বিভিন্ন দল আসা প্রায় ৪৬ জন দলবদলু বিধায়ককে এবার টিকিট দিয়েছে। এদের মধ্যে ৩৬ জনই গত ছয় মাসের মধ্য়েই দল বদলেছেন।
শুধু বিজেপি যে বিজেপি দলবদলুদের টিকিট দিয়েছে তা নয়। তৃণমূল কংগ্রেসও ২০২১ সালের বিধানসভায় প্রায় ১৬ জন দলবদলু নেতাকে ভোটের ময়দানে নামিয়েছে। তবে বলাই বাহুল্য এই সংখ্যাটা বেশি পদ্ম শিবিরেই।
এই কৌশলের কারণে তীব্র সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে বিজেপিকে। রাজ্যের সর্বত্র দলীয় কর্মীরা অনুগত সেনাদের সরিয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতাদের ভোটের টিকিট দেওযা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কাজেই দলবদলুদের টিকিট দিয়ে বিজেপি, বাংলায় ২০০-রও বেশি আসনে জয়ের লক্ষ্যে কতদূর এগোতে পারবে তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
২০১৬ সালের নির্বাচনে সব দল মিলিয়ে মাত্র ২৭ জন দলবদলু ভোটে লড়েছিলেন, জিতেছিলেন মাত্র ১২ জন। অর্থাৎ, ৫০ শতাংশেরও কম প্রার্থী জয় পেয়েছিলেন। শুধু গত বিধানসভা নির্বাচনেই নয়, পরিসংখ্যান বলছে, ২০০১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত বঙ্গের ভোটের ময়দানে ১৯৮ জন দলবদলু প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এঁদের মধ্যে জয়ী হয়েছেন মাত্র ৬৭ জন। অর্থাৎ মাত্র ৩৩.৮৩ শতাংশ প্রার্থী দল বদলেও বাংলার মাটিতে সফল হয়েছেন। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রবল বাম সরকার বিরোধী হাওয়ার মধ্যেও বিরোধী দলের হয়ে দাঁড়িয়ে ২১জন দলবদলু নেতার মধ্যে জিতেছিলেন মাত্র ৮জন। অর্থাৎ বাংলার ভোটাররা সাধারণভাবে দলবদলু বিরোধী - বোঝাই যাচ্ছে।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন বাংলার ভোটারদের মানসিকতায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। যার জোরেই দলবদলুদের মাঠে নামালেও বিশেষ অসুবিধা হবে না বিজেপির। প্রথমত, বাংলার রাজনীতি আগে ছিল দলভিত্তিক, পার্টিজান সমাজ ছিল। এখন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা যেভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন, তাতে বাংলার রাজনীতি এখন নেতা ভিত্তিক। কাজেই, শুভেন্দু, রাজীবরা দল ছাড়ায়, তাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা মুখ ফেরাননি, বরং তাঁদের সঙ্গেই নতুন দলে মিশে গিয়েছেন।
এছাড়া, বিজেপির প্রচারে 'গদ্দার' ঠিক কে, সেই বিষয়টিই নিয়েই এখন মানুষের মনে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। প্রত্যেক সভা থেকেই মমতা এবং তৃণমূলের অন্যান্য নেতারা শুভেন্দু-রাজীবদের গদ্দার, বিশ্বাসঘাতকের মতো বিশেষণে দেগে দিচ্ছেন। কিন্তু, বিজেপির কেন্দ্রীয় থেকে স্থানীয় নেতারা সমানে প্রচার করে যাচ্ছেন, আসল গদ্দার মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসই। মানুষের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণের পাশ থেকে সরে এসেছেন দিদি। প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় 'সকলের দিদি থেকে শুধু একজন ভাইপোর পিসি' হয়ে গিয়েছেন তিনি।