সংক্ষিপ্ত

কুম্ভকর্ণ একটানা ৬ মাস ঘুমাতেন, পুরখারাম ঘুমান ২৫ দিন। রাজস্থানের এই ব্যক্তি স্নান-খাওয়া সবই করেন ঘুমের মধ্যেই।

পুরাণ অনুযায়ী রাবণ রাজার ভাই কুম্ভকর্ণ একটানা ৬ মাস ঘুমোতেন। কুম্ভকর্ণকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন পশ্চিম রাজস্থানের নাগৌর জেলার ভাদওয়া গ্রামের বাসিন্দা পুরখারাম। বছরের ৩০০ দিনই ঘুমিয়ে থাকেন  ৪২ বছরের এই ব্যক্তি। এমনকী, স্নান, খাওয়ার মতো দৈনন্দিন কাজকর্মও তিনি করেন ঘুমের মধ্যেই। বলা ভাল, তাঁর বাড়ির লোক করিয়ে দেয়। আর এই ঘুমের কারণেই গ্রামবাসীরা পুরখারামকে 'বাস্তবের কুম্ভকর্ণ' বলে ডাকেন।

অধিকাংশ মানুষই দিনে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমান। কেউ কেউ হয়তো তার থেকে একটু বেশি। কিন্তু, পুরখারাম একবার ঘুমিয়ে পড়লে, তাঁর ঘুম ভাঙানো কিন। ২৫ দিনের আগে ভাঙে না। আসলে তিনি এক্সিস হাইপারসমনিয়া নামে মস্তিষ্কের এক বিরল ব্যাধিতে ভুগছেন। গবেষণা অনুসারে, টিএনএফ-আলফা প্রক্রিয়া অর্থাৎ মস্তিষ্কের প্রোটিনে পরিমাণের ওঠানামার কারণে ঘটে এক্সিস হাইপারসমনিয়া। আর এই রোগে মস্তিষ্ক সবসময়ই ক্লান্ত বোধ করে বলেই, রোগীরা যে কোনও সময় ঘুমিয়ে পড়েন এবং তাদের ঘুম সহজে ভাঙে না।

২৩ বছর আগে প্রথম জানা গিয়েছিল পুরখারাম এই বিরল ব্যাধিতে ভুগছেন। সেই সময় তিনি দিনে ১৫-১৬ ঘন্টা ঘুমাতেন। তাই ততটাও সমস্যা হয়নি। কিন্তু, ২০১৫ সালের পর থেকে তাঁর এই ঘুম-রোগ ক্রমে বাড়তে থাকে। প্রথমে আরও কয়েক ঘন্টা বেড়েছিল, তারপর তা গিয়ে দাঁড়ায় কয়েক দিনে। বর্তমানে তিনি একবার ঘুমিয়ে পড়লে একটানা ২০ থেকে ২৫ দিন ঘুমান। আর এই রোগের বড় প্রভাব পড়ছে তাঁর জীবন যাপনেও। তাঁর একটা মুদির দোকান আছে। কিন্তু, দোকানে তিনি বসতে পারেন, বড়জোর মাসে ৪-৫ দিন। তাও অনেক সময় দোকান চালাতে চালাতেই ঘুমিয়ে পড়েন।

এর জন্য নিয়মিত ওষুধ খান পুরখারাম। তিনি জানিয়েছেন, ওষুধপত্র খেয়ে এবং এত বেশি সময় ধরে ঘুমানো সত্ত্বেও, বেশিরভাগ সময়ই তাঁর ক্লান্ত লাগে, ঘুম পায়। কোনও কাজই করতে পারেন না। এছাড়া, জেগে থাকার সময়টায় মাথা ব্যথাও তাঁর সব সময়ের সঙ্গী।

অথচ, একা সময় ঘুম একটু বেশি হলেও স্বাভাবিক জীবনযাপনই করতেন এই রাজস্থানের কুম্ভকর্ণ। পূরখারামের স্ত্রী লিচমি দেবী এবং তাঁর মা কানভারী দেবীর আশা, ওষুধ খেয়ে পুরখারাম দ্রুত আগের মতো সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন। তবে তার আগে পর্যন্ত কুম্ভকর্ণ খেতাব নিয়েই থাকতে হবে পুরখারাম'কে।