সংক্ষিপ্ত

গুজরাটের (Gujarat) আহমেদাবাদে (Ahmedabad) এক মহিলার পেট থেকে ৪৭ কেজি ওজনের একটি টিউমার অপসারণ করলেন চিকিৎসকরা। তারপর ওই মহিলার ওজন দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৯ কেজি! 
 

অসাধ্য সাধন করলেন গুজরাটের (Gujarat) আহমেদাবাদে (Ahmedabad) চিকিৎসকরা। একটি টিউমারের কারণে এক মহিলার শারিরিক ওজন প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। তাঁর চলাফেরা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি আহমেদাবাদের এক বেসরকারি হাসপাতালে ওই মহিলার পেট থেকে বিশালাকার টিউমার বাদ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। টিউমারটির ওজন ছিল ৪৭ কেজি! আর, ডাক্তাররা জানিয়েছেন, টিউমারটি অপসারণের পর, ওই মহিলার ওজন দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৯ কেজি! প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলে অপারেশনটি, চারজন সার্জন-সহ মোট আটজন চিকিৎসকের একটি দল অংশ নিয়েছিল এই অপারেশনে।

জানা গিয়েছে, ওই মহিলার গুজরাটের (Gijarat) দাহোদ (Dahod) জেলার দেওগড় বাড়িয়া এলাকায়। বয়স ৫৬ বছর। গত ১৮ বছর ধরে ওই টিউমারটি ছিল তাঁর পেটে। অবশ্য প্রথম থেকেই টিউমারটি এত বড় আকারের ছিল না, জানিয়েছেন তাঁর বড় ছেলে। ১৮ বছর আগে ওই মহিলার আচমকাই ওজন বাড়তে শুরু করেছিল, বিশেষ করে পেটের অংশে ব্যাখ্যাতীতভাবে ওজন বাড়ছিল। মহিলা প্রথমে ভেবেছিলেন, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। তাই, প্রথমে দিকে তিনি কিছু আয়ুর্বেদিক এবং অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ খেয়েছিলেন। কিন্তু, তাতে কাজ না হওয়ায়, ২০০৪ সালে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করান। রিপোর্টে জানা যায়, তাঁর পেটে একটি টিউমার হয়েছে।

ওই বছর অস্ত্রোপচার করে টিউমারটি বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, অপারেশনের সময় ডাক্তাররা দেখেছিলেন, টিউমারটি ফুসফুস, কিডনি, অন্ত্র-সহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে রয়েছে। সেটি বাদ দিতে গেলে অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলির ক্ষতি হতে পারে আশঙ্কায়, চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখেন এবং জায়গাটি সেলাই করে দিয়েছিলেন। এরপর তাঁরা অনেক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছিলেন, কিন্তু কেউই অপারেশন করার ঝুঁকি নিতে রাজি হননি। 

এরমধ্যেই চলে আসে করোনাভাইরাস মহামারি। গত, দুই বছর ওই মহিলার জন্য অত্যন্ত কঠিন সময় ছিল। কারণ, টিউমারটি আচমকা আকারে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। ওই মহিলা ক্রমাগত ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েন। বিছানা থেকে নামতে পর্যন্ত পারছিলেন না। ফের পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিত্‍সকদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়। আমেদাবাদের এক বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়নের পর গত ২৭ জানুয়ারি অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন। অস্ত্রোপচার পরবর্তী পরিচর্যা ও পুনর্বাসনের পর গত সোমবার ওই মহিলাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়েছে। অপারেশনের আগে মহিলার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল, যে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর ওজন করা যায়নি। কারণ, তিনি ওজন মাপার যন্ত্র উপর দাঁড়াতেই পারছিলেন না। 

অপারেশনের পর ওজন করে দেখা গিয়েছে তাঁর ওজন ৪৯ কেজি। অন্যদিকে, শুধু টিউমারটির ওজন ৪৭ কেজি হলেও, তার সঙ্গে সঙ্গে পেটের ত্বকের কলা এবং অতিরিক্ত ত্বক মিলিয়ে মোট ৫৪ কেজি ওজন অপসারণ করা হয় অপারেশন করে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, এই অস্ত্রোপচার খুবই বিপজ্জনক ছিল। একটু এদিন-ওদিক হলেই তাঁর অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারত। অন্যদিকে, পেটের ত্বকে টিউমারটির বৃদ্ধির কারণে হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি এবং জরায়ুর মতো অঙ্গগুলির অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছিল। রক্তনালীরও একাংশ সংকুচিত হয়ে রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল। তাই, টিউমারটি অপসারণের পরই রক্তচাপ হঠাৎ নেমে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল। কিন্তু, অপারেশনের সময় বিশেষ ওষুধ দিয়ে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল।