সংক্ষিপ্ত
বাজেট অধিবেশন ২০২২-এ (Budget Session 2022) লোকসভায় কংগ্রেসকে (Congress) টুকড়ে টুকড়ে গ্যাঙ-এ নেতা বলে আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)। ঠিক কী কী বললেন তিনি, দেখে নিন হাইলাইটস।
সোমবার বাজেট অধিবেশন ২০২২-এ (Budget Session 2022) রাষ্ট্রপতির ভাষণে ধন্যবাদ প্রস্তাবের জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)। আর সেখানে কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী। টুকরে টুকরে গ্যাং-এর নেতা বললেন কংগ্রেস (Congress) দলকে। দেশের অর্থনীতির বেহাল দশার জন্য ঠারে ঠারে নেহরু-গান্ধী পরিবারকেই দায়ী করলেন। বিভিন্ন ইস্যুতে কংগ্রেসের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন তিনি। এক ঝলকে দেখে নিন প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের ১৫ টি মূল বক্তব্য -
আজাদি কা মহোৎসব
এদিন, প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর ভাষণ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। শুরুতেই তিনি বলেন, ভারত কীভাবে আগামী বছরগুলিতে বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা পালন করতে পারে, তাই নিয়ে ভাবার উপযুক্ত সময় হল 'আজাদি কা অমৃত মহোৎসব'। গত কয়েক বছরে দেশ বেশ কিছু উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের উপর জোর
আগে গ্যাস সংযোগ ছিল স্ট্যাটাস সিম্বল। এখন, দরিদ্রতম মানুষের কাছেও গ্যাস সংযোগ রয়েছে। দরিদ্রদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রয়েছে এবং সরাসরি বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ সেখানে স্থানান্তরিত করছে সরকার।
বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা
গণতন্ত্রের প্রগতিশীল সমালোচনার তাত্পর্যের উপর জোর দেন মোদী। তবে তিনি বলেন, এখন প্রতিটি সরকারী নীতিরই অন্ধভাবে বিরোধিতা করা বিরোধী দলগুলির আদর্শ হয়ে উঠেছে।
মহারাষ্ট্র সরকারকে তীক্ষ্ণ আক্রমণ
কোভিড-১৯'এর সময়ে কংগ্রেস পার্টি সব সীমা অতিক্রম করেছিল। প্রথম তরঙ্গের সময়, মানুষ লকডাউন অনুসরণ করছিল। সরকারি পরামর্শ মেনে মানুষ যে যেখানে ছিল, সেখানেই থেকে গিয়েছিল। কিন্তু, কংগ্রেস দল মুম্বই স্টেশনে দাঁড়িয়ে মানুষকে ভয় দেখিয়েছে। বিনামূল্যে টিকিট দিয়ে তাদের নিজ রাজ্যে ফিরিয়ে করোনা ছড়াতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল।
দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারকে আক্রমণ
দিল্লি অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকারের বিরুদ্ধেও আবাসিক গিয়ে গিয়ে মাইক্রোফোন ব্যবহার করে অভিবাসী মানুষদের নিজেদের রাজ্যে ফিরে যেতে বলার অভিযোগ করেছেন নরেন্দ্র মোদী। ২০২০ সালে ভিড়ে ভিড়াক্কার আনন্দ বিহার বাস স্টপের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
কোভিড-১৯ চলাকালীন বিরোধীদের রাজনীতি
সূক্ষ্মভাবে, প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলগুলির বিরুদ্ধে মহামারী চলাকালীন রাজনীতি করার অভিযোগও করেছেন। 'টুলকিট'-এর কথা মুখে না এনেও টুলকিটের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ২০২১ সালে কোভিডের ডেল্টা তরঙ্গের প্রেক্ষিতে প্রকাশিত হয়েছিল টুলকিট।
মহামারী চলাকালীন ৮০ কোটি মানুষের জন্য খাদ্যশস্য
মহামারীর সময়ে ৮০ কোটিরও বেশি ভারতীয়দের বিনামূল্যে রেশন দিয়েছে ভারত সরকার। কোনও ভারতীয়কে ক্ষুধার্ত থাকতে হবে না, এটাই তাঁর সরকারের প্রতিশ্রুতি বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
মহামারি চলাকালীন অর্থনৈতিক সংস্কারের উপর চাপ
মহামারী চলাকালীন সরকারের নেওয়া সংস্কারমূলক পদক্ষেপগুলির উপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ব্যখ্যা করেন কীভাবে সরবরাহ চেইন চ্যালেঞ্জের মধ্য়েও সরকারকে সার পৌঁছে দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করেছে। বিরোধী দলগুলি কীভাবে ক্ষুদ্র কৃষকদের স্বার্থের বিরোধী, তার উপরও জোর দেন মোদী।
ভারতের বড় পরিকাঠামোগত উন্নয়নে জোর
ফ্রেইট করিডোর, দ্রুতগামী ট্রেন এবং গ্র্যান্ড গতি শক্তি মাস্টারপ্ল্যানের উপর ফোকাস করেছে তাঁর সরকার। মোদী বলেন, এই পরিকাঠামোগত উন্নয়ন অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য অপরিহার্য ছিল।
এমএসএমই এবং স্টার্টআপ
প্রধানমন্ত্রী এমার্জেন্সি ক্রেডিট গ্যারান্টি লাইন স্কিমের কথা স্মরণ করেন। ২০২২-২৩ বাজেটে এর মূলধনের সীমা বাড়িয়ে ৫ লক্ষ কোটি করা হয়েছে। মহামারির সময়ে এমএসএমইগুলির পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে এই প্রকল্প অবিচ্ছেদ্য ছিল বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। ব্যবসা পরিচালনায় রাষ্ট্রের ভূমিকা যে আরও কমবে, তাও জানান প্রধানমন্ত্রী।
সম্পদ সৃষ্টিকারীদের উদযাপন
বিরোধীদের একহাত নিয়ে মোদী বলেন, দেশের যুবক, সম্পদ সৃষ্টিকারী এবং উদ্যোক্তপতিদের ভয় দেখানোর পদ্ধতি সঙ্গে একমত নয় তাঁর সরকার। তিনি প্রশ্ন করেন, 'মেক ইন ইন্ডিয়া' নিয়ে বিভিন্ন উপদেশ থাকতেই পারে, কিন্তু কোন মানসিকতা থেকে এটা বলা যায় যে এই প্রকল্প ব্যর্থ হবে? তিনি আরও দাবি করেন, যারা 'মেক ইন ইন্ডিয়া' নিয়ে মজা করছিল, তারা নিজেরাই এখন রসিকতায় পরিণত হয়েছে।
প্রতিরক্ষায় 'আত্মনির্ভরতা'
প্রতিরক্ষা খাত বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত ছিল বলে দাবি করে, প্রধানমন্ত্রী জানান, কীভাবে বিদেশী রাষ্ট্রগুলির উপর নির্ভরতার কারণে আমাদের দেশকে খুচরো যন্ত্রাংশ পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করতে হত। তিনি আরও জানান, কীভাবে 'মেক ইন ইন্ডিয়া' ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পের ভবিষ্যতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। আগের কংগ্রেস সরকারের সময়ে যে বিদেশী দেশ থেকে অস্ত্র কেনাই যে আদর্শ ছিল, তাও জানান।
মহামারী চলাকালীন মুদ্রাস্ফীতি বিষয়ে নেহেরু বক্তৃতা থেকে উদ্ধৃতি
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের জবাবে পাল্টা আক্রমণের পথে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। জাতির উদ্দেশে নেহেরুর দেওয়া বক্তৃতার উদ্ধৃতি দিয়ে, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী কীভাবে অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতির জন্য তৎকালীন কোরিয়া যুদ্ধকে দায়ী করেছিলেন, তা জানান মোদী। তিনি আরও বলেন, কীভাবে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে দ্বিতীয় ইউপিএ-র সরকারের সময়ে দেশে দুই সংখ্যার মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছিল। তিনি আরও জানান, তাঁর সরকার কিন্তু মুদ্রাস্ফীতিকে ৫ শতাংশের নিচে রাখাটা নিশ্চিত করেছে।
কংগ্রেস 'টুকড়ে টুকড়ে' গ্যাংয়ের নতুন নেতা
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তাঁর বক্তব্যের সময় বলেছিলেন, ভারত কোনও দেশ নয়, বিভিন্ন রাজ্যের সমষ্টি। এই প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করে, প্রধানমন্ত্রী প্রথমে বিষ্ণু পুরাণ এবং তারপর জওহরলাল নেহরুর 'ট্রাইস্ট উইথ ডেসটিনি' বক্তৃতা থেকে উদ্ধৃত করেন। তামিল বিপ্লবী-কবি-দার্শনিক সুব্রমণ্য ভারতীকেও উদ্ধৃত করেন। এই সকল উদ্ধৃতির মধ্য দিয়ে তিনি দাবি করেন, ভারতে বারবর একটি অন্তর্নিহিত এবং প্রাচীন জাতিসত্তা ছিল। রাহুল গান্ধীর মন্তব্য ভারতীয় জাতি এবং সংসদের জন্য অপমানজনক বলেন মোদী। কংগ্রেসকে তিনি 'টুকড়ে টুকড়ে' গ্যাংয়ের নতুন নেতা বলেন। দাবি করেন, ব্রিটিশদের 'ডিভাইড অ্যান্ড রুল' অনুশীলনকেই তারা বয়ে নিয়ে চলেছে।
তামিল অনুভূতিকে আঘাত করছে কংগ্রেস
কংগ্রেস তামিল অনুভূতিকে আঘাত করার চেষ্টা করেছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তামিলনাড়ুর নাগরিকদের অভিবাদন জানান, কারণ তাঁরা সিডিএস জেনারেল বিপিন রাওয়াতকে শ্রদ্ধা জানাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। জাতিকে খণ্ড খণ্ড করে শাসন করাটা কংগ্রেসের ডিএনএতেই রয়েছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।