সংক্ষিপ্ত
গত তিন বছর ধরে হিজাব (Hijab) পরতেন কম্পিউটার সায়েন্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রীটি। কর্নাটক হাইকোর্ট (Karnataka High Court) রাজ্য সরকারের হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা (Hijab Ban) বহাল রাখার পর, প্রথম দিন তাঁর ক্লাসে হিসাব ছাড়া বসার অভিজ্ঞতা কেমন?
দীর্ঘদিনের অভ্যাস হিজাব (Hijab) পরার। তারপর, ফের বুধবার সকলের সামনে হিজাব খুলে ফেললেন তিনি। আর তারপরই এক সহপাঠী তাকে স্বাগত জানিয়ে বলল, 'তুই এখন আমাদেরই একজন'। বুধবার, কর্নাটকের (Karnakata) এক মুসলিম (Muslim) ছাত্রীর প্রথমবার হিজাব খুলে ক্লাসে বসার অভিজ্ঞতাটা ছিল ঠিক এইরকমই। মঙ্গলবার কর্নাটক হাইকোর্ট (Karnataka High Court), রাজ্য সরকারের শ্রেনীকক্ষে হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা (Hijab Ban) বহাল রেখেছে। তার পরদিন থেকেই রাজ্যের স্কুল ও কলেজে সেই আদেশ প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে। তাই, হিজাব নিয়ে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অধিকার আর নেই।
এতে করে বিভ্রান্তিতে পড়েছে মুসলিম ছাত্রীরা (Muslim Girl Students)। কেউ কেউ স্কুল ছেড়ে দেওয়ার বা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। কেউ পড়াশোনাই বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছে। আর বাকিরা, হিজাব খুলে রেখেই ক্লাস করতে বাধ্য হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে হিজাব খোলার জন্য আলাদা ঘর প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই ঘরে হিজাব রেখে ক্লাসে যাচ্ছেন মুসলিম ছাত্রীরা। এরকমই একজন সানা কওসর। উদুপির সরকারি এমজিএম কলেজের (Udupi Govt MGM College) ছাত্রী তিনি।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিন বছর ধরে তিনি হিজাব পরা শুরু করেছেন। এদিন হঠাৎ করে প্রকাশ্যে হিজাব ছাড়া থাকতে অস্বস্তি হয়েছে তাঁর। তবে, তিনি জানিয়েছেন, এছাড়া তাঁর কোনও বিকল্প নেই। কারণ, কম্পিউটার সায়েন্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রীটি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান। এনডিটিভির প্রতিবেদনে সানাকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, এদিন হিজাব ছাড়া সহপাঠীদের পাশে বসার পরই এক হিন্দু ছাত্র তাঁর দিকে এগিয়ে এসে বলেছিল, 'তুই এখন আমাদেরই একজন'৷ তবে, সানা জানিয়েছেন, তাঁদের কলেজেও বহু শিক্ষার্থী কলেজ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থীরাও অনেকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিয়েছে।
উদুপি সরকারি গার্লস কলেজের সহ-সভাপতি তথা বিজেপি (BJP) নেতা যশপাল সুবর্ণ (Yashpal Subarna) অবশ্য এই ছাত্রীদের সম্পর্কে রীতিমতো বিষোদ্গার করেছেন। হিজাব বাদ দিয়ে ক্লাসে আসতে যাঁরা অস্বীকার করছেন, তাঁদের শিক্ষার্থী বলতেই নারাজ তিনি। তাঁর মতে, তাঁরা 'সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের (Terrorist Organisation) দালাল'। তাঁদের ভারত থেকে বেরিয়ে গিয়ে, যেখানে হিজাব পরার অনুমতি মিলবে, এরকম কোনও দেশে বসতি স্থাপন করার নিদান দিয়েছেন তিনি।
তবে, আদালতের এই রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এআইমিম (AIMIM) নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি (Asaduddin Owaisi)। তাঁর মতে, কোন ধর্মে কোন আচার অনুশীলন অপরিহার্য, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ারই নেই আদালতের। তিনি বলেছেন, বহুত্ববাদ এবং বৈচিত্র্যই হল ভারতীয় সংবিধানের (Indian Constitution) মৌলিক কাঠামো। একজাতীয়তা নয়। আদালতের গুরুকুল, কারাগার বা একটি সেনা ছাউনির মতো সমতার কথা বলেছে। এই স্থানগুলির সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনা হতে পারে না।