সংক্ষিপ্ত

  • এখনকার নারীবাদের জননী তিনি
  • মেয়েদের অধিকারের লড়াইয়ে তিনি ছিলেন অগ্রণী
  • ভারতের প্রথম স্নাতক মহিলা তিনি
  • সেই কামিনী রায়ের ১৫৫ তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা গুলল ডুডলের 

এখন কি ভারতীয় মেয়েরা বঞ্চনার শিকার হয় না?  ভারতের প্রতিটি মেয়ে এখনও কি পড়াশোনায় সমান সুযোগ পায়?  যে কোনও ব্যক্তিকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে শুধুমাত্র একটাই উত্তর পাওয়া যায়, সেটা হল 'না'। তবে লড়াইটা আগের থেকে অনেকটা সহজ হয়েছে, এটা সত্যি মেনে নিতে হয়। কিন্তু দেড়শ বছর আগে এই লড়াইটা অনেক কঠিন ছিল। এক বিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে সেগুলো কল্পনা করা যায় না। যে পরিস্থিতে বিধবা বিবাহ বা বাল্য বিবাহ মানুষের রক্তে, মানুষের মনে গেঁথে দেওয়ার কাজ চলছিল, সেই পরিস্থিতিতে ভারতে প্রথম মহিলা হিসেবে স্নাতক হয়েছিলেন কামিনী রায়। একাধারে তিনি যেমন ছিলেন কবি, শিক্ষাকর্মী ,অন্যদিকে, মেয়েদের সমানাধিকারের জন্য আজীবন লড়ে গিয়েছেন। তাঁর ১৫৫ তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাল গুগল ডুডল। 

১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর ব্রিটিশ শাসিত অবিভক্ত বাংলার বাকেরগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন কামিনী রায়। বর্তমানে বাকেরগঞ্জ বাংলাদেশের অধীনে।  প্রথম থেকে তাঁর অঙ্কের ওপর ঝোঁক ছিল। ১৮৮৬ সালে বেথুন কলেজ থেকে সংস্কৃতে স্নাতক হন কামিনী। যদিও কবিতা লেখা অনেক ছোট বয়স থেকেই শুরু করে দিয়েছিলেন। 

বেথুন কলেজে ঢোকার পর থেকে তাঁর জীবন আমূল পরিবর্তন হতে শুরু করেছিল। প্রভাবশালী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করার দৌলতে তাঁকে সমাজের রক্ত চক্ষুর কোপে কম পড়তে হয়েছিল। তবে ভারতের মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত মেয়েদের কোন দুর্গতি ভোগ করতে হয় তা তিনি সেই সময় আন্দাজ করতে পারতেন। তখনও পর্যন্ত খুব একটা চাক্ষুষ করেননি। বেথুন কলেজে পড়ার সময় অবলা বোসের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। অবলা বোসের কাছ থেকে জানতে পারেছিলেন, মেয়েদের সমাজের চোখ রাঙানি কীভাবে সহ্য করতে হয়। ভারতীয় বিধবাদের অবস্থা কতটা শোচনীয়।  এসব শোনার পর থেকেই তাঁর মনের ভিতর আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। তিনি মেয়েদের অধিকারের জন্য লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। 

গুগলের তথ্য অনুসারে স্নাতক হওয়ার পর কামিনী রায় বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ১৮৮৯ সালে 'আলো-ছায়া' নামে তাঁর প্রথম কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছিল। ভারতের আধুনিক নারীবাদের জননী হিসেবেই তাঁকে সম্মান দেওয়া হয়। একবার তিনি তাঁর কবিতায় লেখেছিলেন, 'কেন মেয়েরা সমাজের সমস্ত কিছু থেকে বঞ্চিত হবেন? সারা জীবন কেনই বা তাঁদের সংসারের ঘানি টেনে কাটাতে হবে?' ১৯২৬ সালে তিনি মেয়েদের ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন। ১৯২৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে 'জগৎতাড়িনী' পুরস্কার দিয়েছিল।  ১৯৩৩ সালে স্বপ্নসসন্ধানী কামিনী রায়ের মৃত্যু হয়।