সংক্ষিপ্ত

  • খাবারের সন্ধানে গ্রামে এসেছিল গর্ভবতী হাতিটি
  • বিস্ফোরক বোঝাই আনারস খেয়ে মৃত্যু হল তার
  • হাতিটিকে  কেউ আনারস খাওয়ায় নি পাল্টা দাবি উঠল
  • এরমধ্যেই বিস্ফোরক খেয়ে দ্বিতীয় হাতির মৃত্যু সামনে এল

বিস্ফোরক ভর্তি আনারস খেয়ে মৃত সন্তানসম্ভবা হাতির। কেরলে গর্ভবতী হাতির এই নৃশংস মৃত্যু সারা দেশজুড়ে বিশাল ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। জানা যাচ্ছে, বুনো হাতিটি পালাক্কড় জেলার সাইলেন্ট ভ্যালির বন ছেড়ে খাবারের সন্ধানে নিকটস্থ এক গ্রামে যায়। অভিযোগ উঠেছে, সেখানেই গ্রামবাসীরা তাকে বাজি ভর্তি আনারস খেতে দেয়। ফলটি খাওয়ার সময় বাজি তার মুখের মধ্যেই ফেটে যায়। এই অবস্থায় তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে গ্রামেই ঘুরে বেড়াতে থাকে গর্ভবতী হাতিটি। ক্ষতবিক্ষত মুখে কিছু খেতেও পারেনি সে। অবশেষে একটি নদীতে শরীর ডুবিয়ে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল হাতিটি, কিন্তু পারেনি। শেষপর্যন্ত মারা যায় ৬ মাসের সন্তান সম্ভবা হাতিটি।

 

 

এই বীভৎস ঘটনা সামনে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে । হাজার হাজার মানুষ দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।  অবলা প্রাণীর বিরুদ্ধে এমন নিষ্ঠুর জঘন্য কাজের প্রতিবাদে একের পর এক স্কেচ এবং ছবি শেয়ার করেছেন নেটিজেনরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় দোষীদের শাস্তি চেয়ে গর্জে উঠেছেন শিল্পপতি রতন টাটাও।

পশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আরও কঠিন আইনের দাবি উঠছে দেশজুড়ে। মাল্লাপ্পুরম জেলার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উঠতে থাকে। এর মধ্যেই এক চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন দেশের প্রাক্তন এইএফএস আধিকারিক ডঃ আব কাইউম খান। হাতিটিকে স্থানীয়রা বিস্ফোরক বোঝাই আনাসর সেদিন খেতে দেয়নি বলেই মনে করছেন ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসের প্রাক্তন আধিকারিক। 

ডঃ আব কাইউম জানান, বন্য শুয়োর ধরার ফাঁদ হিসাবে কেরলে বিস্ফোরক বোঝাই আনারসের ব্যবহার হয়ে থাকে। সেদিন হয়তো কেউ হাতিটিকে আনারস খাওয়ায় নি। গর্ভবতী হাতিটি সেটি কোথাও পড়ে থাকতে দেখে নিজেই খেয়ে ফেলেছিল। 

তবে দ্বিতীয় সম্ভাবনাটিও একেবারে উড়িয়ে দেননি প্রাক্তন আইএফএস আধিকারিক। তিনি বলেন, "কিছু লোক  নিজেদের সম্পতি ও প্রাণের জন্য বন্য প্রাণকে হুমকি হিসাবে মনে করেন। বন্য প্রাণী যেখানে মানুষের জন্য সমস্যা তৈরি করে সেখানে এমন ঘটনা ঘটে থাকে।"

এই প্রসঙ্গে ডঃ আব কাইউম আরও যোগ করেন, "বন্য শুয়োর প্রায়শই ফসলের ক্ষতি করে। লোকে ফসল রক্ষার উপায় হিসাবে তখন এই ফাঁদ ব্যবহার করে। চলতি বছরেই শোনা গিয়েছিল সরকার কৃষকদের শুকর তাড়াতে লাইসেন্স প্রাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমতি দিচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হল মানুষ এই ফাঁদ বাঘ, চিতাবাঘ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী মারার জন্য ব্যবহার করছে।"

এরপরেও অবশ্য প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, সেদিন খাবারের সন্ধানে গ্রামে ঠুকে পড়া হাতিটি কিন্তু কারও কোনও ক্ষতি করেনি। তারপরেও নৃশংসতার শিকার হতে হয়েছিল তাকে। গত ২৭ মে ঘটা এই ঘটনা সম্প্রতি ট্যুইটারে ভাইরাল করেন এক বনকর্তা, তারপরেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র নিন্দা। এদিকে অর মধ্যে বিস্ফোরক খেয়ে কেরলে আরও একটি হস্তিনীর মৃত্যুর খবর সামনে আসছে। জানা গিয়েছে এই ঘটনা ঘটে গত এপ্রিলে কেরলের কোল্লাম জেলার এক বনাঞ্চলের। ময়না তদন্তে উঠে আসে, বিস্ফোরক কিছু মুখে ফেটে যাওয়াতে সেই হাতিটির চোয়ালে ভাঙা ছিল।