সংক্ষিপ্ত

সবাই প্রায় বলবেন যে একটি দেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য যে শহর সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত, তাকেই রাজধানী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। কিন্তু এর বাইরেও থেকে যায় বেশ কয়েকটি কারণ।

কোনও দেশের রাজধানী (National Capital), সেই দেশের (Country) প্রতিনিধিত্ব করে গোটা বিশ্বে (World)। রাজধানী শহরের মর্যাদা (status) স্বাভাবিকভাবেই তাই অন্য শহরগুলির তুলনায় অনেকটাই বেশি। শুধু মর্যাদা নয়, গুরুত্বও বেশি হয় রাজধানী শহরের। যেমন ভারতের রাজধানী দিল্লি, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ, আফগানিস্তানের কাবুল, নেপালের কাঠমান্ডু, শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলোম্বো। 

মোটামুটি ভাবে যারা সাধারণ জ্ঞান নিয়ে চর্চা করেন, এই নামগুলো তাঁদের প্রত্যেকেরই জানা। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন যে কেন এই শহরগুলোকেই বেছে নেওয়া হল সেই দেশের রাজধানী হিসেবে?  কেন দিল্লি ভারতের রাজধানী ? কেন কোনও শহর রাজধানী শহর হয়ে ওঠে? কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকতে হয় রাজধানী হতে গেলে ?

এই প্রশ্নগুলোর সহজ একটা উত্তর সবার জানা রয়েছে। সবাই প্রায় বলবেন যে একটি দেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য যে শহর সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত, তাকেই রাজধানী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের বেশিরভাগ শীর্ষ দফতর অফিস-কাছারি এই সবই মূলত অবস্থিত হয় এই রাজধানীতে। পাশাপাশি এই রাজধানী অঞ্চলগুলি কিন্তু ঐতিহাসিক দিক থেকেও অনেক গুরুত্ব লাভ করে থাকে। কিন্তু এর বাইরেও থেকে যায় বেশ কয়েকটি কারণ। চলুন জেনে নিই। 

১) একটি দেশের রাজধানী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার ভৌগোলিক অবস্থান একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর সেইকারণে দেশের কেন্দ্রে অবস্থিত কোনও শহরকেই রাজধানী হিসাবে বেছে নেওয়া হয়, কারণ তার সঙ্গে গোটা দেশের একটা সংযোগ রক্ষা করা সম্ভব। রাজধানীর ইংরেজি শব্দ Capital লাতিন শব্দ Capitalis থেকে এসেছে, যার অর্থ হল 'মুখ্য' বা 'শীর্ষ'। 

২) নিরাপত্তা একটা বড় কারণ। দেশের এমন এক শহরকে রাজধানী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়, যা বহিরাগত শত্রুর হাত থেকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। ঠিক এই কারণে দেশের সীমান্ত বা উপকূলবর্তী শহরগুলিকে রাজধানী হিসাবে বেছে নেওয়া হয় না। 

৩) অনেক সময়ে রাজনৈতিক আলোচনা ও ঐক্যমত্যের ওপর নির্ভর করে বেছে নেওয়া হয় সেই দেশের রাজধানী। যেমন, অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা নির্বাচিত হয়েছিল রাজনৈতিক আপসের মধ্যে দিয়েই। অস্ট্রেলায়ার দুই শহর মেলবোর্নের সঙ্গে সিডনির মধ্যে বিরোধের কারণেই ক্যানবেরাকে বেছে নেওয়া হয়। সেরকম ভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার পরও রাজধানী নির্বাচন নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। জর্জ ওয়াশিংটন নদীর কাছে রাজধানীর স্থান নির্বাচন করেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই রাজধানীর নামকরণ হয় ওয়শিংটন ডিসি। 

৪) কোনও দেশের শাসকের পছন্দ- শাসকের পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতেও বহু রাজধানী নির্বাচন করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে কাজাকস্তানের রাজধানী হিসাবে নির্বাচন করা হয় আস্তানা-কে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি নুরসুলতান নাজারবায়েভের ইচ্ছেতেই একে রাজধানী হিসাবে নির্বাচন করা হয়। 

৫) ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে এমন স্থানও কিন্তু রাজধানী শগর হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য বিশেষভাবে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। এর উদাহরণ হিসাবে দেওয়া যেতে পারে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের কথা। ষোড়শ শতকে মাদ্রিদ কিন্তু শহর হিসাবে আলাদা কোনও গুরুত্ব ছিল না। সেখানকার জনসংখ্যাও খুব কম ছিল। সেইসময়ে রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ একটি খালি প্রাসাদে থাকতে শুরু করেন, যার ফলস্বরূপ স্পেনের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কার্যকলাপও মাদ্রিদ থেকে পরিচালিত হতে থাকে। এর প্রায় ৪০০ বছর পর মাদ্রিদ রাজধানীর স্বীকৃতি পায়।