সংক্ষিপ্ত
প্রতি বছর ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব গণ্ডার দিবস হিসেবে পালন করা হয়। গোটা বিশ্বে বর্তমানে পাঁচ প্রজাতির গণ্ডার আছে। তাদের সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করা হয় বিশ্ব গণ্ডার দিবসে। এখন ব্ল্যাক রাইনো, হোয়াইট রাইনো, গ্রেটার ওয়ান-হর্নড রাইনো, সুমাত্রান রাইনো ও জাভান রাইনো রয়েছে বিশ্বে।
আজ নতুন বছরের প্রথম মন কি বাত (Maan Ki Baat) অনুষ্ঠানে অসমের (Assam) এক শৃঙ্গ গণ্ডারের (One-horned rhino) প্রসঙ্গ তোলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)। অসমের ঐতিহ্যকে বহন করে এই গণ্ডার (Rhino)। কিন্তু, গত কয়েক বছর ধরেই চোরাশিকারিদের (Poacher) দাপটে প্রাণ হারিয়েছে বহু এক শৃঙ্গ গণ্ডার। চোরাশিকারিদের হাত থেকে এক শৃঙ্গ গণ্ডারকে রক্ষা করতে অসম সরকার বিশ্ব গণ্ডার দিবসে (World Rhino Day) কী পদক্ষেপ করেছিল তাও মন কি বাত অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন মোদী। এছাড়া এই গণ্ডারের কথা বলতে গিয়ে ভারতরত্ন সম্মান প্রাপ্ত সঙ্গীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার একটি গানের অংশও এই অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি।
বিশ্ব গণ্ডার দিবস
প্রতি বছর ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব গণ্ডার দিবস হিসেবে পালন করা হয়। গোটা বিশ্বে বর্তমানে পাঁচ প্রজাতির গণ্ডার আছে। তাদের সংরক্ষণের বিষয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করা হয় বিশ্ব গণ্ডার দিবসে। এখন ব্ল্যাক রাইনো, হোয়াইট রাইনো, গ্রেটার ওয়ান-হর্নড রাইনো, সুমাত্রান রাইনো ও জাভান রাইনো রয়েছে বিশ্বে। যদিও তাদের সংখ্যা যে খুব বেশি তা একেবারেই নয়। আফ্রিকার ব্ল্যাক ও হোয়াইট রাইনো এবং সুমাত্রান রাইনোর দু’টি করে খড়্গ থাকে। তবে ভারতীয় ও জাভান রাইনোর একটি করে খড়্গ থাকে।
আরও পড়ুন- ঘোড়া 'বিরাটের' দক্ষতা ও অবদান কতটা, মন কী বাত অনুষ্ঠানে জানালেন পিএম মোদী
অসমের এক শৃঙ্গ গণ্ডার
এক শৃঙ্গ গণ্ডার ভারতের মধ্যে মূলত দেখতে পাওয়া যায় অসমে। এদের চামড়া বর্মের মতো, মোটা ও অনেকগুলো খাঁজযুক্ত। এদের ঘাড় কাঁধ ও দেহের পাশের চামড়া স্ফীত। মেয়ে গণ্ডারের উচ্চতা ১.৬ মিটার এবং ছেলে গণ্ডারের উচ্চতা ১.৮ মিটার। ইন্দো-গঙ্গা সমভূমিতে আগে এই গণ্ডার বাস করত। এছাড়া এই গণ্ডার দেখতে অনেক সময়ই পর্যটকরা ভিড় করেন অসমে। ফলে সেই রাজ্যের আয়ের অনেকটাই নির্ভর করে এই গণ্ডারের উপর। কিন্তু চোরাশিকারিদের দাপটে এদের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে। এখন সারা ভারতে এই গণ্ডারের সংখ্যা ৩ হাজার। তার মধ্যে ২ হাজার গণ্ডারই দেখতে পাওয়া যায় অসমে।
আরও পড়ুন- শীঘ্রই উন্নতমানের ফুটবল স্টেডিয়াম পাচ্ছে লাদাখ, খেলো ইন্ডিয়া প্রকল্প নিয়ে বড় ঘোষণা মোদীর
অসমে গণ্ডারের শৃঙ্গ পোড়ানো
বিশ্ব গণ্ডার দিবসে গতবছর অসমে ২ হাজার ৪৭৯টি গণ্ডারের খড়্গ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। চোরাশিকারিরা এই গণ্ডারের খড়্গগুলি পাচারের চেষ্টা করছিল। তবে তার আগেই খড়্গগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়। তারপর সেগুলি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা নিজে গণ্ডারের খড়্গগুলি পুড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, গণ্ডার হত্যা ঠেকাতেই হবে। এর জন্য ভারতের আইনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইনও কঠোরভাবে পালন করতে হবে। গণ্ডারের খড়্গ বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। তিনি আরও বলেছিলেন, "আমরা সারা পৃথিবীকে এই বার্তা দিতে চাই যে মাথায় খড়্গ নিয়ে বেঁচে থাকা গণ্ডার আমাদের কাছে অমূল্য। চোরাশিকারিরা খড়্গের জন্য যে গণ্ডারগুলিকে মেরে ফেলে এবং সরকারি সংগ্রহশালায় খড়্গগুলি রেখে দেওয়া হয়, আমরা এর বিরোধী।" চোরাশিকারিদের কড়া বার্তা দিতেই ওই খড়্গগুলি পুড়িয়ে দেওয়া হল বলে জানিয়েছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন- করোনা টিকাকরণে দেশকে নতুন দিশা দেখাচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা, উচ্ছ্বসিত প্রশংসা মোদীর
চোরাশিকারিদের বিশ্বাস গণ্ডারের খড়্গের গুরুত্ব অনেক। সেই খড়্গ দিয়ে একাধিক ওষুধ তৈরি হয়। এমনকী, ক্যানসারের ওষুধও তৈরি হয়। সেই কারণে গণ্ডারকে মেরে তাদের খড়্গগুলিকে কেটে তারপর তা বিপুল টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়। আর এর ফলে বহু গণ্ডারের মৃত্যু হয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রীর মন কি বাত অনুষ্ঠানে এই গোটা বিষয় উঠে এসেছে। পাশাপাশি গণ্ডার শিকার দমনের জন্য অসম সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তারও প্রশংসা করেন তিনি।
মোদীর মন কি বাতে অসমের গণ্ডার
মন কি বাত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "অসমের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক শৃঙ্গ গণ্ডার। কিন্তু, ওই রাজ্যের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকার পরও বিপন্ন হয়ে ওঠে গণ্ডারদের জীবন। ২০১৩ সালে ৩৭টি গণ্ডার ও ২০১৪ সালে ৩২টি গণ্ডারকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর এই গণ্ডারদের হত্যা রুখতে অসম সরকারের তরফে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২২ সেপ্টেম্বর পুড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক গণ্ডারের শৃঙ্গ। আর এই উদ্যোগের পর ২০১৩ সালে যেখানে ৩৭টি গণ্ডারের মৃত্যু হয়েছিল সেখানে ২০২০ সালে মাত্র ২টি ও ২০২১ সালে মাত্র ১টি গণ্ডার শিকারের ঘটনা সামনে আসে। গণ্ডার বাঁচানোর জন্য অসমবাসী যে উদ্যোগ নিয়েছে তার প্রশংসা করছি।"