সংক্ষিপ্ত

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওপেন ম্যাগাজিনকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন,  রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দর দেখানো পথেই তিনি বরাবার চলছেন। 'জনসেবাই ঈশ্বরের সেবা'-এটাই তাঁর নীতি আর আদর্শ। 

দেখতে দেখতে দুটো দশক পার করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (PM Narendra Modi)। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে তাঁর পা পড়েছিল ২০০১ সালে। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী (Gujarat CM)হিসেবে। তারপর গুজরাট ছাড়িয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীর (PM Of India) দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১৪ সাল। পরপর দুবারের প্রধানমন্ত্রী তিনি। কিন্তু ক্ষমতার কেন্দ্র থাকা তাঁর এই যাত্রাপথে চড়াই উতরাই অনেক রয়েছে। 

সালটা ছিল ২০০১। কিন্তু অপ্রাত্যাশিতভাবেই তিনি ক্ষমতার অন্দরে পা রেখেছিলেন। কারণ ১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ থেকে নরেন্দ্র মোদী ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি মূলত সাংগঠনিক দায়িত্ব সামলাতেন। ২০০১ সালে তৎকালীন গুজরাটের মুখ্যমমন্ত্রী কেশুভাই প্যাটেলকে সরিয়ে দিয়ে নরেন্দ্র মোদীকেই মুখ্যমন্ত্রী করেছিল বিজেপি। ওই বছরই ৭ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন তিনি। তারপর বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে তুলে ধরা হয়। যদিও সেই সময় দলের প্রথম সারির নেতা লালকৃষ্ণ আডবানী নরেন্দ্র মোদীর ওপর তেমন ভরসা রাখতে পারেননি। কিন্তু মোদীর নেতৃত্বেই ২০০২ সালে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে  বিজেপি ১৮২টি আসনের মধ্যি ১২৭টি আসন দখল করেছিল। যদিও তার আগে ২০০১ -০২ সাল গোধরা থেকে গুজরাট দাঙ্গার মত সংবেদনশীল ঘটনাগুলি ঘটেছছিল। একইভাবে ২০০৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে অনায়াস জয় পান। তারপর ২০১৪ সাল থেকে এপর্যন্ত টানা দুবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। 

Hospital: কেমন কাজ করছে দেশের জেলা হাসপাতালগুলি, মূল্যায়ন রিপোর্ট প্রকাশ NITI Aayogএর
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওপেন ম্যাগাজিনকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন,  রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দর দেখানো পথেই তিনি বরাবার চলছেন। 'জনসেবাই ঈশ্বরের সেবা'-এটাই তাঁর নীতি আর আদর্শ। মোদীর কথায় এই উক্তিটি তাঁর জীবনের চালিকা শক্তি। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র মোদী নিজেই স্বীকার করেছেন প্রথম জীবনে রাজনীতির সঙ্গে তাঁর তেমন কোনও সংযোগ ছিল না। বন্ধুদের পীড়াপীড়িতে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। প্রথম জীবনে মন দিয়েছিলেন দলের সাংগঠনিক কাজে। সেটাতেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন। কিন্তু ২০ বছর আগে এমন পরিস্থিতির কারণে তাঁকে প্রশাসমনে আসতে হয়েছিল। মোদীর কথায় ভুজ ভূমিকম্পের কারণে বিধ্বস্ত গুজরাটের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্যই প্রশাসনে এসেছিলেন তিনি। তিনি বলেছেন প্রাকৃতির দুর্যোগের কারণে মানুষের বিপর্যস্ত দশা তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। সেইকারণে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরেই তিনি মন দিয়েছিলেন, বিপর্যস্ত এলাকার ত্রাণ, পুনর্বাসন আর উন্নয়েনর কাজে।। একই সঙ্গে সেই সময় তাঁর প্রথম আর প্রধান লক্ষ্যই ছিল গুজরাটের পুনর্নিমাণ। 

Congress: প্রশান্ত কিশোর রাহুলদের জন্য কতটা Lucky, কংগ্রেসের ভাঙনের পর উঠছে প্রশ্ন

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথায় প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী হওযা গোটা বিশ্বের চোখে অন্যরকম। কিন্তু এগুলি নিছকই একটি জায়গা। যেখানে দাঁড়িয়ে মানুষের জন্য কোনও কাজ করা যায়। তিনি বলেছেন মানুষের জন্য কাজ করতে এখনও উৎসাহী তিনি। মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে তিনি এখনও আত্মতৃপ্ত হন। কিন্তু তিনি এখনও ভোলেন তিনি তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কথা। তিনি এখনও বলেন ২০ বছর আগে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যা তাঁকে প্রশাসনের প্রধান হতে বাধ্য করেছিল। কিন্তু সেই সময় প্রশাসন ছিল তাঁর কাছে সম্পূর্ণ একটা অচেনা জায়গা। 

তবে এখনও তিনি চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেছেন, গত কয়েক মাস অলিম্পিক্স আর প্যারালিম্পিক্স জয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। যাঁরা পদক জয় করতে পারেননি তাঁদের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। তাঁর কথায় কেউ যদি কিছু করতে চায় সে সেটা করতে পারে। তার জন্য চাই ইচ্ছে আর মনের জোর। সেই কথাটা দেশের ক্রীড়়াবিদরা তাঁকে আবার স্মরণ করিয়ে  দিয়েছেন। পাল্টা তিনিও বর্তমানে ক্রীড়াবিদদের সুবিধে আর সহায্যের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ করতে চলেছেন বলেও জানিয়েছেন। 

কী মতলব চিনের, গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি LAC-তে ৫৫টি ঘোড় নিয়ে এসেছিল লাল ফৌজ
ভারতের গণতন্ত্রের ওপর  মোদীর যে আস্থা রয়েছে সেকথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, একজন চা বিক্রেতা আজ এই দেশের প্রধানমন্ত্রী। এটাই দেশের গণতন্ত্র। তিনি বলেছেন তাঁর নিজের জীবনের গতিপথ তাঁকে কখনই বিভ্রান্ত করে না। তাঁর কথায় তিনি সৌভাগ্যবান যে দেশের ১৩০ কোটি মানুষ তাঁর পাশে রয়েছেন। তিনি আরও বলেন এটা শুধু তিনি নন, দেশের ১৩০ কোটি মানষ চাইলে তাঁরই মতন ক্ষমতার শিখরে উঠতে পারেন। তবে তার জন্য চাই কঠোর পরিশ্রম আর ইচ্ছে। তবে তাঁর কাছে নিজের সাফল্য মোটেও গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল দেশের সাফল্য। 

ওপেন ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টিকাকর্মসূচির সাফল্যের কৃতিত্ব দিয়েছেন দেশের বাসিন্দাদের। তিনি বলেছেন টিকাঅভিযানের সাফল্যই প্রমাণ করে দেশ আত্মনির্ভর ও স্বনির্ভর হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেছেন টিকা তৈরিতে ভারত আত্মনির্ভর- তাই এটা এত সহজে সম্ভব। কিন্তু তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, টিকা যদি দেশে তৈরি না হত তাহলে এই দেশ অনেক সমস্যার সম্মুখীন হত। একই সঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বিশ্বের অনেক দেশই প্রয়োজনীয় কোভিড ভ্যাক্সিন পাচ্ছে না বলে। 

Gandhi Jayanti- গান্ধী থেকে মহাত্মা, গান্ধীজীর ২০ টি অজানা তথ্য যা চমকে দেবে আপনাকে

ওপেন ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলছেন তিনি একটি সৎ মন নিয়ে সমালোচনা শুনতে রাজি রয়েছেন। কিন্তু দুর্ভ্যাগ্য বশত সমালোচকদের সংখ্যা খুবই কম। বেশিরভাগ মানুষ শুধুই অভিযোগ করেন। মানুষের উপলব্দি নিয়ে গেম খেলেন। তার কারণও বলেছেন তিনি। মোদীর কথায় সমালোচনা করার জন্য একজন মানুষকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। গবেষণা করে ভুলত্রুটি বার করতে হয়। তাঁর মাঝে মাঝেই তিনি প্রকৃত সমালোচকদের মিস করেন বলেও জানিয়েছেন। 

একই সঙ্গে তিনি বলেছেন এখানে সমস্যা মোদী নয়। সমালোচকদের দৃষ্টিভঙ্গী। যখন মানুষ পূর্ব ধারনা নিয়ে কোনও কিছু দেখার চেষ্টা করে তখন সে কেবল অর্ধেকটাই দেখে। কেউ তাঁর কাজের বিশ্লেষণ করতে চাইলে তাঁকে তিনি স্বাগত জানাবেন বলেও জানিয়েছেন। কথা প্রসঙ্গে মোদী তুলে আনের ২০ বছর আগে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর প্রথম ভূজ সফরের কথা। তিনি বলেন সেই সময় তিনি দীপাবলীর উৎসব বাতিল করে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আর্জি জানিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি প্রথম যে উদ্যোগটি নিয়ে জনগণের সামনে এসেছিলেন তা ছিল গবির কল্যাণ মেলা।ওপেন ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, গ্রাম-শহর, দরিদ্র-ধনী এই বিভেদগুলি দূর করাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন যাঁদের কেউ নেই তাদের পাশে সরকারের দাঁড়ানো উচিৎ। 

ওপেন ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দিল্লির উপকণ্ঠে চলমান কৃষক আন্দোলনের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছেন তিনি। বলেছেন, কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের যারা বিরোধিতা করছেন তাঁরা রাজনীতি করছেন। তিনি বলেছেন তাঁর সরকার ছোট কৃষকদের ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে সরকার বসতে রাজি রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মোদীর কথায় আধার, জিএসটি, কৃষি আইন-এমনকি দেশের  সেনাবাহিনীর শক্তি বাড়ানো হচ্ছে তা নিয়েও রাজনীতি করছে বিরোধীরা। 

 আমাদের রাজনীতি নির্বাচনী সাফল্যের জন্য ভারতীয়দের মধ্যে বিভাজনকে অগ্রাধিকার দেয়।এই প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর আর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর বক্তৃতা শুনার আবেদন জানিয়েছিলেন ওপেন ম্যাগাজিনের সম্পাদককে। তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি গুজরাটিদের হয়েও সওয়াল করতেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর লক্ষ্য় ১৩০ কোটি ভারতীয় উন্নতি। যা তিনি জনসভাগুলিতে বলে থাকেন। তিনি কোনও বৈষম্য ছাড়াই গোটা দেশের মানুষেরই কথা বলেন। তিনি আরও বলেন দেশের উন্নয়ন নীতির লক্ষ্য শৌচাগার, বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া, বাড়ি তৈরি করা। কিন্তু এগুলি যদি কোনও একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব হয় না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। 
 

YouTube video player