সংক্ষিপ্ত

এই মামলায় ধর্ষণে অভিযুক্ত যুবক আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছিলেন যে, ওই তরুণী 'মাঙ্গলিক' হওয়ায় তাঁকে কিছুতেই বিয়ে করা যাবে না।

জ্যোতিষশাস্ত্র কি ‘বিজ্ঞান’? এই প্রশ্নেই দোলাচলে পড়ে গেল এক ধর্ষিতা নারীর ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়া। সম্প্রতি এলাহাবাদ হাইকোর্টের দেওয়া একটি অদ্ভুত রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে দেওয়া বিশেষ নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। একজন তরুণী তাঁর পুরুষ সঙ্গীর দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। পুরুষ সঙ্গী তাঁকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে সহবাস করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরবর্তীকালে ওই সঙ্গী তাঁকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। এই মামলা আদালতে যাওয়ার পর ওই তরুণীর পুরুষ সঙ্গী দাবি করেন যে, জ্যোতিষশাস্ত্র মতে ওই তরুণী ‘মাঙ্গলিক’, তাই জন্যই তিনি তাঁকে বিয়ে করতে পারবেন না।

যুবকের আইনজীবীর কাছ থেকে এই যুক্তি শোনার পর এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি রায় দিয়েছিলেন যে, ওই তরুণী সত্যিই মাঙ্গলিক কিনা, তা লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা করে দেখা হোক। লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতিষ বিভাগের প্রধানকে ওই তরুণীর কুষ্ঠি বিচার করার জন্য নির্দেশও দিয়ে দেন হাইকোর্টের বিচারপতি। কিন্তু, এই মামলার আসল প্রশ্ন ছিল যে, উক্ত যুবক মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তরুণীর সাথে সহবাস করেছেন, তাহলে তিনি ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেছেন কিনা। এই প্রশ্ন নিয়ে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন ওই তরুণী। এলাহাবাদ হাইকোর্টের কুষ্ঠি বিচার করার রায় শুনেই অবিলম্বে তা স্থগিত করে দেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি।

এই মামলায় ধর্ষণে অভিযুক্ত যুবক আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছিলেন যে, ওই তরুণী 'মাঙ্গলিক' হওয়ায় তাঁকে কিছুতেই বিয়ে করা যাবে না। এই যুক্তি শুনে এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি ব্রিজ রাজ সিংয়ের বেঞ্চ থেকে তরুণীর কুষ্ঠি বিচার করার আদেশ দেওয়া হয়েছিল এবং অভিযুক্ত যুবককে জামিন দেওয়া হয়েছিল। শনিবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া ও বিচারপতি পঙ্কজ মিথালের সমন্বয়ে গঠিত একটি অবকাশকালীন বেঞ্চ থেকে সেই আদেশে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্টে শুনানি

শুনানির শুরুতে, সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ ভারতের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, তিনি আদেশটি পর্যবেক্ষণ করেছেন কিনা। তুষার মেহতা বলেন, “আমি আদেশটি দেখেছি এবং এটি খুব বিরক্তিকর। এটি স্থগিত হতে পারে।” অভিযোগকারীর আইনজীবী দাখিল করেছেন যে, সব পক্ষের সম্মতিতে আদেশটি পাস করা হয়েছিল এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রমাণের জন্য আদালত আদেস দিতে পারে। এই মর্মে তিনি জানান যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জ্যোতিষশাস্ত্র’ নামের একটি বিষয় পড়ানো হয়। এই কথা শুনে বিচারপতি শুধাংশু ধুলিয়া বলেন, “কিন্তু এই বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে প্রেক্ষাপটের বাইরে। এখানে গোপনীয়তার অধিকার বিঘ্নিত হয়েছে… জ্যোতিষশাস্ত্রের সাথে এর কী সম্পর্ক রয়েছে, সে বিষয়ে আমরা তথ্য যোগ করতে চাই না। এতে আপনার যে অনুভূতি রয়েছে, তাকে আমরা সম্মান করি। আমরা শুধুমাত্র বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছি।”

সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা প্রশ্ন করেছেন, “জ্যোতিষশাস্ত্র একটি বিজ্ঞান। আমরা এর ওপরে নেই। আমরা বলছি যে, এটা তো বিচার বিভাগীয় ফোরামের একটি আবেদন গ্রহণ করার সময়। এই সময়ে এটা (জ্যোতিষশাস্ত্র) কি একটা প্রশ্ন হতে পারে?” বিচারপতি পঙ্কজ মিথাল বলেন, “আমরা বুঝতে পারছি না যে, কেন জ্যোতিষের দিকটি বিবেচনা করা হয়েছে...।”

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করার সময়, সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, হাইকোর্ট যোগ্যতার ভিত্তিতে জামিনের আবেদন বিবেচনা করতে পারে।

আরও পড়ুন-

মোদী সরকার ‘বন্দে ভারত’ চালু করে জনগণের চোখে ধাঁধা লাগাচ্ছে: রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
চলন্ত ট্রেনের মধ্যে যুবকের যৌনাঙ্গ স্পর্শ করে বৃহন্নলাদের জুলমবাজি, দিঘাগামী ট্রেনে চূড়ান্ত অসভ্যতা

কীভাবে ঘটল করমন্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা? একসাথে ৩টি ট্রেনের ধাক্কা লাগা নিয়ে উঠছে বড় প্রশ্ন