সংক্ষিপ্ত

  • উত্তরপ্রদেশে শিক্ষাঙ্গনে বড়সড় জালিয়াতি
  • একসঙ্গে ২৫টি স্কুলে শিক্ষকতার অভিযোগ
  • শিক্ষিকা ১৩ মাস ধরে প্রায় ১ কোটি টাকা বেতন তোলেন
  • বিষয়টি জানাজানি হতেই বেপাত্তা ওই শিক্ষিকা

দেশে ক্রমেই বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সেই কারণে গত ২৪ মার্চ থেকে লকডাউন চলছে ভারতে। বন্ধ রয়েছে স্কুস, কলেজ সহ সবরকম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর এর মধ্যেই উত্তরপ্রদেশের এক শিক্ষিকার বেতন তাক লাগিয়ে দিয়েছে সকলকে। জানা যাচ্ছে ওই স্কুল শিক্ষিকা গত এক বছরে প্রায় ১ কোটি টাকা বেতল তুলেছেন। আরও অবাক হওয়ার কাণ্ড, তিনি নাকি একসঙ্গে ২৫টি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন।

উত্তরপ্রদেশের  রায়বেরিলির বুনিয়াদি শিক্ষা দফতরের অধীনে কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষিকা হিসেবে যুক্ত রয়েছেন অনামিকা শুক্লা। গত কয়েক মাস ধরে রাজ্যের সব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি ডেটাবেস তৈরি করছে যোগী প্রশাসন। আর এই ডেটাবেস তৈরি করতে গিয়েই বেরিয়ে এল কেউটে। জানা যায়  কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ের পাশাপাশি অনামিকা শুক্লা উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় আরও ২৪টি বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হিসাবে যুক্ত রয়েছেন। আর সেইজন্য গত এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিটি স্কুলের জন্য আলাদা করে বেতনও পেয়েছেন তিনি। যার সম্মিলিত পরিমাণ প্রায় ১ কোটি টাকা। এই ঘটনা সামনে আসতেই চক্ষু চড়কগাছ উত্তরপ্রদেশ সরকারের।

আরও পড়ুন: গুজরাতের উলট পুরাণ মধ্যপ্রদেশে, বিজেপি ছেড়ে কমলনাথের হাত ধরলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী

পূর্ণ সময়ের শিক্ষিকা হিসাবে কস্তুরবা গাঁধী বালিকা বিদ্যালয়ে কাজ করেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের অমেঠি, আম্বেদকর নগর, রায়বরেলি, প্রয়াগরাজ, আলিগড় সহ একাধিক জেলার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবেও নাম রয়েছে তার। এই সব স্কুলের শিক্ষিকা হিসাবে ১৩ মাসে প্রায় এক কোটি টাকা বেতন তুলেছেন। অনামিকা। এমনকি চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রতিটি স্কুলে শিক্ষকতা করার জন্য বেতন তুলেছেন তিনি। 

ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকে অবশ্য ওই শিক্ষিকার আর কোনও হদিশ নেই। কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, স্কুল থেকে মেডিক্যাল কারণ দেখিয়ে ছুটি নিয়েছিলেন তিনি। এখনও কাজে যোগ দেননি।

আরও পড়ুন: ফের ভয়াবহ দুর্ঘটনা যোগী রাজ্যে, ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু ২ শিশু সহ একই পরিবারের ৯ সদস্যের

 ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয় সেখানকার শিক্ষা দফতর। বিভিন্ন স্কুলগুলিতে তাঁর সম্পর্কে জানানো হয়। স্বাস্থ্য দফতরের কাছে থাকা নথিপত্র থেকে জানা গিয়েছে অনামিকার বাড়ি মৈনপুরীতে। ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল রায়বরেলীর একটি স্কুলে। এর পর থেকেই বেপাত্তা হয়েছেন অনামিকা।

অভিযুক্ত  শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের শিক্ষা দফতর। বিভিন্ন স্কুলগুলিতে তাঁর সম্পর্কে জানানো হয়েছে। বুনিয়াদি শিক্ষা দফতরের তথ্য অনুযায়ী, অনামিকা মৈনপুরী জেলার বাসিন্দা। ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল রায়বরেলীর একটি স্কুলে। এর পর থেকেই বেপাত্তা হয়েছেন অনামিকা।  এই ঘটনা জানাজানির পরে দফতরের তরফে তাঁর ঠিকানায় একটি নোটিসও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনও জবাব পাওয়া যায়নি। বর্তমানে অবশ্য তাঁর বেতন আটকে দেওয়া হয়েছে।

কোন কোন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তাঁর বেতনের টাকা জমা হত, তাও  খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সেই টাকা অন্য কোনও অ্যাকাউন্টে সরিয়ে রাখা হত কি না, তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। স্কুল এডুকেশনের ডিরেক্টর জেনারেল বিজয় কিরণ আনন্দ বলেছেন, ‘‘বেপাত্তা ওই শিক্ষিকার ব্যাপারে  বিস্তারিত জানতে তদন্ত করা হচ্ছে।’’ প্রেরণা নামের অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশে হাজিরা নিশ্চিত করতে হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। প্রযুক্তি এড়িয়ে কী ভাবে এতগুলি স্কুলে অনামিকা হাজিরা দিত, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কিরণ আনন্দ।   

উত্তরপ্রদেশের বুনিয়াদি শিক্ষা মন্ত্রী ডক্টর সতীশ দ্বিবেদি জানিয়েছেন, “শিক্ষা দফতর এই ঘটনার তদন্ত করছে। যদি ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হয় তাহলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।"