সংক্ষিপ্ত
কোভিডের তৃতীয় তরঙ্গের (Covid-19 Third Wave) মধ্যে যুক্তরাজ্যে (United Kingdom) হানা দিল লাসা ফিভার (Lassa Feaver) বা লাসা জ্বর। কী এই রোগ, উপসর্গগুলি কী কী, কতটা উদ্বেগের এই রোগ - জেনে নিন সবকিছু।
কোভিডের তৃতীয় তরঙ্গের (Covid-19 Third Wave) পর, গোটা বিশ্ব যখন নিউ নর্মাল (New Normal) বা নতুন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা শুরু করেছে, সেই সময়ই ফের বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টি করল নতুন এক ভাইরাস। যুক্তরাজ্যে (United Kingdom) অন্তত তিনজনের ক্ষেত্রে লাসা ফিভার (Lassa Feaver) বা লাসা জ্বর নিশ্চিত করা গিয়েছে। লাসা জ্বর এক ধরনের ইঁদুর-বাহিত (Rats) তীব্র ভাইরাল রোগ। সাধারণত, পশ্চিম আফ্রিকায় এই রোগ দেখা যায়। এই রোগ কিন্তু প্রাণ-ঘাতী হতে পারে।
প্রথম ধরা পড়েছিল নাইজেরিয়ার লাসায়
তিনজন রোগীর মধ্যে, বেডফোর্ডশায়ারের (Bedfordshire) এক ব্যক্তির ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, তিনজনের ক্ষেত্রেই পশ্চিম আফ্রিকায় (West Africa) ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে। নাইজেরিয়ার (Nigeria) শহর লাসার (Lassa) নামানুসারেই এই ভাইরাসটির নামকরণ করা হয়েছে। কারণ ১৯৬৯ সালে এই শহরেই লাসা জ্বরের প্রথম কেস ধরা পড়েছিল। পশ্চিম আফ্রিকায় প্রতি বছর আনুমানিক ১ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ মানুষ লাসা জ্বরে আক্রান্ত হন। আর মৃত্যু হয় প্রায় ৫,০০০ জনের। এই তীব্র ভাইরাল সংক্রমণ সাধারণত সিয়েরা লিওন (Sierra Leone), লাইবেরিয়া (Liberia), গিনি (Guinea) এবং নাইজেরিয়া-সহ পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলিতেই দেখা যায়। আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ফলে এই ভাইরাস এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়িয়েছে। ভারতে এখনও পর্যন্ত কোনও এই রোগ কোনওদিন ধরা পড়েনি, তবে কোভিডের মধ্যে বিশেষজ্ঞরা পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছেন।
কতটা উদ্বেগের এই রোগ?
লাসা জ্বর রোগের অবশ্য মৃত্যুর হার কম, এক শতাংশের মতো। কিন্তু, গর্ভবতী মহিলাদের মতো নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার বেশি। এই রোগে আক্রান্তদের প্রায় ৮০ শতাংশ উপসর্গবিহীন হয় বলে রোগ নির্ণয় করা যায় না। কিছু কিছু রোগীকে অবশ্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। তাদের গুরুতর মাল্টি-সিস্টেম রোগ হতে পারে। এই রোগীদের ১৫ শতাংশের মৃত্যু হতে পারে। লাসা ফিভার ভাইরাস যদি রোগীর লিভার, কিডনি বা প্লীহায় পৌঁছে যায়, তবে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।
কীভাবে এই ভাইরাস সংক্রামিত হয়?
সংক্রামিত ব্যক্তির প্রস্রাব বা মল থেকে ইঁদুরের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তির দেহরসের সংস্পর্শে কোন সুস্থ ব্যক্তি এলেও রোগটি ছড়াতে পারে। চোখ, নাক বা মুখের মাধ্যমেও এই ভাইরাস ছড়াতে পারে। তবে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রেই এই ভাইরাস ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সাধারণ সামাজিক পরিবেশে অতটা ছড়ায় না। কারণ, আলিঙ্গন, হাত মেলানো বা সংক্রামিত ব্যক্তির কাছাকাছি আসার মতো নৈমিত্তিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায় না।
লাসা জ্বরের উপসর্গ
লাসা জ্বরের উপসর্গগুলি বৈচিত্র্যময়। পালমোনারি, কার্ডিয়াক এবং স্নায়বিক সমস্যা দেকা দিতে পারে। লাসা জ্বরের লক্ষণগুলি সাধারণত ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার এক থেকে তিন সপ্তাহ পরে দেখা দেয়। রোগের হালকা উপসর্গগলির মধ্যে রয়েছে সামান্য জ্বর, ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং মাথাব্যথা। গুরুতর লক্ষণগুলি হল, রক্তপাত, শ্বাসকষ্ট, বমি, মুখ ফুলে যাওয়া, বুকে, পিঠে ও পেটে ব্যথা এবং শক। ভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনেরই কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। তবে লিভার, কিডনি বা প্লীহাকে প্রভাবিত করলে, লক্ষণ দেখাা দেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যএ মৃত্যু ঘটতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে প্রাণ না গেলেও দেখা যেতে পারে বধিরতা। আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিভিন্ন মাত্রার বধিরতার কথা রিপোর্ট করেন। যা অনেক ক্ষেত্রেই স্থায়ী হয়।
লাসা জ্বরের চিকিৎসা
যদি প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা যায়, তবে রিহাইড্রেশন এবং উপসর্গগুলির চিকিত্সাই বেঁচে থাকার সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তোলে। এছাড়া, অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ রিবাভিরিন লাসা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে এটা কীভাবে কাজ করে তা এখনও জানা যায়নি। সংক্রামিত হওয়া এড়ানোর সর্বোত্তম উপায় হল ইঁদুরের সংস্পর্শ এড়ানো।