সংক্ষিপ্ত

  • পাথর হয়ে যাচ্ছে ছোট্ট শিশু
  • বিরল রোগে আক্রান্ত ছোট্ট লেক্সি
  • ২০ লক্ষ মানুষের মধ্যে একজনের এই রোগ হয়
  • মাংসপেশির মধ্যে তৈরি হচ্ছে হাড়

লেক্সি রবিনস, পাঁচ মাস বয়সের ভীষণ মিষ্টি এক খুদে। সামনে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে সে কোনও জটিল রোগে আক্রান্ত। এক বিরল রোগে আক্রান্ত লেক্সি।  চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন প্রতি ২০ লক্ষ মানুষের মধ্যে একজনের হয় এই বিরল রোগ। কী সেই রোগ? চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন এই রোগের কোনও চিকিৎসা সেই অর্থে নেই। এই রোগে শিশুটির শরীর ধীরে ধীরে পাথর হয়ে যাচ্ছে। বিরল জিনঘটিত রোগে লেক্সির শরীরের মাংসপেশী হাড়ে পরিণত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

৩১শে জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করে লেক্সি। ব্রিটেনের হার্টফোর্ডশায়ারের হেমেল হেম্পস্টিডের বাসিন্দা অ্যালেক্স এবং ডেভের সন্তান সে। অন্যান্য সদ্যোজাতের মতোই সুস্থ স্বাভাবিক ছিল সে। শুধু দুটি বিষয় চিকিৎসকদের ভাবাচ্ছিল, প্রথমত সে তার বুড়ো আঙুল নাড়াতে পারত না ও তার পায়ের আঙুল আকারে বেশ বড় ছিল। এই নিয়ে তাঁর বাবা মা বিভিন্ন চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। এপ্রিল মাসে করা হয় এক্স-রে। দেখা যায় লেক্সির পায়ের বুড়ো আঙুলের হার বড়ো, চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয় বুনিয়নস (bunions)। ফলে লেক্সি যে রোগে আক্রান্ত হয়েছে তার নাম ফাইব্রডিসপ্লাজিয়া ওসিফিক্যান্স প্রগ্রেসিভা বা Fibrodysplasia Ossificans Progressiva (FOP)। 

এফওপি হাড়ের কাঠামোর বাইরেও হাড় তৈরি করে, ফলে মাংসপেশীতে হাড় তৈরি হয়ে শক্ত হয়ে থাকে চামড়া, ঠিক যেন পাথরের তৈরি দেখতে লাগে শরীরের সেই অংশ। এই রোগ আরও বাড়তে পারে, যদি ওই শিশু কোনও রকম মানসিক চাপে থাকে। এই রোগের জন্য লেক্সি জীবনে কোনও দিন কোনও ইঞ্জেকশন, ভ্যাকসিন বা দাঁতের রোগের চিকিৎসা করাতে পারবে না। এমনকী সে কোনওদিন সন্তান ধারণ করতে পারবে না বলে জানানো হয়েছে। 

এক্স-রে করার পরে লেক্সির শরীরের এই অস্বাভাবিকতা সম্পর্কে জেনেছিলেন তার বাবা মা। লেক্সির মা অ্যালেক্স জানান, সে হাঁটতে পারবে না বোঝা গিয়েছিল, কিন্তু এই রোগ বিরলতম। ছোট্ট লেক্সি খুব চটপটে ও বুদ্ধিমান শিশু। সে সারাক্ষণ হাসে। খুব কম সময়েই তাকে কাঁদতে দেখা যায়। 

তাই তাকে দ্রুত সুস্থ করে তোলার প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তৈরি করা হয়েছে ফান্ড, যাতে অনুদান পেয়ে লেক্সির চিকিৎসা চালানো যায়। বিশ্বের বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলেছেন লেক্সির বাবা মা। তাঁদের পরামর্শ মতোই চিকিৎসা চলছে। 

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে মাংসপেশী এবং কানেক্টিভ টিস্যুর টেন্ডন এবং লিগামেন্টগুলো হাড়ে পরিণত হয়। এই রোগে আক্রান্ত হলে কঙ্কালের বাইরেও হাড়ের গঠন হতে পারে, ফলে চলাচল ফেরা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এজন্য এই রোগকে প্রায়ই ‘পাথর হয়ে যাওয়ার’ সঙ্গে তুলনা করা হয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ২০ বছর বয়সেই চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায় ৪০ বছর বাঁচে।