সংক্ষিপ্ত

প্লাস্টিক দূষণ (Plastic Pollution) বন্ধে হাইড্রোজেল নামে এক বিকল্প পদার্থ উদ্ভাবন করল চিন (China)। স্যামন (Salmon) মাছের শুক্রানু ব্যবহার করে এই পদার্থ তৈরি করা হয়। 
 

বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সমস্যা হল প্লাস্টিক দূষণ (Plastic Pollution)। আধুনিক সমাজের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার রয়েছে। ক্যারি ব্যাগ থেকে শুরু করে বোতল, প্যাকেজিং-এর মোড়ক - প্লাস্টিক আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। তবে একই সঙ্গে প্লাস্টিক, পৃথিবীর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করেছে। তাই প্লাস্টিকের বিকল্প পদার্থের খোঁজ চলছে বহুদিন ধরে। এতদিনে, চিনা (China) বিজ্ঞানীরা সম্ভবত এর উত্তর খুঁজে পেলেন। আর তাও আবার স্যামন (Salmon) মাছের শুক্রানু থেকে!

শুনতে অবিশ্বাস্য লাগতে পারে, কিন্তু, চিনের তিয়ানজিন বিশ্ববিদ্যালয়ের (Tianjin University) বিজ্ঞানীরা স্যামন মাছের শুক্রাণু  এবং উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করেই, প্লাস্টিকের বিকল্প একটি পদার্থ তৈরি করেছেন, যার নাম 'হাইড্রোজেল' (Hydrogel)। এই হাইড্রোজেল পুরোপুরি পরিবেশ বান্ধব (Eco-friendly) বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। স্যামন মাছের শুক্রাণুর দুটি ডিএনএ স্ট্র্যান্ডের সঙ্গে উদ্ভিজ্জ তেলের বিভিন্ন রাসায়নিক মিলিয়ে এই শক্তিশালী অথচ পরিবেশবান্ধব ম্যানুফ্যাকচারিং উপাদান তৈরি করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত, এই যুগান্তকারী উপাদানটি দিয়ে একটি চায়ের কাপ, একটি খেলনা এবং ডিএনএ কাঠামোর মডেল তৈরি করা হয়েছে। চিনা গবেষকদের দাবি, চিরাচরিত প্লাস্টিকের তুলনায় হাইড্রোজেল তৈরির করতে ৯৭ শতাংশ কম কার্বন নির্গমন হবে।

তবে এই পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিকের বিকল্প উপাদানটির একটি সীমাবদ্ধতা আছে। গত কয়েক দশক ধরেই বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানীরা পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক তৈরি করার চেষ্টা করছেন। প্লাস্টিককে ধ্বংস না করতে পারলেও, তাকে পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে দূষণ কমানোর প্রচেষ্টা করা হয়েছে। কর্নস্টার্চ এবং শৈবাল ব্যবহার করে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক তৈরিও করা হয়েছে, তবে এগুলি উৎপাদনের জন্যও প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। তবে, হাইড্রোজেল থেকে তৈরি পরিবেশ-বান্ধব প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করা খুবই সহজ বলে জানিয়েছেন চিনা বিজ্ঞানীরা। শুধু একবার জলে ডোবালেই হল, স্যামন মাছের ডিএনএ-তে থাকা এনজাইমগুলি ফের ওই বস্তুকে জেলে অবস্থায় ফিরিয়ে আনবে, যাকে কাজে লাগিয়ে নতুন জিনিস তৈরি করা যেতে পারে। 

কাজেই, এই বিকল্প প্লাস্টিকের তৈরি কোনও জিনিসে কোনও রকম জল লাগানো চলবে না, উপাদানটিকে সম্পূর্ণরূপে শুষ্ক রাখলে, তবেই এটি কাজ করবে। ফলে এই স্যামন মাছের বীর্য দিয়ে তৈরি কাপ, বোতল - সবই অকেজো। জল বা অন্য কোনও তরল তাতে রাখা যাবে না। অনেক ক্ষেত্রেই জল বা আদ্রতা থেকে কোনও পণ্যকে রক্ষা করার জন্যই প্লাস্টিকের মোড়ক ব্যবহার করা হয়। কাজেই,  প্লাস্টিকের বিকল্প হিসাবে হাইড্রোজেল কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। 

তবে তা সত্ত্বেও এই পদার্থ অন্তত চিরাচরিত প্লাস্টিকের থেকে অনেক ভাল, বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্বে প্রতি বছর আনুমানিক প্রায় ৩০০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উত্পাদন করা হয়। এই বিপুল উৎপাদিত প্লাস্টিকের বেশিরভাগই পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়। বছরের পর বছর এই প্লাস্টিক নষ্ট হয় না। বদলে সেগুলি ভেঙ্গে গিয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। সেই মাইক্রোপ্লাস্টিক সমুদ্রের জলে মিশে গিয়ে মাছ, পাখি, হয়ে মানুষের দেহে গিয়ে জমা হয়। যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। ক্ষতিকারক একবার ব্যবহারের প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে, চিনা বিজ্ঞানীদের এই অভিনব উদ্ভাবনই কি আগামী পৃথিবীর সমাধান হতে চলেছে? এর উত্তর সময়ই দিতে পারবে।