সংক্ষিপ্ত

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ টোঙ্গার (Tonga) কাছে, সমুদ্রের নিচের অবস্থিত একটি আগ্নেয়গিরিতে (Volcano) বড়মাপের অগ্ন্যুৎপাত। প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আছড়ে পড়ল সুনামি (Tsunami)। 

হাওয়াই, আলাস্কা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আছড়ে পড়ল সুনামি (Tsunami)। শনিবার প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ টোঙ্গার (Tonga) কাছে, সমুদ্রের নিচের অবস্থিত একটি আগ্নেয়গিরিতে (Volcano) বড়মাপের অগ্ন্যুৎপাত ঘটে, যার জেরেই উপকূল জুড়ে আছড়ে পড়েছে বিশাল সুনামি তরঙ্গ। উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা সুনামির সতর্কতা পেতেই উচ্চ ভূমির সন্ধানে ছুটতে শুরু করেছিলেন। অগ্ন্যুৎপাতের পর বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে, ছোট দ্বীপরাষ্ট্রটির সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায়, হতাহতের বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে এখন বিশদ কোনো খবর পাওয়া যায়নি। 

পরে, অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া বিভাগের দাবি করেছে, টোঙ্গার রাজধানীতে এদিন প্রায় চার ফুট উঁচু সুনামির তরঙ্গ আঘাত হেনেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অগ্ন্যুৎপাতের পর টোঙ্গার আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো ছাই ঝড়ে পড়তেও দেখা গিয়েছে। যে ডুবো আগ্নেয়গিরিতে এই বিশাল অগ্নুৎপাত ঘটেছে, তার নাম 'হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হাপাই'। আগ্নেয়গিরিটি টোঙ্গার  প্রধান দ্বীপ টোঙ্গাটাপু থেকে প্রায় ৪০ মাইল উত্তরে অবস্থিত। বিশদ তথ্য এখনও না পাওয়া গেলেও, সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সব ছবি ও ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে উপকূলীয় এলাকাগুলিতে বাড়িঘর এবং বড় বড় ভবনগুলিতে আছড়ে পড়েছে বড় মাপের সুনামি ঢেউ। 

শুধু টোঙ্গা নয়, কাছাকাছি অবস্থিত ফিজি এবং সামোয়া দ্বীপেও শনিবার সন্ধ্যায় সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সামোয়া দ্বীপপুঞ্জ সুনামির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। সতর্কতাও তুলে নেওয়া হয়েছে। তারপরও জনগণকে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে দূরে থাকার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। হাওয়াইয়ের প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে বড় ধরণের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। দ্বীপগুলোতে শুধুমাত্র সামান্য বন্যা হয়েছে, সুনামি তরঙ্গের উচ্চতা ছিল আধ মিটার মতো।

শনিবার সমুদ্রের নিচের আগ্নেয়গিরিটিতে অগ্ন্যুৎপাতের পরই সমগ্র টোঙ্গায় সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। এত বড় মাপের অগ্নুৎপাত হয়েছে যে স্যাটেলাইট চিত্রতেও তা স্পষ্ট ধরা পড়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরের নীল জলের উপরে একটি মাশরুম বা ব্যাঙের ছাতার মতো ছাই, বাষ্প এবং গ্যাসের মেঘ তৈরি হতে দেখা গিয়েছে। হুঙ্গা টোঙ্গা-হুঙ্গা হাপাই আগ্নেয়গিরিতে গত শুক্রবারই প্রথম অগ্নুৎপাত ঘটেছিল বলে জানানো হয়েছে স্থানীয় সংবাদ প্রতিবেদনে। শুক্রবার ভোরে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হওয়ার পর থেকেই বিজ্ঞানীরা আগ্নেয়গিরিটির কাছে ব্যাপক অগ্নুৎপাত এবং বজ্রপাত হতে দেখেছিলেন। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছে। সেই প্রবণতা ধরে রেখেই ওই ব্যাপক আকারের বিস্ফোরণ ঘটে আগ্নেয়গিরিটিতে। সিএনএন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে প্রায় ২০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত লাভা ও ছাই উঠে এসেছিল। 

গত বেশ কয়েক বছর ধরে আগ্নেয়গিরিটি তুলনামূলকভাবে নিষ্ক্রিয় ছিল। কিন্তু, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মাঝে মাঝে অগ্নুৎপাত হতে শুরু করেছিল। তবে, ৩ জানুয়ারি নাগাদ তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেও গিয়েছিল। এর আগে ২০১৪ এই আগ্নেয়গিরিটিতেই বড় মাপের অগ্ন্যুৎপাতের ফলে একটি নতুন দ্বীপ তৈরি হয়েছিল। সেই দ্বীপে ইতিমধ্যেই ফুল, গাছপালা, পশু-পাখিদের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছিল। তবে এই অগ্নুৎপাতের ফলে সেই বাস্তুতন্ত্রও ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।