সংক্ষিপ্ত
জাতীয় নিরাপত্তা আইন দিয়ে দেশের মানুষের প্রতিবাদ বন্ধ করার পর এবার কি বিশ্বের সংবাদসংস্থাগুলির মুখও বন্ধ করতে চায় জিনপিং সরকার? আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড়।
কোভিড টিকাকরণের পরেও এক টানা ৩ মাস ধরে লকডাউন। করোনা ভাইরাস একেবারে দমন করার জন্য দেশে ‘কোভিড-শূন্য নীতি’ নিয়েছে চিনের শি জিনপিং সরকার। লকডাউনের কোপে পড়ে বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি। এই ক্ষতিতে ইন্ধন জোগায় সাংহাইয়ের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ড। একটি বাড়িকে ১০০ দিন ধরে লকডাউন করে রাখা হয়েছিল, ফলে সেই বাড়িতে ভয়ঙ্কর আগুন লেগে গেলেও বাইরে বেরোতে পারেননি বাসিন্দারা। ভেতরেই পুড়ে মরতে হয় ১০ নিরীহ নাগরিককে। এই ঘটনার পর বিভিন্ন শহরে, শিক্ষাক্ষেত্রে, রাস্তা-ঘাটে প্রতিবাদ, স্লোগান, পতাকা, সাদা কাগজ, খালি হাত এমনকি যেখানে সেখানে পুলিশকে গালাগালি দিয়েও ক্ষোভ উগরে দিতে থাকেন সাধারণ মানুষ। এই প্রতিবাদের মধ্যেই রবিবার যা ঘটল, তা টনক নড়িয়ে দিল গোটা বিশ্বের সংবাদ মহলের।
চিন দেশে জাতীয় নিরাপত্তা আইন বলবৎ করে লকডাউনের বিরুদ্ধে হতে থাকা প্রচণ্ড প্রতিবাদ দমন করতে নেমেছে প্রশাসন। পালটা প্রশাসনের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে দলে দলে পথে নেমেছেন দেশের মানুষ। সরকারের কড়া কোভিডবিধির বিরুদ্ধে তাঁদের বিক্ষোভের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। সরকারের বিরুদ্ধে এরকম স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন চিন দেশে প্রায় বিরল। কিন্তু, রবিবার সরকারের কোভিড-নীতির বিরুদ্ধে জনগণের বিক্ষোভের খবর কভার করতে গিয়েছিলেন বিবিসি চ্যানেলের এক সাংবাদিক। আন্দোলন দমন করতে গিয়ে সেই সাংবাদিককে ধরেই বেধড়ক মারতে থাকে চিনের পুলিশ। কর্তব্যরত অবস্থায় থাকাকালীন তাঁকে রাস্তায় ফেলে লাথিও মারা হতে থাকে। এরপর তাঁর হাতে হাতকড়াও পরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তুলেছে বিবিসি সংবাদসংস্থা।
বিবিসির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, "বিবিসি তার সাংবাদিক এড লরেন্সের সঙ্গে চিনের পুলিশের আচরণের বিষয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। লরেন্স সাংহাইতে চলে বিক্ষোভ কভার করার সময় গ্রেফতার হন। তাঁর হাতে হাতকড়া পরানো হয়েছিল। মুক্তি দেওয়ার আগে তাঁকে বেশ কয়েক ঘণ্টা যাবৎ আটকে রাখা হয়েছিল। গ্রেফতারির সময়, তাকে পুলিশ প্রচণ্ড মারধর করে, এমনকি তাঁকে লাথিও মারা হয়েছিল। তিনি একজন স্বীকৃত সাংবাদিক, কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় তাঁর সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে।”
বিবিসি-র দাবি, এটা খুবই উদ্বেগজনক ঘটনা যে, তাদের একজন স্বীকৃত সাংবাদিক তাঁর অফিসিয়াল দায়িত্ব পালনের সময় এভাবে পুলিশি হামলার শিকার হলেন। "আমাদের কাছে চিনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা বা ক্ষমা চাওয়া হয়নি। যে পুলিশ কর্মকর্তাদের সাংবাদিককে পরে মুক্ত করে দিয়েছিলেন, তাঁরা জানিয়েছেন যে, ভিড়ের মধ্যে যাতে ওই সাংবাদিক কোভিড দ্বারা আক্রান্ত না হন, অর্থাৎ, তাঁর নিজের ভালোর জন্যই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা এটাকে কোনও বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা বলে মনে করি না,” স্পষ্ট জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা।
আরও পড়ুন-
‘আপনার এটিএম কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে’, ফোন কল পেয়েই ভুল করে বসলেন পূর্ব রেলের অবসরপ্রাপ্ত ম্যানেজার
প্রতিবাদের ভাষা শুধুই সাদা কাগজ অথবা দুটো খালি হাত, চিন দেশ জুড়ে শাসকের বিরুদ্ধে মুখর ছাত্রছাত্রীরা