সংক্ষিপ্ত

পাণ্ডবেশ্বর গ্রামে পালদের পুজোতে তিনটি কার্তিক - বড় কার্তিক, মেজো কার্তিক এবং ছোটো কার্তিক এর মূর্তি পূজিত হয়। ঐতিহাসিকরা এই তিন কার্তিকের পুজো দেড়শো বছরেরও অধিক প্রাচীন  বলে মনে করেন। 
 

বাংলায় লোকবিশ্বাস, কার্তিক ঠাকুরের (Kartik Thakur) কৃপা পেলে পুত্রলাভ এবং ধনলাভ হয়।বাংলার গণিকা সমাজে কার্তিক পূজা বিশেষ ভাবে জনপ্রিয়। সুঠাম গড়নের বস্ত্রহীন কার্তিকের। লড়াই পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায় খুব বিখ্যাত। যুদ্ধ আর সন্তান লাভ- দুইয়ের অনুষঙ্গেই কার্তিক ঠাকুরকে (Kartik Thakur) শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে আপামর বাঙালি। বাংলার কার্তিক ঠাকুরের অজানা কথা (Unknown Facts of Kartik Thakur)। লিখছেন- অনিরুদ্ধ সরকার 

(১)পশ্চিমবঙ্গের চুঁচুড়া-বাঁশবেড়িয়া, হালিশহর, কাটোয়া, সোনামুখী, পাণ্ডবেশ্বর সহ হুগলী- বর্ধমানের একাধিক এলাকায় কার্তিক পূজা (Kartik Puja) বেশ জনপ্রিয়। কার্তিক ঠাকুরকে নিয়ে আজও গ্রাম বাংলার লোকজন ছড়া কাটে –“কার্তিক ঠাকুর হ্যাংলা, একবার আসেন মায়ের সাথে, একবার আসেন একলা।”

আরও পড়ুন- Astrology News- কন্যা রাশির ব্যক্তিদের কেমন কাটবে এই মাস, দেখে নিন

(২)বাংলার গণিকা সমাজে কার্তিক পূজা (Kartik Puja) বিশেষ ভাবে জনপ্রিয়। 'জমিদার' ও 'কলকাতার বাবু' কালচারের যুগে কলকাতা ও তার পাশ্ববর্তী বেশ কিছু এলাকায় গণিকাদের কার্তিক পুজো (Kartik Puja) হত বেশ জাঁকিয়ে। বাংলার যেসব জায়গায় এখনও গণিকাদের প্রভাব রয়েছে সেসব এলাকায় এখনও অল্পবিস্তর  কার্তিক পুজো হয়।

(৩) বর্ধমানের পালদের কার্তিক শতাব্দী প্রাচীন। বর্ধমানের রাজাদের তত্ত্বাবধানে পালদের জমিদারী তখন পুরোদমে শুরু হয়েছে। আশেপাশের সমস্ত গ্রামের মধ্যে পালদের জমিদারী ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস বলছে এই পাল রাজারাই বর্ধমানে প্রথম কার্তিক পুজোর (Kartik Puja) প্রচলন করেন।

(৪)পশ্চিম বর্ধমান জেলায় গৌরবাজার যা পান্ডবেশ্বর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে ১৬৬ বছর ধরে পালদের কার্তিক পুজো (Kartik Puja) হয়ে আসছে। 

(৫)পাণ্ডবেশ্বর গ্রামে পালদের পুজোতে তিনটি কার্তিক - বড় কার্তিক, মেজো কার্তিক এবং ছোটো কার্তিক এর মূর্তি পূজিত হয়। ঐতিহাসিকরা এই তিন কার্তিকের পুজো দেড়শো বছরেরও অধিক প্রাচীন  বলে মনে করেন। 

(৬)১৮৫৩ সাল নাগাদ পাণ্ডবেশ্বরের জমিদার জয়নারায়ণ পাল, শ্যাম পাল ও লক্ষ্মীনারায়ণ পাল সন্তানহীন হওয়ার কারণে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলেন। সেসময় একদিন রাতে জয়নারায়ণ স্বপ্নাদেশ পান ও তিন ভাই মিলে তিনটি কার্তিক পুজো (Kartik Puja) শুরু করেন। 

(৭)তিন ভাই মিলে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানে একসাথে তিনটি কার্তিক পুজো (Kartik Puja) শুরু করেন।

(৮)কার্তিক পুজো (Kartik Puja) করার পরই পাল ভাইদের শূন্য‌ কোল আলোকিত হয়।  ১৮৫৭ সালে লক্ষ্মীনারায়ণ পালের একটি পুত্র সন্তান হয় যার নামকরণ করা হয় ধ্বজাধারী পাল। তাঁর অন্য দুই ভাইয়ের একটি করে কন্যা সন্তান হয় । 

(৯)সৌভাগ্যের পরম্পরা অনুযায়ী পাণ্ডবেশ্বরের পাল জমিদারদের বংশধরেরা নিয়মিতভাবে এই পুজো করে আসছেন। জানা যায়,  এই পুজোর পর থেকে সন্তান না হওয়ার অন্ধকার সেই বংশকে আর এসে ঘিরে ধরেনি। 


(১০)কার্তিক ঠাকুরের সঙ্গে 'ছয়' সংখ্যা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। আর সেই কারণেই হয়ত স্ত্রী ষষ্ঠীর সাথে তার প্রচুর মিল রয়েছে৷ বাংলায় তাই কার্তিক পুজোর (Kartik Puja) একটা আলাদা প্রভাব রয়েছে। 

(১১)বাংলায় লোকবিশ্বাস, কার্তিক ঠাকুরের কৃপা পেলে পুত্রলাভ এবং ধনলাভ হয়। সেজন্য সদ্য বিয়ে হয়েছে অথবা বিয়ের এক বছর হয়ে গেছে কিন্তুু এখনও সন্তান আসেনি এমন দম্পতির বাড়ির সামনে কার্তিক ঠাকুরের (Kartik Thakur)  মূর্তি ফেলা বাংলার একটি জনপ্রিয় লোকাচারের মধ্যে পড়ে ।

(১২)সুঠাম গড়নের বস্ত্রহীন কার্তিকের। লড়াই পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায় খুব বিখ্যাত। 

(১৩) বাংলার বেশ কিছু এলাকায় বস্ত্রহীন কার্তিক পুজো (Kartik Puja) বেশ বিখ্যাত। সেখানে এক পুজোর সঙ্গে অন্য পুজোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘিরে জমে ওঠে 'কার্তিক লড়াই'। পুজোর এই বিশেষ দিনটিতে কাটোয়ার পথে এক বিরাট মিছিল বের হয়।পুজো-মণ্ডপগুলি  বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে।

(১৪) কাটোয়া, সোনামুখীতে 'কার্তিক লড়াই' জনপ্রিয় উৎসব। এই রেওয়াজ চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।কার ঠাকুর আগে যাবে এ বিষয় নিয়ে লড়াই চলে।এই অভিনব লড়াই বা যুদ্ধ রীতিতে রীতিমতো লাঠিসোটা, এমনকী তরোয়ালের ব্যবহার অবধি হয়। লড়াই শেষে বিজয়ী গোষ্ঠী কার্তিক নিয়ে যায় ।

(১৫)হালিশহরের’জ্যাংড়া কার্তিক’ ও ‘ধুমো কার্তিক’ পূজাও  বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সেখানেও একই ভাবে কার্তিক লড়াই হয়।

আরও পড়ুন- Kartik Puja 2021- কার্তিক ঠাকুর বৈদিক না পৌরাণিক দেবতা, জানুন ১০ অবাক করা তথ্য

আরও পড়ুন- Astrology News- মঙ্গলবারে বজরঙ্গবলীর পুজোয় এই ৪ রাশি পাবে বিশেষ কৃপা