সংক্ষিপ্ত

  • মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারিতেও বরফ গলল না 
  • ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা জুনিয়র চিকিৎসকদের 
  • কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার জন্য রাজ্যপালের আবেদন 
  • রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ আন্দোলনরত চিকিৎসকদের 

নিজেদের অবস্থান থেকে নড়ছেন না জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের সাফ কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-কে ক্ষমা চাইতে হবে। এরপরই আন্দোলন ওঠার বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে। আন্দোলনরত জুনিয়ার ডাক্তাররা এদিন এনআরএস হাসপাতালে বৈঠকে বসে। সেখানে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসএসকেএম হাসপাতালেও একই রকম আরও একটি বৈঠক হয়। সেখানেও আন্দোলন চালিয়ে যাওযার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসরা কোনওমতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এদিনের বক্তব্য মেনে নিতে চাননি। মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের বহিরাগত বলে বিবৃতি দিয়েছে তাতে ক্ষোভ জন্মেছে। আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের ক্ষোভকে প্রশমিত করার দূরে থাক উল্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগুনে ঘি ঢেলেছেন  বলেই মনে করা হচ্ছে। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারিকে কোনওভাবেই আমল দিতে রাজি নয় জুনিয়র ডাক্তাররা। উল্টে তারা গণ ইস্তফার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। 

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরও এনআরএস হাসপাতালে অচলাবস্থা কাটেনি। ১০ জুন থেকে এই এনআরএস থেকেই জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি যে হাতের বাইরে তা ভালোমতোই বুঝে যান এনআরএস-এর অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায়। এরমধ্যেই সিনিয়র নার্সরাও এনআরএস-এ কর্মবিরতি শুরু করেন। সিনিয়র চিকিৎসকরা কাজ শুরু করতে চাইলেও সহযোগিতা করার লোক না থাকলে কীভাবে কাজ হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। শেষমেশ, সন্ধ্য়ায় নিজের ইস্তফাপত্র স্বাস্থ্য সচিবের কাছে পাঠিয়ে দেন এনআরএস-এর অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায়। তিনি পরিষ্কার লিখে দেন যে সমস্যার সমাধানে তিনি ব্যর্থ তাই পদত্যাগ করছেন। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের একটি প্রতিনিধি দল। তারা রাজ্যপালে সঙ্গে দেখা করে একটি স্মারকলিপি জমা দেয় এবং কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানায়। চিকিৎসকদের পুলিশি নিরাপত্তা যেন যথোপযুক্তভাবে দেওয়া হয় সে আর্জিও তারা রাখে। পরে বাইরে বেরিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন তা কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় বলেও দাবি করেন রাজ্যপালের সাক্ষাৎ করে আসা জুনিয়র ডাক্তাররা। 

রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের চিকিৎসকদের সংগঠন। তাঁরা গোটা বিষয়ে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ দাবি করেন। রাজ্যে চিকিৎসায় অচলাবস্থার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করেন তাঁরা। জুনিয়র ডাক্তারদের অবস্থানের পাশেই দাঁড়িয়েছেন এবিভিপি-র চিকিৎসক শাখার প্রতিনিধি দলটি। 

সন্ধ্যায় চিকিৎসকদের যৌথ ফোরাম একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত। চিকিৎসকদের যৌথ ফোরামের পক্ষ থেকে তিনি সাফ জানিয়ে দেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের উপরে এসমা প্রয়োগ করা হলে রাজ্য জুড়ে আরও অচলাবস্থা তৈরি হবে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরও অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে চিকিৎসকদের যৌথ ফোরাম। জুনিয়র চিকিৎসকদের উপরে কোনও ধরনের গুন্ডামি বা মারধরের ঘটনা ঘটলে রাজ্য জুড়ে সমস্ত চিকিৎসকরাই কর্মবিরতি শুরু করে দেবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন অর্জুন দাশগুপ্ত। তবে, জুনিয়ক ডাক্তারদের কাছেও চিকিৎসকদের যৌথ ফোরামের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। এই আবেদনে তাঁদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা যেমন বলা হয়েছে, তেমনি মরণাপন্ন রোগীর চিকিৎসা সুনিশ্চিত করারও পরামর্শ দিয়েছে চিকিৎসকদের যৌথ ফোরাম। শুক্রবার বেলা ১১টায় চিকিৎসকদের যৌথ ফোরামের পক্ষ থেকে অবস্থান বিক্ষোভে বসার কথাও ঘোষণা করেছে। বিকেল ৪.৩০টায় এনআরএস-এর সামনে থেকে সিএনএমসি পর্যন্ত এক প্রতিকী প্রতিবাদ মিছিলেরও ডাক দিয়েছে চিকিৎসকদের যৌথ ফোরাম। এই মিছিলে নাগরিক সমাজকেও অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।