সংক্ষিপ্ত

  • পাহাড়ে ফিরেই হুঙ্কার বিমল গুরুঙের
  • তৃণমূল সমর্থন জানিয়ে বিজেপি হুঁশিয়ারি
  • হাত গুটিয়ে নেই বিনয়পন্থীরাও
  • পাহাড়ে বিমল-বিনয় সংঘাতের আশঙ্কা

তপন মল্লিক- ত্রিবর্ণ পতাকায় সাজানো চারপাশ। ব্যান্ড পার্টি বাজছে, গানের সঙ্গে চলছে নাচ। গত রবিবার অন্য এক উৎসবের মেজাজে ফেরে দার্জিলিং-এর চকবাজার। সাড়ে তিন বছর পর পাহাড়ে ফিরেছেন বিমল গুরুং। আর পাহাড়ে পা রেখে নিজের শক্তি জাহির করলেন তিনি। 
দিন কয়েক আগে শিলিগুড়িতে সদলবদলে সভা করেছিলেন। এদিন সরাসরি পা রাখলেন পাহাড়ে। কার্যত জনস্রোতের ভিড়ে দার্জিলিংয়ে পৌঁছন গুরুং। সুকনা, টুং, সোনাদা সর্বত্রই গুরুং ভক্তরা দাঁড়িয়ে থেকে অভিবাদন জানান তাঁদের নেতাকে। জনসভায় পৌঁছাতে তাঁকে ঘুম থেকে দার্জিলিং চকবাজার পর্যন্ত হাঁটতে হয়। 


তাঁর সভা ঘিরে জনতার উন্মাদনা ছিল নজর কাড়ার মতো। গুরুংপন্থী কর্মী–সমর্থকদের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। এদিনের সভামঞ্চ থেকে আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূলের প্রতি নিজের সমর্থন জাহির করার পাশাপাশি ১৫ দিনের মধ্যেই বিনয় তামাং এবং অনীত থাপাকে পাহাড় ছাড়ার হুমকি দিলেন মোর্চা নেতা বিমল গুরুং। 
সাড়ে তিন বছর পর পাহাড়ে ফিরে গুরুং আগের মতো পাহাড়বাসীর সমর্থন পান কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু গত রবিবার যেভাবে জনসমুদ্রে ভাসলেন তাতে পাহাড়ে যে এখনও তাঁর জনপ্রিয়তা আছে তা স্পষ্ট হয়ে গেল।
গুরুংয়ের হুমকির পালটা জবাবে বিনয় তামাং বলেন, ‘অশান্তি করার লক্ষ্যেই বিমল গুরুং পাহাড়ে ফিরেছেন। খুব তাড়াতাড়ি পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রাজ্য সরকারের ভাবা উচিৎ। পাহাড়ের মানুষ আমার পাশে আছে, বিমল গুরুং আমাকে মেরে ফেললেও পাহাড় থেকে সরাতে পারবে না’।  
গুরুংকে ডুয়ার্সে ঢুকতে না দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ভারতীয় মূল নিবাসী আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা রাজেশ লাকরা ওরফে টাইগারও।
প্রসঙ্গত, তিন বছর গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর গত ২১ অক্টোবর আচমকা কলকাতায় হাজির হয়েছিলেন বিমন গুরুং। শহরে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন যে ২০২১ সালে তৃণমূলকে সমর্থন করে তাঁরা নির্বাচনে লড়বেন। অন্যদিকে সাড়ে ৩ বছর পর পাহাড়ে ফিরে গুরুংপন্থী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা রোশন গিরিও কিছুদিন আগে কার্শিয়াঙের মোটর স্ট্যান্ডের সভা থেকে ২০২১–এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ওপর তাঁদের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানা। 
বছর শেষ হলে এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে শীতের পাহাড়ে যে উত্তাপের আবহ তৈরি হচ্ছে সেটা বেশ স্পষ্ট। রাজনৈতিক বিশেষঙ্গরা বলছেন, নির্বাচনের আগে মোর্চার দুই নেতাই গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে পাহাড়বাসীর সামনে এনে নিজেদের অস্তিত্ব টেকানোর চেষ্টা করছেন। বেশ কিছু কাল আগেই মোর্চার এই দুই নেতা পাহাড়ে ক্লোজ চ্যাপ্টার হয়ে গিয়েছিলেন। তাদের নাম পাহাড়ে আর কারওমুখে শোনা যেত না। ফের তাঁরা পাহাড়ের রাজনৈতিক আলোচনায় ফিরতে চাইছেন। অন্যদিকে পাহাড়ের মানুষের মন পেতে দুজনেই পৃথক গোর্খাল্যান্ডের কথাও জানিয়েছেন। গত ২১ অক্টোবর গুরুং মমতার ঢালাও প্রশংসা করেও জানাতে ভোলেন না যে মোর্চা গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে এক পাও সরে যায় নি। রোশন গিরিও জানান, ‘২০২৪–এর নির্বাচনে আমাদের গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে যে দল সমর্থন করবে তাদেরই সমর্থন করব আমরা।’‌ 
আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে পাহাড়ে ফিরে এস রোশন গিরি বিনয় তামাং, অনীত থাপাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। পাশাপাশি বিজেপি পাহাড়কে ধোঁকা দিয়েছে। তারা কোনও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি বলই একুশের নির্বাচনে দিদিকেই সমর্থন দেওয়ার কথা বলছেন। কার্শিয়াংয়ে রোশন গিরির সভাতেও প্রচুর লোকসমাগম হয়েছিল। অনেকে বলেছেন সেদিন অনীত থাপার খাসতালুক গুরুংপন্থী মোর্চা সমর্থকদের দখলে চলে গিয়েছিল। 
প্রসঙ্গত, বিমল গুরুং কলকাতায় পা দেওয়ার আগে পাহাড়ে বিমল-বিরোধী সভা, সমাবেশ, মিছিল করেছিল বিনয় তামাং, অনীত থাপারা। এমনকি তাঁরা নবান্নে এসে বৈঠকও করে গিয়েছিলেন। তখন তাঁরা জানিয়েছিলেন পাহাড়ে বিমল গুরুং ক্লোজড চ্যাপ্টার। তাঁর ফিরে আসার কোনও সম্ভবনা নেই। কিন্তু ঠিক তারপরই বিমল কলকাতায় পৌঁছে সাংবাদিক ডেকে মমতাকে সমর্থনের কথা জানিয়ে বুঝিয়ে দিলেন ফের তাঁকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হবে। আলোচনা হয়েছিল ঠিকই তবে মাত্র দু’দিন। 
তবে প্রশ্ন উঠেছিল যে লোকটি গত তিন বছর ধরে ফেরার, একাধিক মামলায় অভিযুক্ত, রাজ্য পুলিশ যাকে কিছুদিন আগে পর্যন্ত হন্যে হয়ে খুঁজেছে, কিভাবে তিনি কলকাতায় এসে সারাদিন ঘুরে বেড়ালেন, সাংবাদিক সম্মেলন করলেন, কেন তাকে পুলিশ গ্রেফতার করল না।  উলটে তিনি তৃণমূলের সমর্থনে পাহাড়ে নির্বাচনে লড়বেন এই কথা জানানোর পর শাসক দলের পক্ষ থেকে তাঁকে স্বাগত জানানো হল। এমনকি মোর্চা যে গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে এক পাও সরে যায় নি। একথা বলার পরও শাসক দল তৃণমূল গুরুংকে কিভাবে স্বাগত জানাল? অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন তবে মমতা কি পৃথক গোর্খাল্যান্ড বা বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করার দাবি মেনে নিলেন? 
এদিনও সভামঞ্চ থেকে দিদিমণিকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানানোর পর গোর্খাল্যান্ডের প্রসঙ্গ তুলেছেন গুরুং। বোঝা যাচ্ছে ২১-এর ভোটের আগে পাহাড়ে উত্তেজনার পারদ চড়াতে নেমেছেন গুরুং-রোশন-রা। পাহাড় জুড়ে ইতিমধ্যে ফিসফাস শুরু হয়ে গিয়েছে! অশান্তির আবহ তৈরি হতে পারে বলে আঁচ করছেন পাহাড়বাসী। একদিন গুরুংকে জব্দ করতে মমতা বিনয় তামাংদের পাশে পেয়েছিলেন কিন্তু লোকসভা ভোটে তাঁরা কার্যকরি ফল দিতে পারেননি। তবে কি তাঁদের বদলে এবার ফের গুরুং-গিরিকে কাছে টেনে নেবেন মমতা?