সংক্ষিপ্ত
- ডোমকল ও জলঙ্গি মানেই ছিল লাল গড়
- অতীতে কংগ্রেসও এই দুই খাস বাম তালুকে থাবা বসাতে পারেনি
- তৃণমূল এই দুই বিধানসভা কেন্দ্রেই আধিপত্য কায়েম করেছে
- বাম দুর্গ ভেঙে গিয়েছে ঘাসফুলের ধাক্কায়
বিগত বছরগুলোতে তীব্র তৃণমূল হাওয়াতেও বাম দুর্গ ধসে পড়েনি। মুর্শিদাবাদের ডোমকল ও জলঙ্গি মানেই ছিল লাল গড়। বামেদের শক্ত ঘাঁটি। বাম শাসনের জন্মলগ্ন থেকে একটা কথা প্রচলিত ছিল মুর্শিদাবাদের ডোমকল জলঙ্গি মানেই লাল দুর্গ। সেখানকার মানুষজন নাকি কাস্তে হাতুড়ি তারা ছাড়া আর কোন চিহ্নই চেনেন না। এমনকি অতীতে কংগ্রেসও কোনওদিন বামেদের এই দুই খাসতালুকে থাবা বসাতে পারেনি।
কিন্তু এবারের নির্বাচনে তৃণমূল এই দুই বিধানসভা কেন্দ্রেই কাস্তে-হাতুড়ি-তারাকে ভেঙে নিজেদের আধিপত্য কায়েম করেছে। বাম দুর্গ ভেঙে গিয়েছে ঘাসফুলের ধাক্কায়। ১৯৬৭ সাল থেকে ডোমকলে টানা প্রায় ৫৪ বছর ও জলঙ্গিতে ৪৫ বছর ধরে রাজত্ব করেছে বামেরা। সেই রেকর্ড ভেঙে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ইতিহাস গড়ল তৃণমূল।
তৃণমূলের দুই প্রার্থী জাফিকুল ইসলাম ও আব্দুর রাজ্জাক সেই রেকর্ড তৈরি করেছেন এবারের বিধানসভা নির্বাচনে। ডোমকলে সেই ১৯৬৭ সাল থেকে সিপিএম প্রার্থী জিতে আসছে। একবারের জন্যও এই কেন্দ্রে তাদের ক্ষমতা থেকে সরতে হয়নি। কিন্তু এবার এখানেও বিপুল ভোটে তারা পরাজিত হয়েছে। ডোমকলে ৪৭ হাজার ২০৫ ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী।
পার্শ্ববর্তী জলঙ্গি বিধানসভায় তৃণমূল জয়ী হয়েছে ৬৯ হাজার ৬১৬ ভোটে। আগামী দিনে আর আদৌও বামেরা এই দুই কেন্দ্রে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না তা নিয়ে বাম নেতারাই সংশয়ে রয়েছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দুই কেন্দ্রেই প্রবল বেগে এনআরসি বিরোধী হাওয়া বয়ে গিয়েছে। বাম নয়, তৃণমূলই এনআরসি আটকাতে পারে বলে ভোটাররা বিশ্বাস করেছে। এই ইস্যুতে রাজ্যের শাসকদল সফলভাবে প্রচার করেছে। প্রতিটি বুথে গিয়ে তারা এনআরসির ভয়াবহতা বুঝিয়ে বলে।
এছাড়াও ভোটের আগে থেকেই জলঙ্গিতে সিপিএমের কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় দলের একটা বড় অংশ বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তারা সেভাবে প্রচারও করেনি। ডোমকলে আনিসুর রহমানের নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে। তিনি এবার প্রার্থী না হওয়ায় সেই ভোটব্যাঙ্কও বামেরা টানতে পারেনি। দুই কেন্দ্রে তৃণমূলেরও কোন্দল ছিল। জলঙ্গিতে এক নেত্রী নির্দল প্রার্থী হয়ে ভোটে লড়াই করেছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ নেতাই দলের প্রার্থীকে জেতানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা জোট হলেও কংগ্রেসের অনেকেই বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। হাত শিবিরের নেতাদের মধ্যেও আন্তরিকতার অভাব দেখা দেয়। কারণ জলঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রে এবার কংগ্রেসের একাংশ প্রার্থী দিতে চেয়েছিল। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে তারা দ্বিতীয় ছিল। সেই ফল দেখেই তারা জোরাল দাবি তুলেছিল প্রার্থী দেওয়ার। কিন্তু জোটের ফর্মুলায় বামেরা এই আসনটিতে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল।
তাছাড়া তৃণমূল সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিও অন্যান্য কেন্দ্রের মতো এখানেও প্রভাব ফেলেছিল। ডোমকল বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল এক লক্ষ ২৭ হাজার ৬৭১ ভোট পেয়েছে। সিপিএম প্রার্থী পেয়েছেন ৮০ হাজার ৪৪২ ভোট। জলঙ্গি বিধানসভা কেন্দ্রে বামেদের ঝুলিতে এসেছে ৪৪ হাজার ৫৬৪ ভোট। তৃণমূল পেয়েছে এক লক্ষ ২৩ হাজার ৮৪০ ভোট। জলঙ্গিতে প্রতিটি বিধানসভা নির্বাচনে বামেরা ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হতো। এবার তারা পেয়েছে ২০ শতাংশ ভোট।
রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন, বাম ভোটব্যাঙ্কের বড় অংশ তৃণমূলের দিকে চলে এসেছে। সেই কারণেই তারা এই দুই কেন্দ্রে হাড্ডাহাড্ডি টক্কর দিতে পারেনি। জলঙ্গিতে বামেরা বিজেপির থেকে কিছু ভোট বেশি পেয়েছে। এখানে বিজেপি পেয়েছে ৪৩ হাজার ৭৭৩ ভোট। তারা এই বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট বাড়িয়েছে। কিন্তু বামেরা মুখ থুবড়ে পড়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক নৃপেন চৌধুরী বলেন, "ডোমকল জলঙ্গির এই ধরনের ফলাফল আমাদের যথেষ্ট ভাবনার কারন, আমরা রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় লেভেল পর্যন্ত এই ফল এর কারণ বিশ্লেষণ করতে শুরু করছি"।