সংক্ষিপ্ত
রায়দিঘি, সোনারপুর, গোবরডাঙা-সহ একাধিক এলাকার ডাক্তারি পড়ুয়ারা ফিরতে পারেনি ঘরে, তাঁরা এখনও আটকে ইউক্রেনেই। কখন কী খবর আসবে, বুক ধুকপুক আর ভেজা চোখে সংবাদমাধ্যমে আর ফোনের দিকে তাঁকিয়ে পরিবার।
ইউক্রেনে রাশিয়ার (Russia Ukraine) সামরিক অভিযান শুরু হতেই বাংলার একাধিক পরিবারের ঘুম উড়েছে। রায়দিঘি, সোনারপুর, গোবরডাঙা-সহ একাধিক এলাকার ডাক্তারি পড়ুয়ারা (Medical Students) ফিরতে পারেনি ঘরে। তাঁরা এখনও আটকে ইউক্রেনেই। কখন কী খবর আসবে, বুক ধুকপুক আর ভেজা চোখে সংবাদমাধ্যমে আর ফোনের দিকে তাঁকিয়ে পরিবার।
বাড়ি ফিরতে চাইলেও নিরুপায় তারা
দক্ষিন ২৪ পরগনার রায়দিঘীর খাঁড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের মন্ডল পাড়ার বাসিন্দা অর্ঘ্য মাঝি ডাক্তারি পড়তে গিয়েছেন ইউক্রেনে। কিন্তু সেখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় যথেষ্ট চিন্তায় পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। বাবা শিবশঙ্কর মাঝি ও মা বিশাখা মাঝির কার্যত ঘুম উড়েছে ছেলের চিন্তায়। তাঁদের একমাত্র ছেলে অর্ঘ মাঝি ডাক্তারি পড়তে গত অক্টোবর মাসে ইউক্রেনে যায়। গত কয়েকমাস ঠিকই ছিল। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেনের উপর হামলার ফলে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে তাতে আতঙ্কে দিন কাটছে মাঝি পরিবারের। ছেলের সাথে কথাও হয়েছে দম্পত্তির। ইউক্রেন থেকে ফোনে অর্ঘ্য জানিয়েছে, চারিদিকে বোমাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। অর্ঘ্য নিজেও যথেষ্ট আতঙ্কিত। বাড়ি ফিরতে চায় সে। তবে বিমান ভাড়ার বিপুল পরিমাণ অর্থ নেই তার কাছে। এমনকি ইউক্রেনে বিমান পরিষেবাও বন্ধ বলে জানিয়েছে সে। ফলেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে অর্ঘ্য ও তার পরিবারের লোকজনের। অর্ঘ্যর মা বিশাখা মাঝি বলেন, অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বিদেশে ডাক্তারি পড়তে পাঠিয়েছেন। কিন্তু এই পরিস্থিতি হবে তা তাঁরা বোঝেন নি। অন্যদিকে অর্ঘ্যর বাবা শিবশঙ্কর মাঝি স্থানীয় একটি ওষুধ দোকানে কাজ করেন। এই পরিস্থিতিতে তাই ছেলে বাড়ি ফিরতে চাইলেও নিরুপায় তারা। সরকারি সাহায্যের দিকে তাঁকিয়ে পরিবার।
আরও পড়ুন, ইউক্রেনে আটকে বাংলার দুই মেডিক্যাল পড়ুয়া, মোবাইলের দিকে ছলছল চোখে তাঁকিয়ে পরিবার
ডাক্তারি পড়াশুনার জন্য রওনা দিয়েছিল অর্ক
অর্ঘ্য মাঝির পাশাপাশি রায়দিঘীর কাশিনগর গ্রামের বাসিন্দা অর্কপ্রভ বৈদ্য নামে আরও এক ডাক্তারি ছাত্র আটকে রয়েছে ইউক্রেনে। সেখানে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় যথেষ্ট চিন্তিত ঐ পরিবারও। অর্কপ্রভ দুদিন আগেই ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে একটি ভিডিও নিজের ফেসবুক প্রফাইলে শেয়ার করেছিল। তখন সে জানিয়েছিল সেভাবে কোন সমস্যা নেই সেখানে। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। চারিদিকে বোমার ভয়ানক শব্দ শোনা যাচ্ছে। এলাকার সাধারণ মানুষ খাবার মজুত করতে শুরু করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাবা বাবা পলাশ বৈদ্য ও মা সুমনা বৈদ্যর সঙ্গেও কথা হয়েছে অর্কর। সকলেই খুবই উতকন্ঠার মধ্যে রয়েছে। মাত্র মাস খানেক আগেই রায়দীঘি থেকে ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়াশুনার জন্য রওনা দিয়েছিল অর্ক। সবে যখন সেখানে পড়াশুনার জন্য মনোনিবেশ করে সমস্ত কিছু গুছিয়ে বসেছে, ঠিক সেই সময় এই যুদ্ধ পরিস্থিতি। বিমান পরিষেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সেখানে। ফলে ভারতীয় দূতাবাসের সাথেই যোগাযোগের চেষ্টা করছে পরিবার। তাঁদের সাহায্য ছাড়া ছেলেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলেই দাবি তাঁদের। যথেষ্ট আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা।
ভারতীয় দূতাবাসের হস্তক্ষেপ দাবি পরিবারের
অপরদিকে, ইউক্রেনে আটকে পড়েছে সোনারপুরের এক মেডিক্যাল ছাত্র। সোনারপুরের বাসিন্দা পুষ্পক স্বর্ণকার। টার্নোপিল স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির পঞ্চম বর্ষের ছাত্র পুস্পক। ইউক্রেন থেকে ছেলের বাড়ি ফেরা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগে রয়েছে গোটা পরিবার। যদিও ২৬ শে ফেব্রুয়ারির একটি বিমানের টিকিট পেয়েছে পুস্পক, কিন্তু সেই বিমান বাতিল হওয়ার প্রবল সম্ভবনা। কারণ ইতিমধ্যেই বিমানবন্দর সিল করে দেওয়া হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার বাড়ির সদস্যদের সাথে কথা হয়েছে পুস্পকের। সে জানিয়েছে সকাল থেকে একাধিকবার সাইরেন বাজানো হয়েছে। মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে খাবার, পানীয় জল মজুত করতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে ছেলের জন্য যথেষ্ট চিন্তিত গোটা পরিবার। ভারতীয় দূতাবাসের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তাঁরা। যাতে সকলকে সেখান থেকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা হয়, এই দাবি পরিবারের।