সংক্ষিপ্ত
ট্রেনেই বাদাম ভাজা আর নুনঝুরি বিক্রি করে কালুখালি সারফিয়া হাই মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেনীর মাসুম শেখ। সুরজের বাবা, মাকে ছেড়ে কবেই অন্যত্র সংসার বেঁধেছে।
সীমান্তের শহরে সংসারের (Family) হাল ধরতে চরম প্রবণতা বাড়ছে প্রান্তিক এলাকার নাবালক পড়ুয়াদের (Minor Students) মধ্যে! করোনার (Corona Virus) কুপ্রভাবের চ্যালেঞ্জের মুখে শিক্ষক সমাজ (Teachers)। করোনার কুপ্রভাব আর কেবল শরীরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, রীতিমতো তা বাংলাদেশ লাগোয়া সীমান্ত শহর মুর্শিদাবাদের লালগোলা ও সংলগ্ন এলাকার প্রান্তিক নাবালক পড়ুয়াদের জীবনে ছাপ ফেলেছে।
নবম শ্রেনী থেকে বিদ্যালয়ে পঠন পাঠন শুরু হলেও করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কম বয়সিদের জন্য এখনও স্কুলের দরজা খোলা যায়নি। আর তাতেই পরিবারে বাড়িতি রোজগারের আশায় ঘরের ছেলেকে হকারের কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন সীমান্ত এলাকার বেশ কিছু অভিভাবক।
এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এলাকার সচেতন নাগরিকরা। লালগোলা স্টেশন থেকে সকালের ডাউন ট্রেন ছাড়তেই কানে ভেসে আসে চা চাই চা ,কফি নেবেন নাকি। অচিরেই একটি কচি হাত ক্রেতাকে বাড়িয়ে দেয় চা – কফি । ওই কচি হাতের ছেলেটি লালগোলা এম এন একাডেমির ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র সুরাজ শেখ, আর থ্রি আপে যে ছেলেটি পাঁচ সেমের লটারির টিকিট নিয়ে যাত্রীদের ভাগ্য পালটে দেওয়ার কথা বলে আদপে সে ভগবানগোলা হাই স্কুলের পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র অরিজিত হালদার।
ট্রেনেই বাদাম ভাজা আর নুনঝুরি বিক্রি করে কালুখালি সারফিয়া হাই মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেনীর মাসুম শেখ। সুরজের বাবা, মাকে ছেড়ে কবেই অন্যত্র সংসার বেঁধেছে। তবুও তার মা তাকে ক্লাস ওয়ান থেকে নিয়মিত স্কুলে পাঠিয়েছে। কিন্তু লক ডাউনের পর স্কুল না খুললে মায়ের পরামর্শেই সে সকালে ট্রেনে চা বিক্রি করার কাজ নিয়েছে।
অরিজিত সকালে বাড়িতে পড়াশুনা করে, তবে বেলা বাড়লেই লটারির টিকিট নিয়ে ট্রেনের কামরায় ওঠে। অরিজিতের দাবি, এখন স্কুল নেই, বাড়িতে বসে থেকে কি করব। বাবা লটারির টিকিট কিনে দেয়,ওই টিকিট আমি ট্রেনে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করি।” তবে সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র মাসুম এখন বুঝতে শিখেছে সংসারে অভাব তাই নিজেই নুনঝুরি আর বাদামের রিং কাঁধে তুলে নিয়েছে,সংসারের অনটন দূর করতে। ওই তিন পড়ুয়ার দাবি স্কুল খুললে অবশ্যই তারা বই হাতে স্কুলমুখী হবে।
এই ব্যাপারে লালবাগ সিংহী হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা বিধায়ক মহম্মদ আলী বলেন, ইতিমধ্যে স্কুলে উপস্থিতি বাড়াতে আমরা শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছেলে মেয়েদের স্কুলে নিয়ে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছি। নিচু ক্লাসের স্কুল চালু না হওয়ায় পরিস্থিতি কি হবে তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। তবে সরকার নিশ্চয়ই এই বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ করবেন।
তবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক তথা গবেষক সমীর ঘোষ । তিনি বলেন , “করোনা শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়, জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। তবে স্কুল ছুট বড় চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।” এদিকে অর্থনীতির ছাত্র মহম্মদ আলমগীর বলেন, “শৈশবে একটি ছেলে রোজগারের নেশায় পড়ে গেলে তাকে ফের বিদ্যালয় মুখি করা খুব কষ্ট সাধ্য ব্যাপার ।ফলে এই সব ছেলেদের একটি বড় অংশ স্কুল ছুট হতে বাধ্য।”