সংক্ষিপ্ত
- দেবাঞ্জনের বিরুদ্ধে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছে পুলিশ
- ঘরকুনো ছেলে থেকে ‘আইএএস অফিসার’ হয়ে উঠেছিলেন
- তাঁর এই উত্থান কাহিনি সিনেমার গল্পকেও হার মানায়
- ছবি আঁকা আর গান খুবই ভালোবাসতের দেবাঞ্জন
যত সময় যাচ্ছে ততই কসবার ভুয়ো টিকা কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠে আসছে। তদন্তে নেমে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছে পুলিশ। পাড়ায় ঘরকুনো হিসেবেই পরিচয় ছিল তাঁর। কিন্তু, নিজের মনের মতো চরিত্র হয়ে ওঠার চেষ্টায় একসময় ঘরকুনো ছেলেটা হয়ে ওঠে ‘আইএএস অফিসার’। যে কোনও সিনেমার গল্পকেও হার মানায় তাঁর এই উত্থান কাহিনি। তাঁর অফিস, বাড়ি এবং লালবাজার সূত্রে এমনই সব তথ্য উঠে এসেছে।
কসবায় চারতলা বাড়ির তিনতলায় ফ্ল্যাট নিয়ে পুরসভা বানিয়েছিল দেবাঞ্জন। দেবাঞ্জনের বাবা মনোরঞ্জন দেব ছিলেন ডেপুটি এক্সাইজ কালেক্টর। বাবা চাইতেন ছেলে আইএএস অথবা আইপিএস হোক। ছেলেবেলায় টাকি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন দেবাঞ্জন। প্রাণিবিদ্যা নিয়ে চারুচন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। এরপরে জেনেটিক্সের ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যদিও পড়াশোনা শেষ করতে পারেনি। একটি ফুটবল ক্লাব কিনবেন বলে ঠিক করেছিলেন। প্রতিবেশীর থেকে জানা গিয়েছে, ছেলেবেলা থেকেই দেবাঞ্জন পড়াশোনায় তেমন ভালো ছিলেন না। কিন্তু, ছবি আঁকা আর গান খুবই ভালোবাসতেন। তারপরই হঠাৎ আইএএস হয়ে যান। তাঁর আইএএস হওয়ার খবর শুনে প্রথমে চমকে গিয়েছিলেন প্রতিবেশীরাও। তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরাও বিষয়টা মেনে নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন- ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য, কলকাতা পুলিশের দেওয়া তথ্যে পর্দাফাঁস দেবাঞ্জনের
২০১৪ সালে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসেছিলেন দেবাঞ্জন। প্রিলিমিনারি ও মেন দুটোতেই পাশ করেছে বলে বাড়িতে জানিয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রশিক্ষণের জন্য তাঁকে বাইরে থাকতে হবে বলে বাড়িতে জানান। সূত্রের খবর, ওই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর সেই সময় গান নিয়ে রীতিমতো চর্চা শুরু করেছিলেন। তখন তাঁর গানের অ্যালবামও প্রকাশিত হয়। এরপর ২০১৭ সালে বাড়ি ফেরেন। জানান, তাঁর আইএএস-এর প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। আর পোস্টিং হয়েছে নবান্নে। এমনকী, নীল বাতি লাগানো গাড়ির ব্যবস্থাও করে নিয়েছিলেন। নিদের ভাবমূর্তি বজায় রাখতে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী রেখেছিলেন।
এদিকে গত বছর করোনার সময়টাকে নিজের উত্থানের সঠিক সময় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন দেবাঞ্জন। ঠিক করেছিলেন মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিক্রি করবেন। ভাগ্যও সেই সময় তাঁকে সায় দিয়েছিল। তালতলায় কয়েকটি ক্লাবঘর গুদাম হিসেবে ভাড়া নেন। লোক নিয়োগ করে চড়া দামে মাস্ক, স্যানিটাইজার, পিপিই বিক্রি করতে শুরু করে। তারপর ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়াতে শুরু করেন তিনি। একাধিক সামাজিক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হন। সেখানে বিনামূল্যে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিলি করতে শুরু করেন। তখনই দেবাঞ্জনের সঙ্গে শাসক দলের একাধিক নেতা-মন্ত্রীর পরিচয় হয়। পরিচয় হয় বেশ কয়েকজন পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গেও। আর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর সমাজসেবা মূলক কাজ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এর মধ্যেই তাঁর যোগাযোগ তৈরি হয় পৌরনিগমের সঙ্গে। ‘আর্বান প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি ভুয়ো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তৈরি করেছিলেন। পুরসভার ঠিকাদারদের সঙ্গে পরিচয় করে সাব-কনট্র্যাক্টর হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব দেন।
আরও পড়ুন- করোনার ওষুধ সংগ্রহ করতেন দেবাঞ্জন, ২৬ লক্ষ টাকা পান ট্যাংরার ওষুধ ব্যবসায়ীর
তারই মাঝে রাজ্যে করোনা টিকার ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। সেই সময় নিজেকে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করবেন বলে স্থির করেছিলেন। নিজের সংস্থার কর্মীদের আগে প্রতিষেধক দেন। এরপরই কসবায় ওই টিকাকরণ শিবিরের আয়োজন করেন। কিন্তু, এবার আর ভাগ্য সহায় হয়নি। তাই তাঁর নাটকের যবনিকা পতন হয় এখানেই।