সংক্ষিপ্ত
- এ যেন মওকা-মওকা, ফের পুলিশি নিগ্রহের অভিযোগ
- লকডাউনের বাজারে পুলিশিরাজ, লাঠির বাড়ি জনতার শরীরে
- যার ছবি ধরা পড়ছে সর্বত্র, ইতিমধ্যেই হাওড়াতে মৃত ১
- স্বাভাবতই প্রশ্ন উঠছে পুলিশের ভূমিকাকে ঘিরে
লকডাউনের প্রথমদিকে পুলিশের অতি সক্রিয়তা নিয়ে যেটুকু-বা দ্বিধা ছিল নেটিজেনদের মধ্য়, বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্য়ে সেটুকুও আর নেই বললেই চলে। দলমত আর রং নির্বিশেষে প্রত্য়েকের ওয়ালে শুধু একটাই কথা, "বড্ড বাড়াবাড়ি করছে পুলিশ।"
বাচ্চার জন্য় দুধ কিনতে এসে হাওড়ার সাঁকরাইলের এক যুবক পুলিশের বেদম মারে আহত হন। তারপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। আর বৃহস্পতিবার সেই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গসঙ্গেই শোরগোল পড়ে যায় গোটা রাজ্য়ে। দুপুরের মধ্য়েই জাতীয় সংবাদমাধ্য়মগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে সেই খবর। পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, খোদ মুখ্য়মন্ত্রী যেখানে নবান্ন থেকে পুলিশকে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বাড়াবাড়ি করতে বারণ করে দিয়েছেন, তারপরেও পুলিশের আচরণ পাল্টাচ্ছে না কেন?
এমতাবস্থায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেশ কিছু পোস্ট আর ভিডিয়ো ভাইরাল হতে শুরু করে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল বুধবার। সেদিন একটি ভিডিয়োতে কোল ইন্ডিয়ার কিছু শ্রমিককে বিক্ষুব্ধ অবস্থায় দেখা যায়। যেখানে অভিযোগ ওঠে, কয়লা তোলার কাজে আসার সময়ে পুলিশের হাতে বেধড়ক মার খেয়েছেন এক শ্রমিক। পুলিশ তাঁর আইকার্ডও দেখতে চায়নি বলে অভিযোগ। সেই ভিডিয়ো দেখে নেটিজেনরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, কয়লা তোলা না-হলে যদি বিদ্য়ুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়, স্তব্ধ হয়ে যায় হাসপাতাল, তার দায় কি পুলিশ নেবে?
আশা করা গিয়েছিল, খোদ মুখ্য়মন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পর পুলিশ কিছুটা সমঝে চলবে। কিন্তু কোথায় কী? পুলিশকে এদিন আরও বেপরোয়া হতে দেখা গেল। দেখা গেল যথেচ্ছ লাঠিচার্জ করতে। কোথাও দেখা গেল আনাজপাতি তুলে নিয়ে তা রাস্তায় ছড়িয়েছিটিয়ে দিতে। কোথাও দেখা গেল নিরীহ সাইকেল আরোহীকে বেধড়ক লাঠিপেটা করতে। কোথাও একেবারে বস্তির মধ্য়ে ঢুকে পড়ে ঘরে-ঘরে গিয়ে লাঠি হাতে শাসিয়ে এল পুলিশ। সঙ্গে কিঞ্চিৎ লাঠ্য়ৌষধও। তবে এদিন সবকিছু ছাপিয়ে গিয়েছে আরও গুরুত্বপূর্ণ দুটি পোস্ট। যার একটিতে এক ওষুধ ব্য়বসায়ী একটি পোস্টে অভিযোগ করেছেন-- কোনও কথা না-শুনেই রাস্তা থেকে তাঁকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। থানায় নিয়ে গেলে সেখানে তিনি বারংবার বলেন, তিনি ওষুধ ব্য়বসার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও রয়েছে। যার উত্তরে থানার কর্তব্য়রত অফিসার অশ্লীলভাবে গালিগাজাল করেন বলে অভিযোগ। তাঁকে উল্টে বলা হয়-- কোনও কাগজ দেখানোর দরকার নেই, সোজা লকআপে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। অবশেষে ৫০০ টাকার ব্য়ক্তিগত জামিন দিয়ে তিনি এদিনের মতো ছাড়া পান থানা থেকে!
এরই সঙ্গে আরও একটি পোস্ট এদিন কার্যত ভাইরাল হয়। ক্য়ানসার রোগীর এক পরিজন দীর্ঘপথ পেরিয়ে আসছিলেন সাইকেলে করে। রাস্তায় পুলিশ আটকালে তিনি বোঝান, জীবনদায়ী ওষুধের প্রয়োজনেই তিনি বেরিয়েছেন রাস্তায়। প্রেসক্রিপশনও দেখাতে চান তিনি। কিন্তু পুলিশ কোনও কথা না-শুনেই পুলিশ তাঁকে লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ।
এইভাবে পুলিশের বেপরোয়া আচরণের বিরুদ্ধে অভিযোগ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হতে থাকে সোশাল মিডিয়ায়। একটি ভিডিয়োতে দেখা যায়, উলুবেড়িয়ায় সাদাপোশাকের এক মহিলা পুলিশ এক মহিলা সাইকেল আরোহীকে লাঠি পেটাতে থাকেন। ওই মহিলা যখন বারবার বলতে থাকেন, প্রয়োজনীয় কাজে বাজার গিয়েছিলেন তিনি, তখন তার প্রত্য়ুত্তরে তাঁকে শুনতে হয়-- "কেন বাড়িতে কোনও ছেলে নেই?"