সংক্ষিপ্ত
এতদিন পর্যন্ত ঐতিহাসিকরা মনে করতেন এই দুর্ভিক্ষের মূল কারণ খরা। কিন্তু নতুন গবেষণা সেই তথ্য ভুল প্রমাণ করছে। সমীক্ষকরা বলছেন এই দুর্ভিক্ষের কারণ সম্পূর্ণ অন্য।
১৯৪৩ এ বাংলার নারকীয় দুর্ভিক্ষ হার মানাবে পৃথিবীর ইতিাসের তামাম নারকীয়তাকে। কলকাতার রাজপথ সেদিন ভরে গিয়েছিল মানুষের লাশে। শকুন খুঁটে খেয়েছে ৩০ লক্ষ মৃত মানুষের মাংস। ইতিহাস বই তো বটেই সোমনাথ হোড় জয়নুল আবেদিনদের মতো শিল্পীদের ছবিতে বারবার ধরা পড়েছে সেই মর্মান্তিকতা।
এতদিন পর্যন্ত ঐতিহাসিকরা মনে করতেন এই দুর্ভিক্ষের মূল কারণ খরা। কিন্তু নতুন গবেষণা সেই তথ্য ভুল প্রমাণ করছে। সমীক্ষকরা বলছেন এই দুর্ভিক্ষের কারণ সম্পূর্ণ অন্য।
জিওফিসিক্যাল রিসার্চ লেটার নামক জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৪০ সালে খরা গোটা পূর্ব ভারতেই প্রভাব ফেললেও ১৯৪৩ সালে স্বাভাবিকের থেকে বেশি হয়েছিল। তাহলে কী করে খরাকেই শুধু দায়ী করা যায়?
প্রসঙ্গ অনেকেই এই দুর্ভিক্ষের জন্য খাদ্যশশশ্যের অভাবকে দায়ী করেন। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এই তত্বকে অনেক আগেই খারিজ করেন। বর্তমান গবেষণা দুর্ভিক্ষের কারণ হিসেবে দায়ী করছে চার্চিলের নীতিকে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সাংবাদিক মধুশ্রী মুখোপাধ্যায় প্রমাণ তুলে ধরে দেখাচ্ছেন যুদ্ধের সময়ে সেনার খাদ্যের জোগান ঠিক রাখতে ভারতের খাদ্যশস্য একটানা রপ্তানি করে গিয়েছে ব্রিটিশ প্রশাসন চার্চিলের অঙ্গুলিহেলনে। এর সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে জাপানি আগ্রাসন রুখতে উপকূল অঞ্চলে নৌ চলাচল বন্ধের মত সিদ্ধান্ত।
প্রসঙ্গত সেই সময়ে সংবাদপত্রে, সাময়িকীতে বারবার দুর্ভিক্ষ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হতে শুরু করলে ব্রিটিস সরকার দমনের রাজনীতি শুরু করে। তথ্য লোপাট করতেই বয়কট করা হয় চিত্তপ্রসাদের আঁকা দুর্ভিক্ষের ছবির সিরিজ 'হাংরি বেঙ্গল'-কে। পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল পাঁচ হাজার কপি বই। তবে বাঙালির স্মৃতি থেকে এই দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা কোনও দিনই মুছে ফেলা যায়নি। নতুন তথ্য আবার আলো ফেলল সেই অন্ধকারে।