সংক্ষিপ্ত
পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে উৎসশ্রী প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। গ্রামের প্রতিটি স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা বিশাল ভাবে কমে গেছে। বিচার চেয়ে এবার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে কংগ্রেস।
বঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। এরই মধ্যে আরও এক বড়সড় দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্রে শান দিচ্ছেন বিরোধীরা। ‘উৎসশ্রী প্রকল্প’, সরকারি শিক্ষকদের বদলির আবেদন জানানোর এই বিশেষ প্রকল্পটিতে ব্যাপক দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ শাসকদলের বিরুদ্ধে।
উৎসশ্রী প্রকল্পে দুর্নীতির বিচার চেয়ে এবার হাইকোর্টে যাচ্ছে কংগ্রেস, জানালেন পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাত। নেপালবাবু জানালেন, বিকল্প পথ না থাকায় বাধ্য হয়ে হাই কোর্টে যাচ্ছি। যেনতেন প্রকারে শিক্ষকদের বদলির ফলে জেলার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রতিটি স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা বিশাল ভাবে কমে গেছে। বাঘমুন্ডি বিধানসভার পরিস্থিতি আরও ভয়ানক। বীরগ্রাম উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ছাত্র সংখ্যা ১৯০০, অথচ শিক্ষক মাত্র ৩ জন। বাঘমুন্ডি গার্লস স্কুলে ছাত্রী সংখ্যা ১১০০, সেখানেও শিক্ষক রয়েছেন মোটে ৩ জন। কোথাও কোথাও মাত্র ৪ জন শিক্ষক আছেন, অথচ ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ২ হাজার।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছি সেই ঝালদা হাই স্কুলে একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল শিক্ষকের অভাবে। পরে অবশ্য ভর্তি নেওয়া হয়েছে। তবে, অভিভাবকদের বলে দেওয়া হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের নিজের বাড়িতে পড়িয়ে নিবেন। জেলা শিক্ষা আধিকারিককে আর.টি.আই করে জানতে পারলাম যে, এমন বহু স্কুল রয়েছে যেগুলো একেবারে শিক্ষক শূন্য হয়ে গেছে। কারণ হিসাবে বুঝলাম, এর জন্য সরকারের ‘উৎসশ্রী’ পোর্টাল দায়ী।
নিয়ম অনুযায়ী, ছাত্র অনুযায়ী শিক্ষক সংখ্যা কমে গেলে পরিচালন সমিতি আর কোনও শিক্ষককে বদলির অনুমোদন দিতে পারে না। কিন্তু, রাজ্য সরকারের এই পোর্টালে নিজেকে অসুস্থ দেখিয়ে বদলির নিয়ম রয়েছে। সেই নিয়মকে অপব্যবহার করে ৩ মাসে এক জেলা থেকে অন্য আরেক জেলায় বদলি হয়েছেন প্রায় সাড়ে ছয়শ জন শিক্ষক। একসাথে এতজন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে গেলেন! ভাবতেও অবাক লাগে। শুনেছি নাকি এই সব বদলির ব্যবস্থা করার জন্য খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৪ লক্ষ টাকা। এর ফলে জেলায় জেলায় শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সেজন্য এই নিয়মের সঠিক বিচার চেয়ে তদন্তের জন্য হাইকোর্টে যাচ্ছি।
উল্লেখযোগ্য, শিক্ষক বদলিতে দুর্নীতি এড়াতেই উৎসশ্রী প্রকল্প চালু করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু, গত বছর চালু হওয়ার পর থেকেই এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বিস্তর। ২০২১-এ শিক্ষকদের বদলিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে নিজের রাজনৈতিক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তৃণমূলেরই এক শিক্ষক নেতা অর্ঘ্য চক্রবর্তী। এবার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে এলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেই দিকেই নজর বিরোধীদের।
আরও পড়ুন-
প্রাইভেট টিউশনে নিষেধাজ্ঞা, স্কুল শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন পড়াতে দিতে হবে, এই দাবিতে বিক্ষোভ ছাত্র-ছাত্রীদের
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে 'অনিয়ম'-র অভিযোগ, হাইকোর্টে তদন্তের আবদন এবার পার্শ্বশিক্ষকের
রাজ্যের শিক্ষকদের জন্য বড় উপহার মমতার, বাড়ির পাশেই বদলি পেতে নয়া প্রকল্প 'উৎসশ্রী'