সংক্ষিপ্ত
এক টানা ২৩ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকার কৃতিত্ব তাঁক ঝুলিতে। তিনি ছিলেন টানা পাঁচ বারের মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগও তাঁর সামনে এসেছিল।
এক টানা ২৩ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকার কৃতিত্ব তাঁক ঝুলিতে। তিনি ছিলেন টানা পাঁচ বারের মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগও তাঁর সামনে এসেছিল। কিন্তু তাঁর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব চায়নি বাঙালি প্রধানমন্ত্রীর কৃতিত্ব অর্জন রুন তিনি- তাই প্রধানমন্ত্রী হওয়া হয়নি তাঁর। কোনও প্রতিবাদ বা দল বদল নয়। 'ঐতিহাসিক ভুল' এই দুটি ছোট্ট শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি জ্যোতি বসু। আজ তাঁর ১০৭ বছরের জন্মদিন। কিন্তু দেশের কমিউনিস্ট নেতাদের মধ্যে এখনও তিনি সবথেকে বেশি জনপ্রিয়। তাঁর জীবনদশায় সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বাড়বাড়ন্ত ছিল না। কিন্তু আজও সোশ্যাল মিডিয়া ঘুরে বেড়ায় তাঁর বিভিন্ন মন্তব্য বা ছবি। তাঁর কাজের কথাও প্রচার করা হয়। এখনও এই কমিউনিস্ট নেতার সমালোচনাও করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
জ্যোতি বসু মানেই পাটভাঙা সাধা ধুতি-পাঞ্জাবি আর সঙ্গে চকচকে কালো জুতো পরা বাঙালি বাবু। দলের বাকি নেতারা তাঁদের সহকর্মীদের কাছে দাদা হলেও জ্যোতি বসু কিন্তু কখন দাদা-কাকু বা জেঠু হননি। তিনি হয় জ্যোতি বসু নয়তো জ্যোতি বাবু হয়েই রাজ করেলেছেন বাংলার তথা ভারতের সিপিআইম কর্মী সমর্থকদের মধ্যে। এমনকি দেশের মানুষ বা বিদেশীদের কাছেও তিনি ছিলেন না মিস্টার বসু। তিনি ছিলেন জ্যোতি বসু।
মৃদুভাষী কিন্তু দৃঢ়় প্রশাসনক ছিলেন জ্যোতি বসু। কঠোর ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করতেন না তিনি। তাঁর একাধিক সিদ্ধান্ত প্রায়ই সমালোচিত হয়েছে। কিন্তু মিডিয়া বা বিরোধীদের ভয়ে তিনি কখনই পিছিয়ে আসেননি। কড়া শাসক হিসেবে তিনি যেমন প্রশাংসা কুড়িয়েছেন তেমনই সমালোচনাও সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে।
ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের আলোরবর্তিকা ছিলেন ছিলেন তিনি। তঁর জন্মের ১০৮ বছর পরেই তিনি প্রাসঙ্গিক। সালটা ছিল ১৯১৪,৮ জুলাই। নিশিকান্ত বসু ও হেমলতা দেবীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে সেন্টজেভিয়ার্স পরবর্তীকালে কেবব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর পড়াশুনা। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজেও পড়াশুনা করেছিলেন কিনি। আইন আর ইংরেজি ছিল তাঁর বিষয়। তিনি নিজের জীবন কথায় লিখেছেন ১৯৩০ সালের মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্ব চট্টোগ্রাম আস্ত্রাগার লুন্ঠন তাঁকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। পড়াশুনার জন্য ব্রিটেনে থাকাকালীন তিনি কমিউনিস্ট মন্ত্রী দীক্ষা নেন। তারপর লাল পার্টির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল অবিচ্ছেদ্য।
১৯৪০ সালে বিলেতের পাঠ চুকিয়ে দেশে ফিরে আসেন জ্যোতি বসু। কলকাতা হাইকোর্টে ব্যারিস্টারি শুরু করেন। কিন্তু তারই মধ্যে অবিভক্ত সিপিএম পার্টির সংগঠক হয়ে ওঠেন। প্রথম দিকে তাঁর দায়িত্ব ছিল আন্ডারগ্রাউন্ড নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার। ১৯৪৪ সালে, তিনি বেঙ্গল আসাম রেলরোড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন গঠিত হওয়ার পর এর প্রথম সচিব হন। ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর, বসু ১৯৫২ সালে বরানগর থেকে বঙ্গীয় আইনসভায় নির্বাচিত হন। ১৯৫০এবং ৬০এর দশকে, বসু মূলত একজন প্রাদেশিক রাজনীতিবিদ ছিলেন, প্রায়শই গ্রেপ্তার হন এবং এমনকি পুলিশের দ্বারা গ্রেপ্তার এড়াতে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান।
১৯৬৪ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কঠিন সময়। ভাগ হয়ে গিয়েছিল এই দলটি। সেই সময় জ্যোতি বসু অনেক ভেবেচিন্তেই সিপিআই (এম) এর খাতায় নাম লেখান। পলিটব্যুরোর সদস্য হন। পলিটব্যুরোর প্রথম ৯ জন সদস্যদের মধ্যে তিনি একজন। ১৯৭৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের শাসনভার দখল করে সিপিআই (এম)। তিনি হন বাংলার প্রথম কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী। টানা ২৩ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ভূমি সংস্কার, কৃষি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি এবং তিন স্তরের পঞ্চায়েতি ব্যবস্থা চালু হয়েছিল তাঁরই হাত ধরে।
জ্যোতি বসুর হাত ধরেই একটা সময় দিল্লিতে রীতিমত ছড়ি ঘুরিয়েছে সিপিএম পার্টি। ১৯৯৬ সালের জোট সরকারের উদ্যোক্তাও ছিলেন তিনি। তবে কখনই তিনি দলের উর্ধ্বে উঠতে চাননি। সিপিএমএর নির্ভর যোগ্য সৈনিক ছিলেন তিনি। আমৃত্যু দলের আদর্শ মেনে চলেছেন। শারীরিক কারণে ২০০০ সালে সক্রিয় রাজনীতি থেকে বিদায় নেন। ২০০৮ সালে পলিট ব্যুরোর সদস্য পদ ছেড়ে দেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য ছিলেন। ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়।