সংক্ষিপ্ত

  • দলীয় বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক মমতার
  • বিধায়কদের জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ
  • ব্যালটে পেপারে ভোটের দাবিতে নতুন আন্দোলন

লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকেই বিরোধী দলগুলিকে একজোট করার চেষ্টা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার ভোটের ফল প্রকাশের পরে ইভিএমের বদলে ব্যালট পেপারে ভোটের দাবিতে ফের দেশব্যাপী আন্দোলনে নামতে চাইছেন তিনি। এই ইস্যুতে ফের বিরোধী দলগুলিকে একজোট করতে চান মুখ্যমন্ত্রী। বাংলা থেকেই সেই আন্দোলন শুরু করার নির্দেশ এ দিন দলকে দিয়েছেন মমতা। সচিত্র পরিচয়পত্র থাকলেই ভোটাধিকারের দাবিতে একসময় আন্দোলনে নেমেছিলেন মমতা। সেই একই কায়দায় এবার ইভিএম বিরোধী আন্দোলন শুরু করতে চান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। 

এ দিন নবান্নে দলীয় বিধায়কদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও বৈঠক থেকে বিধায়কদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ করার নির্দেশ ছাড়া ভুল সংশোধনের অন্য কোনও বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের সামনে অন্তত জানাননি মুখ্যমন্ত্রী। ফলে দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অহংকারের মতো যে অভিযোগগুলো উঠছিল, সেই বিষয়গুলি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কোনও পদক্ষেপ নিলেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিধায়কদের দলবদল নিয়ে বিজেপি-র দাবিও সঠিক নয় বলেই দাবি মুখ্যমন্ত্রীর। এক নজরে দেখে নিন বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকের পরে ঠিক কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী-

  • সমস্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে। মানি, মাসল পাওয়ারের বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা দারুণ লড়াই করেছে।
  • কত টাকার যে দুর্নীতি হয়েছে, খরচ করা হয়েছে, তার কোনও হদিশ নেই। 
  • বিধানসভার নিরিখে বাংলা থেকে মোটেই ১২০টা আসনে এগিয়ে নেই। সংবাদমাধ্যম বিজেপি-র সাফল্য অতিরঞ্জিত করে দেখাচ্ছে। এখনও বাংলায় আমরা ১৬৩ আসনে এগিয়ে।
  • সিপিএমের দয়ায় ১৮টা আসন পেয়েছে, ২৬টা তো পায়নি।  তাও মানি, মাসল, মিডিয়া পাওয়ার কাজে লাগিয়ে। বলেছিল তো ২৩টা আসন পাবে, সেই ভাবে হয়তো ইভিএম-এ প্রোগ্রামিং করে রেখেছিল, হয়নি।
  • এটা মানুষের সমর্থন নয়, কৃত্রিমভাবে জিতেছে। তাই ভয় পাচ্ছে, কাল যদি এটা না থাকে। সেই জন্য পার্টি অফিস দখল করা শুরু হয়েছে, টাকা ছড়াচ্ছে।
  • আমরা সরকার আর দলের থেকে আলাদা আলাদা ভাবে এর বিরুদ্ধে লড়ব। বাংলা এবং দেশের বিভিন্ন মনীষীদের নিয়ে আমরা প্রচার করব। 
  • বিজেপি ভুয়ো খবর তৈরি করে বাংলা সম্পর্কে গোটা দেশে প্রচার করছে। এটা আমাদের কাছে লজ্জার।
  • তৃণমূলের প্রত্যেক বিধায়ক বাড়ি বাড়ি যাবেন। আর ২১ শে জুলাইয়ের কথা মাথায় রেখে বিধায়করা নিজের নিজের এলাকায় জনসংযোগ যাত্রা করবেন। জেলা সভাপতির সঙ্গে বসে জনসংযোগ যাত্রার রুট ঠিক করবেন বিধায়করা। তার পরে সেই সূচি অনুমোদন করবেন রাজ্য স্তরের নেতারা। এর জন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রক বক্সি, ফিরহাদ হাকিম-সহ পাঁচ জনের একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে।
  • মেশিন চাই না, ব্যালট ফিরিয়ে দেও, গণতন্ত্র বাঁচাও- এই স্লোগান তুলে বাংলা থেকে নতুন আন্দোলন শুরু করবে তৃণমূল। 
  • ২ শতাংশ ইভিএমেও যদি কারচুপি থাকে তাহলে ২ শতাংশ ভোট এদিক ওদিক হয়ে যায়। সু্প্রিম কোর্টে আমরা মামলা করেছিলাম, খারিজ হয়েছে।
  • ভোটের দিন অনেক মেশিন খারাপ হয়েছিল। অনেক মেশিনে মক পোলও করা হয়নি। সেই ইভিএমগুলি যে আগে থেকে প্রোগামড ছিল না, তা কে বলতে পারে?
  • আমরা ইভিএমের এই ভোট মানুষের রায় বলে মানি না। এর জন্য বিজেপি সরকার আমার বিরুদ্ধে যা খুশি করতে পারে। 
  • ভোটের সময়ে দাতা কর্ণের মতো টাকা বিলি করা হয়েছে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুঠ করা হয়েছে। বিরোধী দলগুলিকে বলব একটি ফ্যাক্ট ফাইটিং কমিটি তৈরি করে সত্যিটা খুঁজে বের করার জন্য। 
  • ঈশ্বরচন্দ্রের প্রতীকী মূর্তি ১১ তারিখে বসানো হবে। এছাড়াও বিদ্যাসাগরের ব্রোঞ্জের মূর্তি তৈরি করে বিদ্যাসাগর কলেজে বসানো হবে। এছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তিও কলেজ স্ট্রিটে বসানো হবে। 
  • আঞ্চলিক ভাষাকেই সংশ্লিষ্ট রাজ্যে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তার পরে কে কী ভাষা বেছে নেবে, সেটা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা উচিত। সব বিষয়ে অহেতুক নাক গললানো উচিত নয়।
  • বিধায়কদের যোগাযোগ করছে বলে মিথ্যে কথা বলছে। কোটি কোটি টাকা থাকলে অনেক কিছুই করা যায়। বাংলা নিয়ে ভুয়ো ভিডিও ছড়াচ্ছে।
  • জয় শ্রীরাম স্লোগান বিকৃতভাবে ব্যবহার করছে বিজেপি। আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। আমি তার যা ব্যাখ্যা দেওয়ার দিয়ে দিয়েছি। 
  • তারকেশ্বরে জাতীয় পতাকা সরিয়ে দিয়ে বিজেপি-র পতাকা লাগানো হচ্ছে, বিশ্ব বাংলার লোগো খুলে বিজেপি-র পতাকা লাগাচ্ছে। আইন অনুযায়ী যা ব্যবস্থা নেওয়ার আমরা নেব। 
  • গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রতিটি ব্লকে প্রতিবাদ মিছিলে করবে তৃণমূল। 

মোটের উপরে, এ দিনও মমতা প্রকাশ্যে অন্তত নিজের দল বা সরকারের কাজ নিয়ে আত্মসমীক্ষার পথে হাঁটলেন না। কিন্তু বিধায়কদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার নির্দেশেই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি শাসক দলের বিধায়করা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন বলে মনে করছেন তৃণমূল নেত্রী?