সংক্ষিপ্ত

জেলা নেতৃত্বকে ছাপিয়ে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের প্রাধান্য সক্রিয় হয়ে উঠছে। যা নিয়ে আগামী দিনে মুর্শিদাবাদের তৃণমূলের ক্ষমতার ভারকেন্দ্র অনেকখানি নির্ভর করবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

কলকাতার আঙিনা ছেড়ে মুর্শিদাবাদে সক্রিয় হয়ে উঠছে একদিকে মদন মিত্র 'লবি'। পাশাপাশি, গেরুয়া শিবিরের রং ফিকে হওয়ার ইঙ্গিত এর মধ্যে দিয়ে জোড়া ফুল (TMC) শিবিরে নতুন সম্ভাবনা (new possibilities) তৈরি হচ্ছে ক্রমশ। সেক্ষেত্রে জেলা নেতৃত্বকে (District Leader) ছাপিয়ে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের (State leaders) একাংশের প্রাধান্য সক্রিয় হয়ে উঠছে। যা নিয়ে আগামী দিনে মুর্শিদাবাদের তৃণমূলের ক্ষমতার ভারকেন্দ্র অনেকখানি নির্ভর করবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

বছর ঘুরতে না ঘুরতেই জেলার কান্দির গত বিধানসভার হেভিওয়েট বিজেপি প্রার্থী তথা দাপুটে নেতা গৌতম রায় ও তার সঙ্গে থাকা তিন প্রাক্তন কাউন্সিলার গেরুয়া ঘর ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয় আরোও বড় রাজনৈতিক চমক দেখা দিয়েছে, তাঁরা  সকলেই মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব তথা দলীয় সাংসদ, বিধায়কদের টপকে রীতিমতো তৃণমূল নেতা মদন মিত্রের হাত ধরে তৃণমূলে প্রবেশ করলেন। এই খবর চাউর হতেই এলাকায় রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয়েছে। আর এতেই বেজায় চটেছে খোদ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। 

জেলাকে উপেক্ষা করে মদন মিত্র লবি কিভাবে ভিতরে ভিতরে সক্রিয় হয়ে উঠছে সেই নিয়েই এখন রীতিমতো জল্পনা শুরু হয়ে গেছে তৃণমূলের অন্দরেই। ড্যামেজ কন্ট্রোলে'  তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব জানিয়েছে, এই যোগদানের কোনও দলীয় স্বীকৃতি নেই। এদিকে মদনবাবুর সঙ্গে চেয়ারে বসে রয়েছেন কান্দির ওই চার নেতানেত্রী। পরে তাঁরা তৃণমূলের স্লোগান দিয়ে যোগদান করছেন। সেই ছবি জেলায় ছড়িয়ে পড়তেই রীতিমতো দ্বৈরথ শুরু হয়ে গেছে তৃণমূলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে।

প্রসঙ্গত, গৌতমবাবু কান্দি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বিজেপির গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থীও ছিলেন। এছাড়াও তিনি কান্দি পুরসভায় মোট তিনবারের কাউন্সিলার। তবে জানা যায় এই গৌতম বাবু এর আগে  তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছিলেন। গৌতমবাবুর সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দেন কান্দি পুরসভার দু’বারের কাউন্সিলার গুরুপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও কাউন্সিলার চন্দন হাজরা ও তাপসী কৈবর্ত্য। প্রত্যেকেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। 

যাকে নিয়ে এত জল্পনা সেই গৌতমবাবু বলেন, আমরা প্রত্যেকে আবেগের বশে বিজেপিতে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে দেখলাম কাজ করতে গেলে ও মানুষের পাশে থাকতে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলই সঠিক পথ। সেই কারণে আমরা ভুল শুধরে সকলে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। আগামী দিনে কান্দির আরও কয়েকজন বিজেপি নেতানেত্রী তৃণমূলে যোগ দেবেন"। যদিও মদন মিত্রের প্রসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কার্যত এড়িয়ে যান। 

এদিকে 
কান্দির তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব সরকার বলেন, কে কোথায় যোগ দিলেন এটা আমাদের জানা নেই। কাজেই এনিয়ে জেলা নেতৃত্ব বলবেন। তৃণমূলের  সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী শাওনি সিংহরায় বলছেন, কোথা থেকে কারা দলে যোগ দিয়েছেন তা আমাদের জানা নেই। কান্দির ওই বিজেপি নেতানেত্রীদের যোগদানের ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে দলের নেতৃত্ব কেউ বিষয়টি জানেন না। আমি রাজ্য সভাপতির সঙ্গেও কথা বলেছি"। 

অন্যদিকে, গৌতমবাবুদের এই যোগদান নিয়ে বিজেপি কটাক্ষ করেছে। বিজেপির দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ জেলার সভাপতি তথা বিধায়ক গৌরী শংকর ঘোষ দাবি করে জানাচ্ছেন, ওরা যে কাজটা করেছে সেটা বেইমানি। বিধানসভায় তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে এসেছিলেন। ফের গদ্দারি করে তৃণমূলে ফিরলেন। এই যোগদানে এলাকার বিজেপি কর্মীরাও খুশি। কারণ এখন দল থেকে বেনোজল বেরিয়ে যাক সেটাই ভালো"। 

রাজনৈতিক মহল মনে করছে এই ঘটনা একেবারে নজিরবিহীন। কলকাতায় বসে মদন বাবু মুর্শিদাবাদ জেলায় তার 'লবি' আগামী দিনে কোন পথে চালনা করবে সেটা আরও বড় রহস্যের। রাজনৈতিক ক্ষমতার অলিন্দের ভারকেন্দ্র 'হাত' বদল হতে পারে যে কোনো মুহূর্তে, রাস থাকতে পারে জেলা নেতৃত্ব কে ছাপিয়ে রাজ্য নেতৃত্তের হাতেই।