মমতার জন্যই কি বাংলায় কৃষক নেতারা, প্রশ্ন উঠছে কৃষক সমাজ থেকেই

নির্বাচনের আগে বাংলায় দিল্লির কৃষক নেতারা

নন্দীগ্রামে মহাপঞ্চায়েত বসালেন রাকেশ টিকাইত, হান্নান মোল্লারা

এই নিয়ে কৃষক সমাজ থেকেই সমালোচনার ঝড়

তীব্র প্রতিবাদ করলেন কৃষক নেতা ভানু প্রতাপ সিং

amartya lahiri | Published : Mar 15, 2021 8:44 AM IST / Updated: Mar 16 2021, 09:00 AM IST

নির্বাচনের আগে বাংলায় পা পড়েছে দিল্লির কৃষক আন্দোলনের নেতাদের। গত ১২ মার্চ রাকেশ টিকাইত, হান্নান মোল্লারা নন্দীগ্রামে মহাপঞ্চায়েতও আয়োজন করেছিলেন। আর এই নিয়েই ফাটল ধরল আন্দলনরত কৃষকদের ঐক্যে। ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন (ভানু)-র জাতীয় সভাপতি ঠাকুর ভানু প্রতাপ সিং-এর অভিযোগ, কৃষক আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত করছেন রাকেশ টিকাইতরা। এতে কৃষকদের কোনও লাভ তো হবেই না, আরও বেশি সংখ্যক কৃষকের মৃত্যু হবে।

আন্দোলনরত সবকটি কৃষক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ যংযুক্ত কিষাণ মোর্চা ইতিমধ্য়েই জানিয়ে দিয়েছে, বাংলা-সহ যে কয়টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে, তার প্রত্য়েকটি জায়গায় তারা প্রচার করবেন। না কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক  দলকে তাঁরা ভোট দেওয়ার কথা বলবেন না। তাঁরা মানুষের কাছে আহ্বান জানাবেন, কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করে বিজেপিকে যেনন তাঁরা ভোট না দেন। এইভাবে রাজ্যে রাজ্যে রাজনৈতিকভাবে বিজেপিকে কোনঠাসা করে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন তাঁরা। কিষাণ মোর্চার নেতা যোগেন্দ্র যাদব বলেছিলেন, মোদী সরকারে শুধুমাত্র ভোটের ভাষাই বোঝেন, তাই কৃষকরা এবার সেই ভাষাতেই কথা বলবে।

তবে, কৃষক নেতাদের এই কৌশল একেবারে ভুল, এমনটাই দাবি করেছেন ভানুপ্রতাপ সিং। কৃষক আন্দোলনের যৌথ মঞ্চের সদস্য ছিলেন তিনিও। তাঁর দলও দিল্লির সীমান্তে অবস্থানে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু, গত ২৬ জানুয়ারি, কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিলকে ঘিরে যে বেনজির হিংসা ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছিল রাজধানীতে, তার প্রতিবাদ করে আন্দোলন ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিল ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ন (ভানু)। এখন, রাকেশ টিকাইতদের বঙ্গযাত্রার তীব্র সমালোচনা করছেন তিনি।

তাঁর মতে কৃষক নেতারা এই আন্দোলনকে স্পষ্টতই রাজনৈতিক রূপ দিচ্ছেন। তাঁর প্রশ্ন বাংলায় গিয়ে কার সঙ্গে কথা বললেন তাঁরা? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে? তৃণমূল নেত্রীর পক্ষে তো কৃষকদের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে না। কাজেই তাঁর সঙ্গে কথা বলে কী লাভ? তার বদলে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। এই সরকার এখনও ৪ বছর থাকবে। বাংলা বা অন্য রাজ্যে তাদের ভোটে হারিয়ে কেন্দ্রের সরকার বদলানো যাবে না। বরং, রাজনৈতিক বিরোধিতা করার কারণে কেন্দ্র এখন  কৃষকদের কথা শুনতেই চাইবে না।  

ভানু প্রতাপের দাবি, আসলে কৃষকদের সমস্যার সমাধান করতে চান না এই নেতারা। বরং, এই আন্দোলন চালিয়ে গেলে তাদের হাতে টাকা আসছে। কোথা থেকে সেই টাকা আসছে, তা বলতে চাননি ভানু প্রতাপ। তাঁর অভিযোগ, আন্দোলনের যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যদুষ্ট। তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াবেন, আর কৃষক-মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে, এমনটাই মনে করছেন তিনি।  

কৃষক আন্দোলন নিয়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা তিনিই কাটাতে পারবেন বলে দাবি করেছেন ভানু প্রতাপ সিং। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর এবং কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল-এর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান এই কৃষক নেতা। তাঁর অভিযোগ, ইচ্ছা করেই কৃষক আন্দোলনের যৌথ মঞ্চের নেতারা, কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার সময়ে তাঁকে নিয়ে যেতেন না। তিনি একবার সরকারের সঙ্গে কথা বললেই সমাধান হয়ে যাবে।

এই অবস্থায়, তিনি সরকারের কাছে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। কৃষকদের ঋণ মকুবের আবেগন করেছেন। আর সারা দেশের কৃষক ও কৃষক নেতাদের কাছে তাঁর আহ্বান, এই আন্দোলনকে রাজনীতির চোরাগলিতে তাঁরা যেন না ঢোকান।

 

Share this article
click me!