টিভির ছোটপর্দায় চোখ রাখা দর্শকরা প্রতি সন্ধ্যায় রানি রাসমণিকে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে খবর রানিমা -কে আর দেখা যাবে না টিভির পর্দায়। স্বভাবতই মন খারাপ দর্শকদের। সেই মন ভাল করতেই আজ মুখোমুখি আড্ডায় রানিরাসমণি দিতিপ্রিয়া রায়। জানালেন আগামীতে দর্শকরা তাকে কীভাবে দেখতে পাবে। কথা বললেন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার প্রতিনিধি সুচরিতা দে-র সঙ্গে।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- রানি রাসমণির এত দিন-এর জার্নি! অভিজ্ঞতাটা কেমন? মন খারাপ হচ্ছে?
দিতিপ্রিয়া রায়- টলিউডে এই মুহূর্তে যে কটি সিরিয়াল চলছে তার মধ্যে সব থেকে পুরনো রানি রাসমণি। খারাপ লাগা তো থাকবেই। আমি আমার পুরো টিম একটা বিশাল সময় কাটিয়েছি এই সিরিয়াল করতে করতেই। আমরা একটা পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছি। সবাই আমার খুব কাছের। টেকনিসিয়ান থেকে আর্টিস্টস সবাই আমার পরিবার এটাই আমি মানি। সেই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হতে চলেছে। দর্শকদের সঙ্গেও একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তারাও আমাকে সন্ধ্যায় টিভিতে দেখে অভ্যস্ত, আমি নিজেকে দেখে অভ্যস্ত। সেই অভ্যাস পাল্টাতে চলেছি, তো একটা খারাপ লাগা তো থাকেই। সেই খারাপ লাগা নিয়েই , নতুন কাজ করব ভেবেই এই বিরতি।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- এবার তাহলে দিতিপ্রিয়া কে সিরিয়াল এ নয় ,সিনেমার পর্দায় শুধু দেখা যাবে?
দিতিপ্রিয়া রায়- না! এটা এখনও ঠিক করিনি। আসলে বর্তমান যা অবস্থা,ভবিষ্যতের কথা কিছুই বলা মুশকিল। আমার কাছে ব্যক টু ব্যক সিরিয়াল এর অফার ছিল, কিন্তু আমি রাজি হইনি, কারণ আমার একটু বিরতির দরকার ছিল। নিজেকে আরও ভাল করে গ্রুম করব ঠিক করেছি, হাতে বড় পর্দার কিছু কাজ রয়েছে। সেগুলো শেষ করব। তারপর যদি ভালো গল্প আসে, আবার ছোটপর্দার দর্শক আমায় ভাল কোন চরিত্রে দেখতে পাবে আশা করা যায়।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- বড় পর্দাতে অভিযাত্রিক-এ তোমায় প্রথম নায়িকার চরিত্রে দেখা যাবে? শর্মিলা ঠাকুর-এর করা চরিত্রে অভিনয় করার চাপ কী ভাবে সামলেছো?
দিতিপ্রিয়া রায়- নায়িকা ঠিক বলবো না। আসলে এই ছবি টিপিকাল নায়ক-নায়িকা র গল্প নয়, এই ছবিতে প্রতিটি চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ। ছবি দেখার পর সবাই বুঝতে পারবে। তাই নিজেকে নায়িকা বললে নিজেরও খারাপ লাগবে ,আর সেটা বলাও ঠিক নয়। তবে অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। আমি অপর্ণা র ভূমিকায় অভিনয় কলেছি। এর আগে শর্মিলা ম্যাম এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন, চরিত্রটি কাল্ট হয়ে রয়েছে। এটা আমার কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ। উনি তো লেজেন্ড। তবে আমি আমার মত করে চেষ্টা করেছি। এবার দর্শক কীভাবে নেবে সেটা সম্পূর্ণ তাদের উপর। তবে একটা বিষয় বলতে চাই আমরা অপুর সংসার-এ দেখেছি অপর্ণা মারা গেছেন। আর আমরা অপরাজিতর শেষভাগ নিয়ে অভিযাত্রিক করেছি। তাহলে অপর্ণা কী ভাবে ফিরে আসছে সেটাই খুব ইন্টারেস্টিং পার্ট। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে একটা পার্থক্য রয়েছেই। আর আমি আবারও বলবো শর্মিলাম্যা ম এর সঙ্গে আমর তুলনা করাই উচিত নয়। দর্শক হয়তো তুলনা করবেন, তবে তুলনাটা না করাই ভালো। আমি আমার মতো করে অভিনয় করেছি। বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের এর বই থেকে নেওয়া গল্প পরিচালক-এর চিত্রনাট্য ঠিক যেমন চেয়েছে ,আমি আমার মতো সেই ভাবেই চরিত্র টি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- পরিচালক প্রসঙ্গে প্রশ্ন আসছে এই চরিত্র টি ফুটিয়ে তুলতে শুভ্রজিত কতটা সাহায্য করেছে?
দিতিপ্রিয়া রায়- অভিযাত্রিক এর চিত্রনাট্য শুভ্রজিতদারই করা। তাই এই চরিত্রটি করতে তাঁর ইনপুট অনেকটাই ছিল। তাছাড়া ছবির জন্য গ্রুমিং করিয়েছিলেন সোহাগদি। তাই এদের দুজনের অবদান অনেকটাই। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই ছবিতে আমার কোনও সংলাপ নেই। যে টা বেশ চ্যালেঞ্জিং। চোখের ভাষায় সবটা ফিলিংস বুঝিয়ে দিতে হয়। চরিত্রটিকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। এই কাজ আমার হৃদয়ের অনেক কাছে। এই ছবি করতে গিয়ে অনক গুণি মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি অনেক শিখতে পেরেছি। শুভ্রজিতদার পরের ছবিতে আমি কাজ করছি মায়ামৃগয়া। সেখানেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র পেয়েছি।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- অভিযাত্রিক শুনেছি ভুতুরে বাড়িতে শ্যুট হয়েছে। ভুতের ভয় পাও?
দিতিপ্রিয়া রায়- আমি ভুতের বিশ্বাস করি না,কারণ চোখে দেখিনি। তাই ভয়ও পাই না। তবে পুতুল বাড়িতে শ্যুট এর একটাই সমস্যায় পড়েছিলাম সেটা হল পাখি! আমার যেহেতু মারাত্মক বার্ড ফোবিয়া আছে, সেটাই আমার কাছে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। পুরোনো বাড়ি তাই তাই প্রচুর পায়রা আছে। রাতে যখন শ্যুট করছি পায়ের আওয়াজ শুনতে পারছি, দেখতে পাচ্ছি বসে আছে আমার মনে হচ্ছিল সবাই আমাকেই দেখছে। আমি ভয়ে আঁতকে ছিলাম। এর থেকে ভুত দেখা ভালো। আমার এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে আমি পাখি দেখে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছি। যত বড় হচ্ছি আরও ভয় বাড়ছে। আমি কাউন্সেলিং করানো ঠিক করেছি এই ফোবিয়া যদি কাটিয়ে উঠতে পারি। আমি তো খাঁচার ভিতর পাখি দেখেও আতঙ্কে থাকি।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- অভিষেক বচ্চন-এর সঙ্গে 'বববিশ্বাস 'ছবি করলে চরিত্রটি কেমন?অভিজ্ঞতা কীরকম?
দিতিপ্রিয়া রায়- এই বিষয়ে এখনই কিছু বলার পারমিশন নেই। তবে অভিজ্ঞতা বেশ ভাল। লেক মার্কেটে শ্যুট করেছি। আমার চরিত্রটি একদম অন্য ধরনের। দর্শকরা এর আগে আমাকে এই রকম ভাবে দেখেনি। তবে বাকি কথা হবে পরে (হাসি)।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- শিশুশিল্পী থেকে কাজ শুরু করেছো। আখন তুমি বড় হয়ে গেছো তোমাকে ইন্ডাস্ট্রির সবাই কি শিশু শিল্পী হিসেবেই দেখে?
দিতিপ্রিয়া রায়- আসলে আমার বড় হয়ে হওয়াটা এই ইন্ডাস্ট্রিতে। এখনও কেউ মানতেই চায় না আমি বড় হয়ে গিয়েছি। এখনো আমাকে সবাই নানা নামে ডাকে। অনেক স্নেহ পাই। সকলের কাছে আজও আমায় ছোট্ট ভাবে। আমিও ছোটোই থাকতে চাই এদের সকলের কাছে।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- ভবিষ্যতে দর্শক তোমাকে কোন ধরনের চরিত্রে বেশি দেখতে পাবে?
দিতিপ্রিয়া রায়- জীবন সম্পর্কে কিছু বলা খুব কঠিন। কেমন ছবি আসবে জানি না। তবে আপাতত আমার এই টিন এজটায় এখন যেমন আছি , আমার বয়সের কোন গল্পে অভিনয় করতে চাই। আর্ট ফিল্ম বা মশালা ফিল্ম বলে নয়, আমি নিজেকে ভার্সিটির অ্যাক্ট হিসেবে দেখতে চাই।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- দিতিপ্রিয়া কে নিয়ে কোন গুঞ্জন শোনা যায় না, কেন? কোনও প্রেম এর কথাও শোনা যায় না।
দিতিপ্রিয়া রায়- (হাসি) আসলে আমি খুব সোজাসাপটা একটা মানুষ। আমার আশেপাশের মানুষ জনতা জানেন যে আমার জীবনে কোন ইন্টারেস্টিং ঘটনাই নেই। যেটা নিয়ে গুঞ্জন হতে পারে। আমার জীবনে গসিপ বা প্রেম কিছুই নেই। তাই রাখঢাক ও নেই এই বিষয়ে।
এশিয়ানেট নিউজ বাংলা- পড়াশোনার সঙ্গে সমানতালে অভিনয়। ফিল্ম নিয়ে পড়ার ইচ্ছে আছে?
দিতিপ্রিয়া রায়- আমি ভালো ফল করেছিলাম উচ্চমাধ্যমিকে। এখন স্যোশিওলজি নিয়ে আশুতোষ কলেজে পড়ছি। তবে অবশ্যই আগামী দিনে ফিল্ম স্টাডিজ নিয়ে পড়ার ইচ্ছে আছে।