আকষ্মিক এ কোন অভিসার, আজও উত্তর খুঁজে ফেরে গোটা টলিউড চত্বর। দিনটা ছিল ৩০শে মে, ২০১৩, হঠ্যাৎই টলিউড পাড়ায় নেমে পড়ে মৃত্যু শোকের ছায়া। ঋতুপর্ণ ঘোষের অকাল প্রয়াণে সেদিন তোলপাড় হয়েছিল স্টুডিও পাড়া চত্বর। মুহুর্তে খবর ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে। মোটের ওপর ২৪টি ছবি উপহার দিতে পেরেছিলেন তিনি দর্শককে। যার মধ্যে অধিকাংশই জাতীয় পুরষ্কার তুলে দিয়েছিল তাঁর হাতে।
প্রজেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ঋতুপর্ণ ঘোষের জন্মদিনের দিন টুইট করে লিখেছিলেন-তুই তো চলে গেলি এক অন্য জগতে, তোর কথায় এ যেন খেলতে যাওয়ার ছুটি। সঙ্গে তিনি আরো উল্লেখ করেন আজও তাঁর প্রিয় ফুল নিয়ে প্রতিক্ষারত তিনি। সত্যিই ঋতুপর্ণ ঘোষ খেলতে খেলতে শেষ করেছিলেন তাঁর জীবনের ডাইরীর শেষ কয়েকটা পাতা। সত্যান্বেষী ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর হাতে পাননি আর বেশি দিন।
সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক প্রভৃতি প্রবাদ প্রতীম পরিচালকরা তাঁর মধ্যে চলচ্চিত্রের ভবিষ্যতকে দেখে ছিলেন। সেই পথেই এগিয়ে চলচ্চিত্রের এক ভিন্ন ঘরানা তৈরি করেছিলেন পরিচালক। পরিচালক চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় কথায়, আরও অনেক পাওয়ার ছিল তাঁর থেকে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল। ঋতুপর্ণ ঘোষের কথায়- প্রতিটি আঁধারের পেছনেই আলো আছে, এই বোধ আমি রবীন্দ্রনাথের লেখায় পেয়েছি। সত্যি তিনি আমারা অন্তরঙ্গ সঙ্গী, যাঁর সঙ্গে নিত্য আলাপ, আবদার আর অভিমানের সম্পর্ক। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, আমার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ঠিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক নয়, আমার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের জাপটে ধরার সম্পর্ক। চোখের বালি, নৌকাডুবি, চিত্রাঙ্গদা প্রভৃতি ছবির পরতে পরতে চোখে পরেছিল ছিল সেই আবেস জড়ানো অনুভূতি। রবীন্দ্রনাথকে তৈরি করেছিলেন তথ্যচিত্রও। জীবনের হাজারও ওঠা নামার মধ্যে দিয়েই পথ চলা শুরু করেছিলেন তিনি, কিন্তু তাঁর এত শীঘ্রই থেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আজও মেনে নিতে পারেনি টলিউডের কলাকুশলিরা। ঋতুপর্ণ ঘোষের সৃষ্টি বাংলা চলচ্চিত্র জগতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থেকে যাবে আজীবন।