শৈশব মানেই হাঁদা ভোঁদা, শৈশব মানেই বাটুল কিংবা নন্টে ফন্টে, কারুর ছেলেবেলায় জড়িয়ে সেই স্মৃতি, কেউ আবার সাক্ষাৎ করে জড়িয়েছিলেন শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়, টলিপাড়ার সেলেবদের স্মৃতিতে নারায়ণ দেবনাথ।
নারায়ণ দেবনাথ (Narayan Debnath) মানেই কার্টুনের দুনিয়ায় এক যুগের গল্প, যাঁর হাত ধরে কমিকস দুনিয়ার নানা অধ্যায় বোনা হয়েছে। ছোটদের প্রিয় চরিত্র নন্টে ফন্টের (Nonte Fonte) সৃষ্টিকর্তা তিনি। সাদা কালো থেকে রঙিন পাতায় ফুঁটে ওঠা চরিত্রেরা প্রতিটা বাঙালির খুব কাছের, কখনও হাঁদা ভোঁদা, কখনও আবার বাটুল। মজার এই কমিকসেই (Comics) মেতে রয়েছে আপামর বাঙালিরা বছরের পর বছর। পদ্মশ্রী প্রাপ্ত (Padmashree) সেই কিংবদন্তী স্রষ্ঠার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ টলিউড। কী জানালেন সেলেবরা (Tollywood Celebrity)।
বিশ্বনাথ বসু, (অভিনেতা) (Actor)- আমাদের ডিজনি চলে গেলেন, আমার সব থেকে বড় প্রাপ্তী দু-তিন বছর আগে আমি ওঁনার বাড়িতে গিয়েছিলাম, ওঁনার সঙ্গে দেখা করতে, উনি নিজে হাতে আমায় বাটুলের কার্টুন এঁকে দিয়েছিলেন। ওঁনার জীবন নিয়ে অনেক কথা হল, ওঁনার বাড়ির সকলে উপস্থিত ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে দুর্দান্ত মজার মানুষ ছিলেন, বাজার করতে যেতেন, গল্প করতে করতে জিনিস ফেলে চলে আসতেন। এমন কি বহু ঠাকুরের বইয়েরও প্রচ্ছদ এঁকেছেন উনি। কিছুদিন আগে পদ্মশ্রী পুরস্কার পান, কিন্তু ওঁনার যোগ্য সম্মান ওঁনাকে ওঁনার পাঠকেরাই সব থেকে বেশি দিতে পেরেছেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ওঁনাকে সঙ্গে করে নিয়েই চলতে হবে।
রুদ্রনীল ঘোষ (অভিনেতা) (Actor)- ওঁনার সঙ্গে দেখা করার বা আলাপ করার সুযোগ হয়নি, তবে একবার দূর থেকে বইমেলায় দেখেছিলাম, তবে ওঁনার সঙ্গে আলাপ তো ওঁনার সৃষ্টির মাধ্যমেই। এই ক্ষতির কোনও বিকল্প হয় না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মধ্যে যে কংক্রিটের জীবনের অভ্যাস হয়ে যায়, ওঁনার সৃষ্টি একমুহূর্তে আমাদের শৈশব ফিরিয়ে দেয়। চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়, তুমি এইটাই। অন্য সাহিত্য বা সাহিত্যিকদের নিয়ে যে প্রচার ঘটেছে, তা ওঁনার ক্ষেত্রে ঘটেনি, যেটা ঘটা উচিত ছিল, কারণ, এই কঠিন বাস্তবের মাটিতে পা রেখেও যিনি জীবনটাকে এত সহজভাবে এবং হাস্যরসে পরিপূর্ণ করতে পারেন, তিনি অন্য রকমের ম্যাজিশিয়ান।
আরও পড়ুন- CARTOONIST NARAYAN DEBNATH: 'অপূরণীয় ক্ষতি', নারায়ণ দেবনাথের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ শিল্পীদের
আরও পড়ুন- শতকের দোরগোড়ায় থামল জীবনের ইনিংস. চলে গেলেন শৈশবের স্বপ্ন জাগানো কার্টুনিস্ট
মনামী ঘোষ (অভিনেত্রী) (Actress)- আমি বসিরহাটের মেয়ে, আমার বাবার মস্তিষ্ক প্রসূত ছিল বসিরহাটের বইমেলা, যেটা আমাদেরই বইমেলা ছিল। সেখানেই প্রথম ওঁনার বিখ্যাত কমিকের সঙ্গে পরিচয় হওয়া। তারপর থেকে বালিশের পাশে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছিল। প্রত্যেকটা খণ্ডই পড়ে ফেলতাম। আজও ব্যস্ততার ফাঁকে মন খারাপের ওষুধ হিসেবে দারুণভাবে কাজ করে। কখনও সাক্ষাৎ হয়নি, তবে ওঁনার সঙ্গে সাক্ষাৎতের মাধ্যমই আমাদের এই প্রিয় চরিত্ররা। আগামী দিনে ওঁনার চরিত্রগুলোকে নিয়ে নতুনভাবে কাজ হবে বলে আশা রাখি, তাতে আজকের প্রজন্ম যাঁদের হাতে মোবাইল, ইন্টারনেট রয়েছে, তাঁরাও এই চরিত্রগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ট হতে পারবে বলে আশা রাখি।
আবীর চট্টোপাধ্যায় (অভিনেতা ) - ছোটবেলা, সারল্য, দুষ্টুমি, অনাবিল আনন্দ, এগুলো এভাবেই হারিয়ে যায়। প্রণাম নেবেন।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (অভিনেতা ) - আরও এক নক্ষত্র পতন। তাঁর সকল সৃষ্টির মধ্যে দিয়েই মাননীয় নারায়ণ দেবনাথ চির অমর হয়ে থাকবেন।
শুভাপ্রসন্ন (চিত্রশিল্পী ) - আশা করি ওঁর কাজ আরও অনেক প্রজন্মের শিশুদের আনন্দ দেবে।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় (মন্ত্রী ) - নারায়ণ দেবনাথ আজ আমাদের মধ্যে নেই আমরা গভীর শোকাহত। তুমি ছেড়ে চলে গেলে ও রইল তোমার কাজ, চোখের জলে বিদায় জানাই সবাই মিলে আজ।